মাইনিয়ঁর পাশে দাঁড়িয়ে ভিনিসিয়ুস বললেন, বর্ণবাদীদের জেলে ঢোকাতে হবে
এই সময়ের ফুটবলে বর্ণবাদ যেন নৈমিত্তিক বিষয়। বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হওয়ার পর বেশ কিছুদিন ধরেই এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। শুধু ভিনিসিয়ুসই নন, আরও অনেক ফুটবলারকে প্রতিনিয়ত এমন আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে। তারকা খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা) পর্যন্ত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হওয়ার নয়। বর্ণবাদী আচরণের ঘটনা যে কমছেই না।
এ সপ্তাহে বর্ণবাদী আক্রমণের মুখে মাঠ ছেড়ে গিয়ে আলোচনায় এসেছেন এসি মিলানের গোলরক্ষক মাইক মাইনিয়ঁ। পরে অবশ্য টানেল থেকে ফিরে এসে খেলা চালিয়ে যান এই গোলরক্ষক। কিন্তু তখন থেকেই সব ছাপিয়ে আলোচনায় মাইনিয়ঁর সঙ্গে হওয়া বর্ণবাদী আচরণের বিষয়টি। বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ফিফাও। ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমে কথা বলার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতিও দিয়েছে এই ফরাসি গোলরক্ষক।
যেখানে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা কঠিন উল্লেখ করে পুরো সিস্টেমকে এর দায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মাইনিয়ঁ। তাঁর সেই পোস্ট শেয়ার করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবল মাঠে সবচেয়ে বেশি বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হওয়া ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গার বর্ণবাদীদের জেলে ঢোকানোর দাবিও জানিয়েছেন।
মাইনিয়ঁর পোস্ট শেয়ার করে ভিনিসিয়ুস লিখেছেন, ‘“কথা দিয়ে কোনো কিছু বদলাবে না”। কথাটি মাইক মাইনিয়ঁর। এখন সময় হয়েছে বর্ণবাদীদের ধরে জেলে ঢোকানোর। তাহলেই তারা যা, তা নিয়ে লজ্জিত হবে। আমি তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা সত্যিকার অর্থে আমাদের সংগ্রামকে সমর্থন দিয়েছে। তাদের নিয়ে আমার দুঃখ হয়, যারা সংবাদমাধ্যমের সামনে ফাঁপা কথাগুলো নিয়ে হাজির হয় সহানুভূতি পাওয়ার লক্ষ্যে। মাইনিয়ঁ সব সময় তোমার পাশে আছি।’
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাইনিয়ঁ লিখেছেন, ‘যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি শুধু খেলোয়াড় নন। তিনি একজন মানুষ। একটি পরিবারের বাবা। এমন নয় যে এটা আমার সঙ্গে প্রথমবার হয়েছে এবং এমন কিছুর শিকার হওয়া আমিই প্রথম মানুষ নয়। প্রথমে আমরা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, বিজ্ঞাপনী প্রচারণা চালিয়েছি কিন্তু কিছুই বদলায়নি। এখন পুরো সিস্টেমকেই এর দায় নিতে হবে।’
অপরাধীদের পাশাপাশি কাদের এ ঘটনার দায় নিতে হবে, সেটি জানিয়ে মাইনিয়ঁ লিখেছেন, ‘সেই দর্শকেরা, যাঁরা গ্যালারিতে ছিলেন। সবকিছু দেখেছেন, সবকিছু শুনেছেন কিন্তু যাঁরা নীরব থাকার পথ বেছে নিয়েছেন! আপনারাও জড়িত। উদিনেসে ক্লাব, যারা শুধু ম্যাচ বাধাগ্রস্ত হওয়া নিয়ে কথা বলেছে। যেন কিছুই ঘটেনি। আপনারাও জড়িত।’
এ সময় কর্তৃপক্ষ ও আইনজীবীরা যদি কিছু না করেন, তবে তাঁদেরও এর দায় নিত হবে উল্লেখ করে নিজের ক্লাবকে ধন্যবাদ দেন মাইনিয়ঁ। তিনি লিখেছেন, ‘আমি আমার ক্লাব এসি মিলান, সতীর্থ, রেফারি, উদিনেসের খেলোয়াড়, যাঁরা আমাকে বার্তা পাঠিয়েছেন, ফোন করেছেন এবং জনসমক্ষে ও ব্যক্তিগতভাবে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি সবাইকে উত্তর দিতে পারিনি কিন্তু তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ। এটা কঠিন লড়াই, এতে সময় ও সাহস লাগবে। কিন্তু এ লড়াইয়ে আমরা জিতব।’
এর আগে মাইনিয়ঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফরাসি তারকা লিখেছেন, ‘তুমি একা নও মাইক মাইনিয়ঁ। আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি। এখনো একই সমস্যা চলছে, এখনো কোনো সমাধান নেই। অনেক হয়েছে। বর্ণবাদকে না বলুন।’