আরতেতা, এমেরি, লোপেতেগি...স্পেনের গিপুসকোয়া যেন কোচের ‘খনি’
প্রদেশটির নাম গিপুসকোয়া। আয়তনে স্পেনের সবচেয়ে ছোট প্রদেশগুলোর একটি—৭৬৫ বর্গমাইল। স্পেনের উত্তরাঞ্চলে ফ্রান্স সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত প্রদেশটিতে বাস করেন ৭ লাখ ৬০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ, যা স্পেনের জনসংখ্যার মাত্র ১.৫ শতাংশ।
আয়তনে ও জনসংখ্যায় বেশ ছোট হলেও এই গিপুসকোয়া রীতিমতো ‘ফুটবল কোচ’–এর খনি। এ মুহূর্তে শুধু ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেই গিপুসকোয়ার কোচ আছেন তিনজন। স্পেনের লা লিগা আর জার্মানির বুন্দেসলিগার ডাগআউটেও আছেন একজন করে কোচ। গিপুসকোয়ার অবস্থান যেখানে, সেই বাস্ক অঞ্চলকে হিসাবে নিলে কোচের সংখ্যা ১০ ছাড়িয়ে যাবে। যদিও স্বায়ত্তশাসিত বাস্ক আয়তনে পুরো স্পেনের মাত্র ১.৪ শতাংশ আর জনসংখ্যায় মাত্র ৪.৬ শতাংশ!
গিপুসকোয়ার যে কোচরা এখন ডাগআউট দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ মিকেল আরতেতা। আর্সেনাল কোচের জন্ম ও বেড়ে ওঠা গিপুসকোয়ার রাজধানী সান সেবাস্তিয়ানে। সান সেবাস্তিয়ান থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরের হনদারিবিয়ায় বাড়ি উনাই এমেরির। যিনি এখন অ্যাস্টন ভিলার কোচ। মজার বিষয়, আরতেতা আর এমিরি—দুজনই এখন প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা–দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, আর্সেনাল ও অ্যাস্টন ভিলা আছে শীর্ষ চারের মধ্যে।
বাড়ির দূরত্ব বিবেচনা করলে আরতেতার সবচেয়ে কাছে অবস্থান বোর্নমাউথ কোচ আন্দোনি ইরাওলার। সাবেক স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের বাড়ি উসুরবিলে, যা সান সেবাস্তিয়ান থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে। গিপুসকোয়ার ওরিওতে বাড়ি ইমানল আগুয়াসিলের। যিনি স্থানীয় ক্লাব রিয়াল সোসিয়েদাদের কোচ। আর তোলোসায় বাড়ি সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার জাবি আলনসোর, যিনি এখন বায়ার লেভারকুসেনের কোচ। বুন্দেসলিগা পয়েন্ট তালিকায় লেভারকুসেন এখন ১ নম্বরে আছে। সব মিলিয়ে সান সেবাস্তিয়ানের ১৮ মাইলের মধ্যে বাড়ি এ মুহূর্তে ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর পাঁচটি ক্লাবের কোচের।
এই পাঁচজনের পাশাপাশি গিপুসকোয়ার আরও একজন কোচ ফুটবল–বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিত—হুলেন লোপেতেগি। স্পেন, রিয়াল মাদ্রিদ, সেভিয়া ও উলভসের সাবেক কোচের বাড়ি সান সেবাস্তিয়ান থেকে ১৪ মাইল দূরের আসতিজুতে। লোপেতেগি এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পরবর্তী কোচের আলোচনায় আছেন। বর্তমানে শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করছেন, এমন আরও একজনকে কেউ কেউ চিনতে পারেন। ম্যানচেস্টার সিটিতে পেপ গার্দিওলার সহকারী হিসেবে কাজ করা হুয়ানমা লিলোর বাড়ি তোলোসায়, যেখানে বাড়ি আলনসোরও। চলতি মৌসুমে স্পেনের সেগুন্দা ডিভিশনে (লা লিগার পরই অবস্থান) খেলা দলগুলোতেও আছেন দুজন গিপুসকোয়া কোচ। এর মধ্যে তেনেরিফেতে আছেন আসিয়ের গারিতানো এবং এইবারে হোসেবা এজেবেরিয়া।
স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বাস্কে মোট তিনটি প্রদেশ। গিপুসকোয়ার সঙ্গে অপর দুটি আলাভা ও বিসকায়া। গিপুসকোয়ার সীমান্তের সঙ্গে লাগোয়া বিসকায়ায় জন্ম ওসাসুনা কোচ জাগোবা আরাসাতের। ওসাসুনা এখন লা লিগার দল, গত বছর কোপা দেল রের ফাইনালও খেলেছে। আরাসাতের বাড়ি বিসকায়ায় হলেও কোচ হিসেবে গিপুসকোয়া থেকেই সনদ নিয়েছেন তিনি। তাঁর বাড়ি থেকে ১৫ মাইল দূরে অবস্থান বর্তমান ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন সেভিয়ার কোচ হোসে লুই মেন্দিলিবারের। এ ছাড়া সাবেক বার্সেলোনা ও বর্তমান অ্যাথলেটিক বিলবাও কোচ আর্নেস্তো ভালভের্দে বেড়ে উঠেছেন আলাভা প্রদেশে।
ছোট্ট একটি অঞ্চল থেকে এত বেশি কোচ কীভাবে উঠে এসেছেন—গিপুসকোয়া ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট মানু দিয়াজকে এমন প্রশ্ন করেছিল ইএসপিএন। জবাবে আঞ্চলিক কোনো বিশেষত্বের প্রভাব উড়িয়ে দিয়ে দিয়াজ বলেন, ‘আমরা নিজেরাই নিজেদের জিজ্ঞেস করি, কীভাবে হলো এটা।’
গিপুসকোয়া থেকে বেশ কয়েকজন সফল কোচ বের হওয়ার আসলে নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। সবাই যে নিজ প্রদেশ থেকেই সবকিছু শিখেছেন, তা–ও নয়। লোপেতেগি বার্সেলোনায় ইয়োহান ক্রুইফের স্কোয়াডে ছিলেন। আলনসো রাফা বেনিতেজ, পেপ গার্দিওলা, জোসে মরিনিওদের সঙ্গে কাজ করেছেন। আর আরতেতা ১৫ বছর বয়সে লা মেসিয়ায় গেছেন। পরে ক্যারিয়ার তৈরি করেছেন গার্দিওলার সঙ্গে কাজ করে।
ওসাসুনা কোচ আরাসাতে জানিয়েছেন, গিপুসকোয়ায় কোচ তৈরিতে মিকেল এতজারি নামের একজনের ভূমিকা আছে। তিনিই পরবর্তী প্রজন্মের কোচ তৈরিতে কাজ করেন। অন্য অনেকের মতো আরাসাতেও এতজারির কাছ থেকে শিখে তরুণ ফুটবলারদের শেখানো শুরু করেন। দিয়াজও যুব ফুটবলে শেখানোর বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, ‘বাস্ক ফুটবল কাঠামোয় কোচের ভূমিকাকে খুব বড় করে দেখা হয়। ফুটবলাররা যেন খেলাতেই থাকে, সেভাবেই শেখানো হয়। এখানকার ক্লাবগুলোতে স্থানীয়রাই কোচিং করায়।’
গিপুসকোয়া থেকে কোচ তৈরির হার যে ভবিষ্যতে আরও বাড়বে, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন দিয়াজ। তিনি জানান, গত দুই বছরে গিপুসকোয়া থেকে ৭০০ জন কোচের সনদ নিয়েছেন।