থেমে গেল ‘বজ্রের হুংকার’—বিদায় ইতালির সর্বোচ্চ গোলদাতা
১২ বছরের ক্যারিয়ারে ফুটবল মাঠে কত ডিফেন্ডারকে যে ফাঁকি দিয়েছেন আর বোকা বানিয়েছেন। কিন্তু জীবনের লড়াইয়ে মৃত্যুকে আর ফাঁকি দিতে পারলেন না ইতালির সর্বোচ্চ গোলের মালিক জিজি রিভা। হার্ট অ্যাটাকের পর সার্দিনিয়ার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে এক সপ্তাহ লড়াইয়ের পর হেরে গেছেন ‘বজ্রের হুংকার’ নামে পরিচিত ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার।
ইতালির হয়ে ৪২ ম্যাচ খেলে ৩৫ গোল করা ‘বজ্রের হুংকার’ থেমে গেছে কাল রাতে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। ১৯৬৮ সালে ইতালিকে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানো রিভা ২ বছর পর খেলেছেন বিশ্বকাপের ফাইনাল। কিন্তু পেলের ব্রাজিলের কাছে ৪-১ গোলে হেরে জেতা হয়নি বিশ্বকাপের শিরোপা।
১৯৬২ সালে লেনিয়ানো দিয়ে পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন রিভা। বলতে গেলে একা হাতে লেনিয়ানোকে ইতালির সিরি ‘আ’তে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু ক্লাবটিতে এক মৌসুমের বেশি খেলেননি। লেনিয়ানোতে এক মৌসুম খেলার পর নাম লেখান কালিয়ারিতে। বলতে গেলে ক্যারিয়ার শেষ করেন এখানেই।
কালিয়ারিতে রিভার সেরা সময়টা কাটে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত। এই তিন বছর টানা তিনি সিরি ‘আর সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। ক্লাবটির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০০-এর বেশি গোল করা রিভা ১৯৭০ সালে সিরি আর শিরোপা। সে বছর ইন্টার মিলানের রক্ষণকে এলোমেলো করে দিয়েই পেয়েছিলেন ‘বজ্রের হুংকার’ ডাকনাম। ১৯৭৬ সালে খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দেওয়া রিভা ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী ইতালি দলে টেকনিক্যাল স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন।
ফুটবল তাঁকে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি এনে দিলেও রিভার শৈশবটা খুব একটা সুখের ছিল না। ইতালির ছোট একটি শহর লেজ্জিউনোতে এক গরিব পরিবারে ১৪৪ সালের নভেম্বরে জন্ম রিভার। ১৯৫৩ সালে বাবা উগোকে হারান তিনি। উগোর মৃত্যুর পর রিভার মা এদ্রিস একটি টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে সাফসুতরোর কাজে যোগ দেন। রিভাকে তিনি পাঠিয়ে দেন একটি ধর্মীয় বোর্ডিং স্কুলে।
১৬ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁর মাও। এরপর থেকে বড় বোন ফাউস্তার কাছেই থাকতেন রিভা। ফাউস্তা রিভাকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ২০২০ সালে। শৈশবটা কত কষ্টে কেটেছে সেটা বোঝাতে গিয়ে ২০১০ সালে ইতালির রাই টেলিভিশনে বলেছিলেন, ‘ফুটবলে নিজের কিছু সাফল্যের বিনিময়ে তিনি শৈশবটা বদল করতে চাইবেন।’
রিভার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ কালিয়ারি লিখেছে, ‘জিজি রিভা আজীবন আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে।’