ফেডারেশন কাপ: ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে সেমিফাইনালে মোহামেডান
ডাগআউটে গুছিয়ে বসতেও পারেননি তখন আলফাজ আহমেদ, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবরা। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের ডাগআউটেও কি সবাই ঠিকঠাক বসতে পেরেছিলেন? ম্যাচ তখন সবে শুরু হয়েছে। ২৬ সেকেন্ডের মাথায় কিনা গোল! মনির আলমের চমৎকার এক ক্রসে সেকু সিল্লা মাথা ছুঁইয়ে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে এগিয়ে দেন ১-০ গোলে।
এ দেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম দ্রুততম গোল এটি। এত তাড়াতাড়ি গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়াটাই কি শাপেবর মোহামেডানের জন্য? বাকি সময়ে প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণের বন্যা বইয়ে শেষ পর্যন্ত ফেডারেশন কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা লিখল ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।
উজবেক ফুটবলার মোজাফফরভের দারুণ এক গোলে দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরানোর পর ম্যাচের একেবারে যোগ করা সময়ে জাফর ইকবালের জয়সূচক গোলটি করেন। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে রোজার দুপুরে ২-১ গোলে জিতে মোহামেডান উঠল ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে।
২৬ সেকেন্ডে গোল করে এগিয়ে যাওয়ার পর শেখ রাসেল কী কৌশলে খেলেছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সেকু সিল্লার গোলটি তাদের সুবিধা করে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার শেখ রাসেল করতে পারেনি। গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে বরং মোহামেডান করেছে একের পর এক আক্রমণ। মোজাফফরভ, আরিফ হোসেন, ইমানুয়েল সানডে, শাহরিয়ার ইমন আর সোলেমান দিয়াবাতেরা নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়ায় শেখ রাসেলকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন।
আরিফ গোটা দুই সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান শেখ রাসেলের গোলকিপার মিতুল মারমা। চমৎকার খেলেছেন জাতীয় দলের এই গোলকিপার। একই সঙ্গে শেখ রাসেলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরাও ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে দলটির আক্রমণে ঘাটতি ছিল যথেষ্ট। চন্দন রায়, সুমন রেজা, ইমন মাহমুদরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধে কামরুল ইসলামের জায়গায় নামেন হাসান মুরাদ। সাদেকুজ্জামান ফাহিমের জায়গায় নামের মাহবুবুল আলম। মিনহাজুর আবেদীনের জায়গায় জাফর ইকবাল। মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদের এই বদলগুলো ভালোই কাজে এসেছে। মাঠের বাঁ প্রান্ত দিয়ে একের পর এক আক্রমণে উঠেছেন জাফর ইকবাল।
হাসান মুরাদকে নামিয়ে রক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণটা আরও জোরদার করে মোহামেডান। তবে দলের প্রাণভোমরা মোজাফফরভ কিছুটা নিষ্প্রভই ছিলেন। দুই উইং দিয়ে মোহামেডান বেশি আক্রমণে ওঠার কারণে মাঝে মোজাফফরভের কাছে বলের জোগানও তেমন যাচ্ছিল না। কিন্তু দলের প্রাণভোমরা নিষ্প্রভ থাকেন কীভাবে!
৭১ মিনিটে দূরপাল্লার এক শটে মোহামেডানকে সমতায় ফেরান এই উজবেক মিডফিল্ডার। ১-১ সমতায় মোহামেডান আরও জ্বলে ওঠে। শেখ রাসেল পড়ে যায় আরও চাপে। সমতায় ফিরে সোলেমান দিয়াবাতে, ইমানুয়েল সানডেরা আরও গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন।
ম্যাচ যখন অতিরিক্ত সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আরিফের ক্রস থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে গোল করেন জাফর ইকবাল। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে জাফরের গোলে ঘুরে দাঁড়ানোর আরও একটি চমৎকার গল্পই লিখল মোহামেডান।