যেকোনো দলের কাছেই শততম ম্যাচ বিশেষ কিছু। সেই বিশেষ কিছুর স্বাদ পেতে চলেছে ২০১৮ সালে শীর্ষ ফুটবলে আসা বসুন্ধরা কিংস। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আগামীকাল শততম ম্যাচ খেলতে নামছে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফুটবলের সফলতম ক্লাব। রাজশাহীতে মাইলফলকের ম্যাচে কিংসের প্রতিপক্ষ লিগ টেবিলের তলানির দল ব্রাদার্স।
প্রথম ৯৯ ম্যাচে কিংসের অর্জন ঈর্ষণীয়। জিতেছে টানা চারটি লিগ। জয় ৮৪ ম্যাচে। বাকি ১৫টি ম্যাচের মাত্র ৫টিতেই হেরেছে তারা, ড্র করেছে ১০টি ম্যাচ। সাফল্যের দিক থেকে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে তুলনা চলে একমাত্র আবাহনীর। তবে প্রথম ১০০ ম্যাচে জয়ের হিসাবে আবাহনীর চেয়ে কিংস এগিয়ে। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ চালুর পর আবাহনী প্রথম তিনটি লিগই জিতেছিল। প্রথম ১০০ ম্যাচে জয়-পরাজয়ের সঠিক হিসাবটা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে প্রথম পাঁচটি লিগের পরিসংখ্যান দেখলেও প্রথম ১০০ ম্যাচে জয়ের সংখ্যায় আবাহনীর তুলনায় কিংসের এগিয়ে থাকার ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়া যায়। ওই পাঁচ লিগে ১০৬ ম্যাচ খেলে আবাহনী জিতেছিল ৭৮টি ম্যাচে। ১৯টি ম্যাচ ড্র করেছিল আর হেরেছিল ৯টিতে।
কিংসের সাফল্যের নেপথ্য কারিগর স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। শততম ম্যাচের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ব্রুজোন বেশ রোমাঞ্চিত। প্রথম আলোকে কাল বলেছেন, ‘কিংসের এই যাত্রায় যাঁরা অংশ ছিলেন বা এখনো আছেন, তাঁদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ৯৯টি লিগ ম্যাচে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। একটি আধুনিক ফুটবলপদ্ধতি গ্রহণ করেছি এবং বেশ কিছু ট্রফি জিতেছি। খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফ সবাই দলবদ্ধভাবে কাজ করেছে, যা দারুণ ব্যাপার।’ বসুন্ধরা কিংস পেশাদার একটি ক্লাব এবং এর সমর্থক দিন দিন বেড়েছে জানিয়ে ব্রুজোনের সংযোজন, ‘সংশ্লিষ্ট সব দল, ক্লাব এবং প্রতিষ্ঠানকে আমরা সম্মান করি। বাংলাদেশের ফুটবলের স্বর্ণযুগকে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিংস।’
কিংস শততম ম্যাচে মাঠে নামার আগেই আজ শুরু হয়ে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের ফিরতি পর্ব। মধ্যবর্তী দলবদল ও জাতীয় দলের বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ শেষে ৩৫ দিন পর মাঠে ফিরছে লিগ। প্রথম দিনে মুন্সিগঞ্জে চট্টগ্রাম আবাহনী-পুলিশ, ময়মনসিংহে মোহামেডান-ফর্টিস, গোপালগঞ্জে শেখ জামাল-শেখ রাসেল। সব ম্যাচই শুরু বেলা সোয়া তিনটায়।
প্রথম পর্বে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের চেয়ে কিংস এগিয়ে ৫ পয়েন্টে। যেভাবে এগোচ্ছে কিংস, তাতে দলটির টানা পঞ্চম শিরোপা জেতাই লিগের ভবিতব্য মনে হচ্ছে। অনেক বছর পর দুইয়ে থেকে প্রথম পর্ব শেষ করেছে মোহামেডান। তবে দ্বিতীয় পর্বে সাদা–কালোরা কতটা লড়াইয়ে থাকতে পারে, সেটি হবে দেখার। কিংসের চেয়ে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকা আবাহনীর জন্য ফিরতি পর্বটা হবে অগ্নিপরীক্ষার।
প্রথম পর্বে ছিলেন না, এমন দুজন আলোচিত ফুটবলারকে এবার দেখা যাবে দ্বিতীয় পর্বে। আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের দল সোল দা মায়োতে খেলতে চলে যাওয়া জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া দ্বিতীয় লেগে ফিরছেন আবাহনীর জার্সিতে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে ১১ বছরের ক্যারিয়ারে এই প্রথম আকাশি-নীলের হয়ে খেলবেন জামাল। দ্বিতীয় পর্বে আবাহনীর সেন্টারব্যাকে দেখা যাবে অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার অ্যারন মিচেল ইভান্সকে। আইভরিকোস্টের মিডফিল্ডার চার্লস দিদিয়েরকে বিদায় করে ষষ্ঠ বিদেশি হিসেবে নাইজেরিয়ার ফরোয়ার্ড এমফন ওদোহকে নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন কিংস। মোহামেডানে দেখা যাবে উজবেক মিডফিল্ডার সাদিলোভ বেখুরুজেককে।
তিন বছর আগে নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব ছেড়ে ‘বাংলাদেশি’ হওয়া স্ট্রাইকার এলিটা কিংসলে প্রথম পর্বে কোনো দল পাননি। দ্বিতীয় পর্বে তাঁকে নিয়েছে ব্রাদার্স। পোপীবাগের দলটির কোচ হিসেবে এই পর্বে যোগ দিয়েছেন আজমল হোসেন (বিদ্যুৎ), সম্প্রতি যিনি ভুটানের প্রিমিয়ার লিগে একটি দলের কোচ ছিলেন। বিদেশি ফুটবলার নেওয়া হয়েছে নতুন পাঁচজন। অবনমন ঠেকাতে ব্রাদার্স এই পর্বে মোট ১৩ জন ফুটবলার বদল করেছে! অবনমন অঞ্চলে থাকা চট্টগ্রাম আবাহনী এই পর্বে বদল করেছে তিনজন বিদেশি। এভাবে সব দলই চেষ্টা করেছে নতুনভাবে দল সাজিয়ে আবার মাঠে নামতে। দ্বিতীয় পর্বের লড়াইটা যে অনেক কঠিন হতে চলেছে।