কস্তার হাতের জাদুতে রোনালদোর কান্না থামিয়ে পর্তুগাল কোয়ার্টার ফাইনালে

টাইব্রেকারে তিনটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে নায়ক পর্তুগালের গোলকিপার কস্তাউয়েফা

পর্তুগাল ০: ০ স্লোভেনিয়া

(টাইব্রেকারে পর্তুগাল ৩–০ গোলে জয়ী)

অতিরিক্ত সময়ের খেলায় তখন বিরতি। মাঠের এক পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে পর্তুগালের খেলোয়াড়েরা। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সেখানে শিশুর মতো কাঁদছিলেন।

অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে খেলার শেষ মিনিটে (১০৫) পেনাল্টি পেয়েছিল পর্তুগাল। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে পেনাল্টিতে দেড় শ গোলের মাইলফলক ছোঁয়া, সর্বশেষ ১৩ পেনাল্টিতেই গোল করা রোনালদো আজ সেই পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি। স্লোভেনিয়া গোলকিপার ইয়ান ওবলাক কিনা বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে বলটা ঠেকিয়ে দিলেন!

আরও পড়ুন

অতিরিক্ত সময়ের তখন ১১৫ মিনিট। পর্তুগালের রক্ষণে বিরাট ভুল করে বসলেন পেপে। এবার ইউরোয় সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়ের রেকর্ড গড়া ৪১ বছর বয়সী পেপে পাস ধরে পায়ে রাখতে পারেননি। পেয়ে যান স্লোভেনিয়া ফরোয়ার্ড বেঞ্জামিন সেসকো। বল নিয়ে টান দিতেই সামনে পর্তুগাল গোলকিপার ডিওগো কস্তা। বাঁ পা’টা বাড়িয়ে সেসকোর শট রুখে কস্তা সে যাত্রায় পর্তুগালের বিদায়ও ঠেকালেন। ফুটবলের বড় প্রতিযোগিতায় প্রথম নকআউটে ওঠা স্লোভেনিয়া সুযোগটা নষ্ট করে পরে কপাল চাপড়েছে।

কারণ সেই কস্তাই। টাইব্রেকারে টানা তিনটি শট ঠেকিয়েছেন পর্তুগিজ ‘অতিমানব’!

টাইব্রেকারে কস্তা-ম্যাজিকের একাংশ
উয়েফা

নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে গোলশূন্য ছিল দুই দল। টাইব্রেকারে কস্তার হাত দুটি এতই চওড়া হয়ে উঠেছিল যে স্লোভেনিয়া প্রথম তিনটি শটেই লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। পর্তুগালের হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন রোনালদো, ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও বের্নার্দো সিলভা। টাইব্রেকারে ৩-০ গোলের জয়ে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল পর্তুগাল। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবেন রোনালদোরা। শেষ ষোলোয় বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স।

আরও পড়ুন

টাইব্রেকারে স্লোভেনিয়ার জোসিপ ইলিচিচ, জুরে বালকোভেচ ও বেঞ্জামিন ভারবিচের শট ঠেকান কস্তা। শেষ শটটি ঠেকানোর পর মাঝমাঠে সতীর্থদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা রোনালদোর মুখে হাসি ফুটেছে। নির্ধারিত সময়ের দুই অর্ধ মিলিয়ে তিনটি ফ্রি কিক নিয়েও গোল পাননি। বল একবার পোস্টের ওপর দিয়ে গিয়েছে, বাকি দুবার ঠেকিয়েছে ওবলাকের বিশ্বস্ত হাত। ৮৯ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে আসা পাসে দারুণ সুযোগ থেকে শটও নিয়েছিলেন। এবারও প্রাচীর সেই ওবলাক! টাইব্রেকারে শেষ পর্যন্ত সেই প্রাচীর গলে লক্ষ্যভেদ করেছেন রোনালদো। উদ্‌যাপন করেছেন দুহাত তুলে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে। সেটি পেনাল্টি মিসের জন্য। কিন্তু কস্তা যা করছিলেন, তাতে রোনালদোর মুখে স্বস্তির হাসি ফুটতই।

স্লোভেনিয়ার খেলোয়াড়দের হৃদয় ভেঙেছে
উয়েফা

তবে পর্তুগালের সমর্থকদের সম্ভবত তখন রোনালদোকে নিয়ে ভাবার সময় ছিল না। চোখের সামনে অবিশ্বাস্য কিছু ঘটতে দেখলে কার ওসবে মন থাকে! ইউরোর ইতিহাসে টাইব্রেকারে প্রথম গোলকিপার হিসেবে তিনটি পেনাল্টি সেভ করলেন কস্তা; ফ্রাঙ্কফুর্ট অ্যারেনায় পর্তুগাল সমর্থকদের চোখেমুখে তখন অবিশ্বাস! কান্না ভুলে রোনালদোর মুখেও হাসি। পরে তো তাঁকে বুকেও টানলেন।

পর্তুগাল এই আনন্দে মাততে পারত অনেক আগেই। স্লোভেনিয়ার রক্ষণে মোট ৯৩টি আক্রমণ করেছে রবার্তো মার্তিনেজের দল। গোল হওয়ার মতো আক্রমণ ছিল ২০টি। সেখান থেকে পোস্টে রাখতে পেরেছে ৬টি শট। দুই অর্ধেই গোলের বেশ ভালো কয়েকটি সুযোগ পেয়েছে পর্তুগাল। অতিরিক্ত সময়ের একদম শেষ দিকে গোলের সেরা সুযোগটি পেয়েছে পর্তুগাল। বল নিয়ে স্লোভেনিয়ার রক্ষণে ঢুকে পড়েছিলেন ভিতিনহার বদলি নামা পর্তুগিজ দিয়োগো জোতা। স্লোভেনিয়ার ডিফেন্ডার ভানজা দারকুসিচ তাঁকে ফেলে দিয়ে পেনাল্টি হজম করেন। ওবলাক সে যাত্রায় রোনালদোকে ঠেকিয়েছিলেন বলে রক্ষা। সুযোগ পেলে প্রতি–আক্রমণকে পুঁজি করে খেলা স্লোভেনিয়াও গোলের সুযোগ পেয়েছিল। পেপের ভুলে প্রথমার্ধে পাওয়া সুযোগ নষ্ট করেন সেসকো। বল মারেন পোস্টের বাইরে।

গত মার্চে প্রীতি ম্যাচে স্লোভেনিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল পর্তুগাল। এবার মুখোমুখিতে পর্তুগালের প্রায় ৭০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে বারবার আক্রমণে ওঠা বলে দেয়, হিসাবটা মিটিয়ে ফেলার ইচ্ছাই ছিল ব্রুনো ফার্নান্দেজদের। তবে স্লোভেনিয়ান রক্ষণ দুই অর্ধেই সাহস নিয়ে লড়েছে। প্রথমার্ধে রোনালদোকে সেভাবে বল পেতে দেয়নি। দুই প্রান্তে রাফায়েল লেয়াও ও সিলভাকেও ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে স্লোভেনিয়ান রক্ষণ। গ্রুপ পর্বে সব ম্যাচ ড্র করেছে স্লোভেনিয়া। শেষ ষোলোতেও নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে হারেনি তারা। দুভার্গ্য টাইব্রেকারে। তবু মাথা উঁচুই থাকবে।