সিমিওনেরা গোল করলে হারে না আর্জেন্টিনা
দিয়েগো সিমিওনে এমনিতেই আবেগপ্রবণ। তাঁর কোচিংয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদ যেমনই খেলুক, মাঠেই প্রতিক্রিয়া দেখান। মাঝেমধ্যে সংবাদ সম্মেলনে সেটার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। অতি আবেগে কেঁদেও ফেলেন।
সিমিওনে ওই গোলটা দেখার পর আজও হয়তো কেঁদেছেন। সেই কান্না নিশ্চয় আনন্দের, গর্বের। কোন গোলের কথা বলা হচ্ছে, বুঝতেই পারছেন!
বুয়েনস এইরেসের মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে আজ ব্রাজিলকে নিয়ে স্রেফ ছেলেখেলা করেছে আর্জেন্টিনা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা জিতেছে ৪-১ গোলে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, ম্যাচের সবচেয়ে সুন্দর ও দর্শনীয় গোল কোনটি—সবাই জুলিয়ানো সিমিওনের নামই বলবেন।
হ্যাঁ, দিয়েগো সিমিওনের ছোট ছেলে জুলিয়ানো সিমিওনে আজ আর্জেন্টিনার জার্সিতে নিজের প্রথম গোল পেয়েছেন।
উরুগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার আগের ম্যাচের নায়ক থিয়াগো আলমাদার বদলি নামেন জুলিয়ানো। ৬৮ মিনিটে নেমে ৭১ মিনিটেই সেই গোল। নিকোলাস তালিয়াফিকোর পাস থেকে বক্সের ডান পাশে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন জুলিয়ানো। কিন্তু দুরূহ কোণ থেকে বল জালে জড়ানো মোটেও সহজ ছিল না। জুলিয়ানো কঠিন কাজটিই করেছেন নিখুঁতভাবে।
২২ বছর বয়সী জুলিয়ানোর গোলে এই শতাব্দীতে নতুন এক কীর্তিও গড়েছে সিমিওনে পরিবার। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এক পরিবারের কমপক্ষে তিন সদস্য আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে গোল করলেন। প্রথমবার এমনটা ঘটেছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে। বিখ্যাত ব্রাউন পরিবারের চার ভাই আলফ্রেদো, এর্নেস্তো, এলিসিও ও হোর্হে ওই সময়ের মধ্যে আলবিসেলেস্তে জার্সিতে গোল করেছিলেন।
তবে একটা জায়গায় সিমিওনে পরিবার অনন্য কীর্তি গড়ে ফেলেছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, বংশপরম্পরায় রেকর্ডটা অটুট রেখেছে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে সিমিওনেরা গোল করেছেন, এমন কোনো ম্যাচে হারেনি আর্জেন্টিনা!
জুলিয়ানো সিমিওনের আগে আর্জেন্টিনার জার্সিতে গোল করেন তাঁর বড় ভাই জিওভানি সিমিওনে। গোলটা আবার নিজের অভিষেক ম্যাচেই। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে গুয়াতেমালার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটা ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। জুলিয়ানোর মতো জিওভানির গোলটাও ছিল ম্যাচের শেষ গোল।
২৯ বছর বয়সী জিওভানি বর্তমানে ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে খেলছেন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে নিজের ছয় ম্যাচের সর্বশেষটি খেলেছেন ২০২৩ সালের জুনে। গোল পেয়েছেন ওই একটিই।
ছেলেরা ফরোয়ার্ড হলেও দিয়েগো সিমিওনে খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন মিডফিল্ডার। সেন্ট্রাল, রাইট, লেফট ও ডিফেন্সিভ মিড—মাঝমাঠের সব জায়গাতেই ছিলেন সমান পারদর্শী।
আর্জেন্টিনার হয়ে দিয়েগো সিমিওনের ক্যারিয়ারও বেশ লম্বা। ১৯৮৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ১০৮ ম্যাচ, গোল ১১টি। তাঁর ১১ গোলের দশটিতেই জিতেছে আর্জেন্টিনা, অন্যটি করেছে ড্র।
ছোট ছেলে জুলিয়ানোর খেলা দেখতে আজ মাঠে যাননি দিয়েগো সিমিওনে। তবে গিয়েছিলেন তাঁর প্রথম ও সাবেক স্ত্রী কারোলিনা বালদিনি। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসের সৌজন্যে দারুণ এক মুহূর্তের ভিডিও এখন ভাইরাল। আজ ম্যাচ শেষ হতেই গ্যালারিতে মায়ের কাছে ছুটে যান জুলিয়ানো। মা তাঁকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকেন।
দিয়েগো সিমিওনে-কারোলিনা বালদিনির বিচ্ছেদ হয়েছে ২০১৪ সালে। এমন আনন্দের দিনেও জুলিয়ানোর তাই একটা আক্ষেপ থাকতেই পারে। মাকে ছেড়ে শিগগিরই তাঁকে বাবার কাছে ফিরতে হবে। জুলিয়ানো যে বাবার ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদেই খেলেন!