গুরু পাপে কি লঘু দণ্ড পেলেন ভিনিসিয়ুস

স্তোল দিমিত্রিয়েভস্কির মাথায় আঘাত করেছিলেন ভিনিসিয়ুসরয়টার্স

লা লিগায় গত শুক্রবার ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের ২-১ গোলের জয়ে লাল কার্ড দেখায় দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ভ্যালেন্সিয়া গোলকিপার স্তোল দিমিত্রিয়েভস্কির মাথায় হাত দিয়ে আঘাত করায় লিগে তাঁকে এ শাস্তি দিয়েছে রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ)।

আরও পড়ুন

লাস পালমাস ও রিয়াল ভায়োদোলিদের বিপক্ষে রিয়ালের পরবর্তী দুটি লিগ ম্যাচে খেলতে পারবেন না ভিনিসিয়ুস। তবে অন্য প্রতিযোগিতায় ভিনিকে পাচ্ছে রিয়াল। বৃহস্পতিবার রাতে সৌদি আরবের রিয়াদে স্প্যানিশ সুপার কাপের সেমিফাইনালে মায়োর্কার মুখোমুখি হবে রিয়াল। এ ম্যাচে খেলতে অসুবিধা নেই ব্রাজিল উইঙ্গারের।

ভিনির সে ম্যাচে মেজাজ হারিয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখার পেছনে দিমিত্রিয়েভস্কির উসকানি ছিল। ৭৬ মিনিটে মেসিডোনিয়ান এই গোলকিপার পেছন থেকে ভিনির চুল টেনে ধরেছিলেন। এরপর আর নিজের মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি রিয়াল তারকা। লাল কার্ড দেখার পর রেফারির সোতো গ্রাদোর প্রতি তেড়েফুঁড়েও গিয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, আরএফইএফ ডিসিপ্লিনারি কোডের ১০৩ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীন দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে সর্বোচ্চ চার ম্যাচও নিষিদ্ধ করা হতে পারে। সে হিসাবে কম মাত্রার শাস্তিই পেলেন ভিনি।

যদিও ভিনি দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়ার পর অন্য বিতর্কও উঠেছে স্পেনে। দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘এল মুন্দো দেপোর্তিভো’র দাবি, ভিনির ক্ষেত্রে আরএফইএফের এক আইন, অন্যদের ক্ষেত্রে অন্য রকম আইন! সংবাদমাধ্যমটি তিনটি উদাহরণ টেনে ভিনিসিয়ুসের শাস্তির সঙ্গে ঘটনাগুলোর তুলনা দিয়েছে।

আরও পড়ুন

ভ্যালেন্সিয়া-রিয়াল ম্যাচের রেফারি সোতো গ্রাদো ভিনিকে লাল কার্ড দেখানোর কারণ হিসেবে তাঁর প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘যখন বল খেলায় নেই, তখন জোরের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিপক্ষের মাথায় আঘাত করেছে।’

গত ২২ ডিসেম্বর ভিয়ারিয়াল-লেগানেস ম্যাচে দুই হাত দিয়ে ভিয়ারিয়ালের ইয়েরেমি পিনোর ঘাড় ধরে তাঁকে ফেলে দিয়েছিলেন লেগানেসের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অস্কার রদ্রিগেজ। রেফারি মুনিজ রুইজ তাঁর ম্যাচ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, অস্কার তাঁকে ফেলে দেওয়ার সময় ‘খেলা বন্ধ ছিল’। এ ঘটনায় অস্কারকে তখন চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক
রয়টার্স

বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিকের শাস্তি পাওয়ার উদাহরণও টানা হয়েছে। প্রায় এক মাস আগে রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে টাচলাইনে দাঁড়িয়ে লাল কার্ড দেখেন ফ্লিক। রেফারি মুনিজ রুইজ বেতিসের পক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিলে তা মেনে নিতে পারেননি এই জার্মান কোচ। রেফারির প্রতিবেদনে লেখা হয়, নিজের টেকনিক্যাল জায়গা থেকে বের হয়ে আসা, চিৎকার করা এবং বাজে অঙ্গভঙ্গির জন্য তাঁকে লাল কার্ড দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ফ্লিক। সে তুলনায় ভিনিসিয়ুসের ঘটনাটি আরও মারাত্মক। কিন্তু তাঁকে একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

২০২২ সালের নভেম্বরে ওসাসুনা-বার্সেলোনা ম্যাচে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি। রেফারি গিল মানজানো তাঁকে লাল কার্ড দেখানোর কারণ হিসেবে ম্যাচ প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, ‘মাঠ ছাড়ার সময় দুবার রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়াসূচক ইঙ্গিত করেছেন। নাকের ওপর আঙুল রেখে বুড়ো আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করেছেন রেফারির প্রতি। মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময়ও একই আচরণ করেন’ লেভানডফস্কি।

রেফারির প্রতি আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করে লাল কার্ড দেখেছিলেন লেভানডফস্কি
এএফপি

এ ঘটনায় আরএফইএফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি তাঁকে মোট তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছিল। লাল কার্ডের জন্য এমনিতেই এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হতেন। পাশাপাশি রেফারির প্রতি ‘অসম্মানজনক’ আচরণের কারণে আরও দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয় তাঁকে।

ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেও লাল কার্ড দেখার পর রেফারির প্রতি ভিনির আচরণ ছিল অসম্মানজনক। তেড়েফুঁড়ে গিয়েছিলেন। রুডিগার ও দানি সেবায়োস তাঁকে ধরে শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরে নিয়ে যান। এর পাশাপাশি দিমিত্রিয়েভস্কিকেও আঘাত করেছেন। প্রশ্নটি তাই ওঠেই—আরএফইএফ কি ভিনিকে গুরু পাপে লঘু দণ্ড দিল?