এক রোনালদোর আয়ের সমান ৬ হলান্ড, ৭ হ্যাজার্ড, ৮ গ্রিজমান
লিওনেল মেসি যে বছর বিশ্বকাপ জিতলেন, সে বছর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ইউরোপ ছেড়ে অখ্যাত সৌদি আরবের লিগে যাওয়ার প্রক্রিয়া সেরেছেন—দুজনের মধ্যে ‘সেরা’র মীমাংসায় এই বিষয়টাই আগামী দিনে সামনে চলে আসবে বলে ধারণা অনেকের।
কিন্তু সৌদি–যাত্রায় রোনালদো কি আসলেই সেরার দৌড়ে হেরে গেছেন? উত্তর যেটা–ই হোক, এটি পরিষ্কার যে অর্থকড়ির প্রসঙ্গ বলছে ভিন্ন কথা। বরং আগামীর ফুটবলে অর্থকড়ির প্রসঙ্গ এলে রোনালদোর সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে যোগ দেওয়াই হয়ে উঠতে পারে বড় মানদণ্ড।
ফেব্রুয়ারিতে বয়স ৩৮ পূর্ণ হতে যাওয়া রোনালদো আল নাসরে যোগ দিয়েছেন রেকর্ড বেতন–ভাতায়। সৌদির আরবনিউজ, যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএসসহ দলবদলের খবর সংগ্রাহকদের তথ্য অনুযায়ী, আল নাসরে পর্তুগিজ তারকা বাৎসরিক আয় করবেন ২১ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। যা ফুটবল তো বটেই, ক্রীড়া ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ।
পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী বেতন, ইমেজ স্বত্ব ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড মিলিয়ে যে আয় করবেন এক বছরে, ইউরোপ মাতানো তারকা ফুটবলারদের অনেকেরই একই পরিমাণ আয় করতে লাগবে কয়েক বছর।
আর্লিং হলান্ডের কথাই ধরা যাক। ২২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড বর্তমান দলবদল বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামী খেলোয়াড়। ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে তাঁকে কিনতে লাগবে ১৭ কোটি ইউরো (এমবাপ্পে ১৮ কোটি)। অথচ ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলা নরওয়েজীয় এই তারকার বর্তমান বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার।
মার্কিন অর্থ ও বাণিজ্য সাময়িকী ফোর্বসের হিসাব অনুসারে, ২০২২ সালে মাঠ ও মাঠের বাইরে মিলিয়ে এই আয় ছিল হলান্ডের। এর অর্থ, ২০২৩ সালে রোনালদো যা আয় করবেন, তার সমপরিমাণ অর্থ আয় করতে প্রায় ছয় বছর লাগবে হলান্ডের।
আবার যে ক্লাবটিতে রোনালদো সবচেয়ে সফল ছিলেন সেই রিয়াল মাদ্রিদের কথা ধরা যাক। ২০১৮ সালে রোনালদো জুভেন্টাসে চলে যাওয়ার পর রিয়াল দলে ভিড়িয়েছিল এডেন হ্যাজার্ডকে। গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশ করা ফোর্বসের প্রতিবেদন বলছে, বেলজিয়ান তারকার বার্ষিক আয় ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। পর্তুগিজ তারকার আয়ে পৌঁছাতে বর্তমান রিয়াল ফরোয়ার্ডের লাগবে ৭ বছর।
২০১৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন আর ২০২২ বিশ্বকাপের রানার্সআপ আঁতোয়ান গ্রিজমান তো আরও পেছনে। বার্সেলোনা ঘুরে আবার আতলেতিকো মাদ্রিদে যাওয়া এই ফরোয়ার্ড বছরে বেতন পান ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের মতো, এনডোর্সমেন্টসহ পৌনে তিন কোটির মতো। গ্রিজমানের দুই বছরের সমপরিমাণ আয় রোনালদোর অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই।
প্রায় একই সমীকরণ খাটে বার্সেলোনার রবার্ট লেভানডভস্কি, ম্যানচেস্টার সিটির কেভিন ডি ব্রুইনার ক্ষেত্রেও। পোলিশ তারকা লেভা বছরে মাঠ ও মাঠের বাইরে মিলিয়ে বছরে আয় করেন সাড়ে তিন কোটি ডলার। আর এ সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে বিবেচিত ডি ব্রুইনা পান ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার করে।
প্রশ্ন হতে পারে, গ্রিজমান, হলান্ডরা সময়ের সেরা খেলোয়াড় হয়েও আয়ে এত পিছিয়ে কেন? ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ আর পর্তুগাল কোচ যাঁকে পারফরম্যান্সের কারণে বেঞ্চে বসিয়েছিলেন, তাঁর কীভাবে এত আয়?
উত্তরটা বিপণনের বাজারে। টাকাকড়ি উৎপাদন হয় যে বাজারে, সে বাজারের বড় খেলোয়াড় এখনো রোনালদোই!