সিটির দুঃসময়ে ক্লাব ছেড়ে গেলেন অধিনায়ক
সংবাদ সম্মেলনে স্থবির হয়ে বসেছিলেন পেপ গার্দিওলা। জানতে চাওয়া হয়েছিল, খেলার দৃষ্টিকোণ থেকে মৌসুমের বাকি সময়ে কাইল ওয়াকারকে মিস করবেন কি না? গার্দিওলার হতাশা ক্লিষ্ট চোখমুখ এবং উত্তরেই বুঝে নেওয়া যায়, সিটি কোচ তাঁকে কতটা মিস করবেন! অসহায়ের মতো নিচু মাথায় বললেন, ‘সে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ মিস করার কারণও বলেছেন গার্দিওলা, ‘আমাদের সবচেয়ে কঠিন ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ডিফেন্ডার ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ওয়াকার শুধু ম্যানচেস্টার সিটি রক্ষণের বড় ভরসাই নন, দলের অধিনায়কও। ফুটবল মাঠে অধিনায়কের দায়িত্ব অনেক বড় কিছু নয়। তবু ক্লাবের দুঃসময়ে অধিনায়কের চলে যাওয়াটা সমর্থকদের জন্য মানা কষ্টকরই।
ওয়াকার চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা গার্দিওলাকে জানিয়েছিলেন গত জানুয়ারিতে। ২০২৩ সালে ট্রেবল জয়ের পরও একবার কোচকে বলেছিলেন একই কথা। তখন বায়ার্ন মিউনিখ কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু দামটা জুতসই মনে হয়নি সিটির কাছে। এ দফায় গত জানুয়ারিতে এফএ কাপ তৃতীয় রাউন্ডে স্যালফোর্ড সিটির বিপক্ষে ম্যাচে ওয়াকারের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল গার্দিওলার কাছে। তখনই সিটি কোচ জানিয়েছিলেন, তাঁর দলের অধিনায়ক ক্লাব ছাড়তে চান। প্রায় এক পক্ষকাল সময়ের মধ্যে ওয়াকারের সেই ইচ্ছা বাস্তবেও রূপ নিল।
মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য সিটি থেকে ধারে এসি মিলানে যোগ দিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এই রাইটব্যাক। সাতবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মেডিকেল পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছেন ওয়াকার। ধার–চুক্তির মেয়াদ শেষে ওয়াকারকে স্থায়ীভাবে কিনে নেওয়ার সুযোগও রেখেছে মিলান। ইতালিয়ান ক্লাবটি এবং সিটি, দুই পক্ষই গতকাল ওয়াকারের ক্লাব বদলের খবরটি নিশ্চিত করেছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হারের পর থেকে সিটির একাদশে সুযোগ পাচ্ছিলেন না ওয়াকার। সময়টা তাই ভালো যাচ্ছিল না ইংল্যান্ড তারকার। এমন এক সময়ে সিটি ছেড়ে যাচ্ছেন ওয়াকার, যখন ক্লাবটি মাঠে বাজে সময় পার করছে।
২২ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের পাঁচে সিটি। চ্যাম্পিয়নস লিগে দাঁড়িয়েছে খাদের কিনারায়। নিজেদের শেষ ম্যাচ জিততে না পারলে বিদায় নিতে হবে লিগ পর্ব থেকে। এ তো গেল পয়েন্ট টেবিলের হিসাব। প্রিমিয়ার লিগে আজ রাতে চেলসির মুখোমুখি হওয়ার আগে সিটির মাঠের অবস্থাও বুঝিয়ে দিয়েছেন গার্দিওলা। সিটিকে এখন আর কেউ ভয় পায় না বলে মনে করেন গার্দিওলা, ‘আগে আমাদের খেলোয়াড়দের কখনোই কোনো দল মার্কিং করত না। সবাই ইতিহাদে এসে একটু পিছু হটে থাকত।’
পরিস্থিতি পাল্টে এখন সিটি ক্রমশ পিছু হটছে। আর সেই সময়ই কি না তাদের ছেড়ে গেলেন ওয়াকার—সাত বছরের বেশি সময়ে সিটিতে ছয়টি প্রিমিয়ার লিগ জয়ের সঙ্গী। জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগও। মিলানে এখন ডেভিড বেকহামের জার্সি পরবেন ওয়াকার। সেখানে সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন ইংল্যান্ডের ফিকায়ো তোমোরি, রুবেন লফটাস-চিক ও ট্যামি আব্রাহামকে।
মিলানে যোগ দিয়ে সিটির প্রতি ইনস্টাগ্রামে বিদায়ী বার্তাও দিয়েছেন ওয়াকার, ‘অনেককেই ধন্যবাদ। কোচিং স্টাফ, কিট ম্যান এবং ব্যাকরুমে যত স্টাফ আছেন, যারা ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করেছেন। আপনাদের কারণে প্রতিটি দিন উপভোগ্য হয়েছে, নিজেদের সেরাটা দিতে পেরেছি। সতীর্থদের বলছি, সিটির দরজা দিয়ে প্রথম পা রাখার মুহূর্ত থেকেই নিজের ঘর মনে হয়েছে। দারুণ সব স্মৃতি এবং যেসব সাফল্য আমরা ভাগ করে নিয়েছি, সেসবের জন্য ধন্যবাদ। তোমরা আমার বন্ধু, কিন্তু সারা জীবনের পারিবারিক সদস্যও। পেপ গার্দিওলাকে বলছি, আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ এবং ২০১৭ সালে আমাকে নিয়ে আসতে বহু কাঠখড় পোড়ানোর জন্যও। আমরা একসঙ্গে ১৭টি ট্রফি জিতেছি এবং আপনার নির্দেশনাতেই আমি খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পেরেছি। চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’
টটেনহাম থেকে ২০১৭ সালে ৫ কোটি পাউন্ডে সিটিতে যোগ দেওয়া ওয়াকার ক্লাবটির হয়ে ৩১৯ ম্যাচ খেলেছেন। ২০২২-২৩ মৌসুমে সিটির ট্রেবলজয়ী দলের এই সদস্য ক্লাবটির হয়ে সর্বশেষ খেলেন গত ৪ জানুয়ারি ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে ম্যাচে।
কিলনার এবং তাঁর চার সন্তানকে নিয়ে ইতালিতে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন ওয়াকার। এর আগে কিলনারের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের গুঞ্জন শোনা গেলেও এই দম্পতি আবারও সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছেন। রিয়্যালিটি তারকা লরিন গুডমানের গর্ভে ২০২২ সালে জন্ম নেওয়া মেয়ের বাবা তিনি—এ খবর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ফাঁস হওয়ার পর কিলনার তাঁর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি করে নিতে চেয়েছিলেন। গুডমানের গর্ভে ২০২০ সালে ওয়াকারের একটি ছেলেও জন্ম নেয়। কিন্তু মেয়ের জন্ম নেওয়ার খবর জানার পর বিবাহ বিচ্ছেদের প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন কিলনার। যদিও সর্বশেষ বড়দিনে এই পরিবার আবারও একত্রিত হয়েছে।
সে যা হোক, ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ওয়াকার তাঁর মিলানে যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে পুরোনো বন্ধুর ডাকে সাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছেন, ‘ট্যামি (আব্রাহাম) বলেছে আমার এখানে আসা উচিত। সিদ্ধান্ত নিতে সে সহায়তা করেছে। মিলানের সমর্থকেরা অবিশ্বাস্য। তাদের গান শুনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ব। ডেভিড বেকহামের ৩২ নম্বর (জার্সি) নিয়েছি।’