পগবা, হ্যাজার্ড থেকে গ্রিজমান—দলবদলের ‘সাদা হাতি’রা
যে কাজে বিপুল অর্থ খরচ করেও কোনো ফল আসে না, তাকে অর্থনীতির ভাষায় বলে ‘সাদা হাতি প্রকল্প’। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে এমন সাদা হাতি প্রকল্পের দেখা মেলে প্রায়ই।
প্রচুর অর্থ খরচ করে দলবদলের বাজার থেকে ‘হিট’ খেলোয়াড় কেনা হয়, কিন্তু মাঠে নামার পর দেখা যায় ‘ফ্লপ’। জোয়াও ফেলিক্স যার সর্বশেষ নজির। পর্তুগিজ এ ফরোয়ার্ডকে ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফির রেকর্ড গড়ে কিনেছিল আতলেতিকো মাদ্রিদ।
কিন্তু তিন বছরের মাথায় সেই ফেলিক্সকে এখন ধারে চেলসিতে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা। দামে বেশি কিন্তু পারফরম্যান্সে ‘কম’ – এমন শীর্ষ ৭ দলবদল দেখে নেওয়া যাক—
১. ফিলিপে কুতিনিও (লিভারপুল থেকে বার্সেলোনা, ২০১৮)
এই চুক্তিটা ছিল লিভারপুল ইতিহাসের অন্যতম সফল বিক্রয়, আর বার্সেলোনা ইতিহাসের বাজে ক্রয়গুলোর একটি। ২০১৮ সালে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে ১২ কোটি ইউরোয় কেনে বার্সা। পাশাপাশি সম্ভাব্য বোনাসও ধরা হয়েছিল আরও ৪ কোটি। কাতালান ক্লাবটির প্রাথমিক ভাবনায় ছিল কুতিনিওকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার বিকল্প হিসেবে কাজে লাগানো। তবে ইনিয়েস্তার বিকল্প হওয়া দূরে থাক, মাঝমাঠ, আক্রমণভাগ কোথাও কুতিনিওকে থিতু করা যায়নি।
চার বছর বার্সেলোনায় ছিলেন কুতিনিও। আর্থিক সংকটে পড়া বার্সা তাঁর জন্য সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজে বেড়িয়েছে অনেক দিন। শেষ পর্যন্ত গত বছর অ্যাস্টন ভিলার কাছে মাত্র ২ কোটি ইউরোয় বিক্রি করে দেওয়া হয়। এর আগে বায়ার্নে তাঁকে ধারে খেলতে পাঠিয়েছিল বার্সেলোনা। সেই সময় ২০২০ চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্নের হয়ে বার্সেলোনার বিপক্ষে জোড়া গোল করেন কুতিনিও।
২. আঁতোয়ান গ্রিজমান (আতলেতিকো থেকে বার্সেলোনা, ২০১৯)
জোসেফ মারিয়া বার্তামেউয়ের অধীনে বার্সেলোনার আরেকটি ‘ফ্লপ’ দলবদল। আতলেতিকোর ফরাসি ফরোয়ার্ডকে ১২ কোটি ইউরোয় কিনেছিল বার্সা। কিন্তু আতলেতিকোতে তিনি যতটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন, বার্সেলোনায় ততটা মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। দুই মৌসুম পর আবার ধারে চলে যান মাদ্রিদের ক্লাবটিতে। পরে স্থায়ীভাবে আতলেতিকোয় দ্বিতীয়বার নাম লেখান।
৩. জোয়াও ফেলিক্স (বেনফিকা থেকে আতলেতিকো মাদ্রিদ, ২০১৯)
আঁতোয়ান গ্রিজমানকে বার্সেলোনার কাছে বিক্রি করে বেনফিকা থেকে জোয়াও ফেলিক্সকে নিয়ে এসেছিল আতলেতিকো মাদ্রিদ। তখনকার ১৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের জন্য ১২ কোটি ৭০ লাখ ইউরো খরচ করে দিয়েগো সিমিওনের দল।
পরবর্তী সময়ে আতলেতিকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিগুয়েল আনহেল গিল ম্যারিন বলেন, ফেলিক্সের জন্য বড় অর্থ খরচ করা ছিল ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজি। সেই ‘বাজি’ ধরা ফুটবলারকে এবার ছয় মাসের জন্য চেলসিতে ধারে পাঠিয়ে দিয়েছে আতলেতিকো।
৯৬ ম্যাচে ২৫ গোল করা স্ট্রাইকারকে নিয়ে আপাতত ভারমুক্ত হয়েছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
৪. উসমান দেম্বেলে (ডর্টমুন্ড থেকে বার্সেলোনা, ২০১৭)
সে বছর দলবদলের রেকর্ড গড়ে পিএসজির কাছে নেইমারকে বিক্রি করে দিয়েছিল বার্সেলোনা। হাতে ছিল প্রচুর অর্থ। সেই অর্থ যেন ‘পোড়ানো’র সিদ্ধান্ত নেয় কাতালান ক্লাবটি। ডর্টমুন্ডে মাত্র এক মৌসুম ভালো খেলা উসমান দেম্বেলের জন্য হাঁকায় অবিশ্বাস্য দাম। খুব বেশি দর–কষাকষিতে না গিয়ে কিনে ফেলে অ্যাড-অনসহ সাড়ে ১৪ কোটি ইউরোয়।
তবে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার এক মাস পরই চোটে পড়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠ থেকে ছিটকে যান দেম্বেলে। সেই যে শুরু, এরপর কয়েক মাস পরপরই চোটে পড়েছেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। সম্প্রতি চোট-প্রবণতা কমে এসেছে।
৫. পল পগবা (জুভেন্টাস থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ২০১৬)
২০১২ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে অসন্তুষ্ট করে জুভেন্টাসে চলে গিয়েছিলেন পল পগবা। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন তখন অভিযোগ করেছিলেন, ইউনাইটেডকে অসম্মান করে অনেক আগেই ইতালির ক্লাবে যেতে কথা দিয়ে ফেলেছিলেন ফরাসি মিডফিল্ডার।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে বদনাম কুড়িয়ে যাওয়া পগবাকেই ২০১৬ সালে রেকর্ড দামে কিনে নিয়ে আসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। পগবার জন্য খরচ করে সাড়ে ১০ কোটি ইউরো, যা ছিল তখনকার দলবদল বাজারের সর্বোচ্চ। তবে ইউনাইটেডের দ্বিতীয় অধ্যায়টি তাঁর ভালো যায়নি।
ছয় মৌসুমে মাত্র একটি ইউরোপা লিগ আর একটি ক্যারাবাও কাপ নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন পগবা নিজেও। ২০২২ সালের প্রথম দিকে দর্শকদের ধারাবাহিক দুয়ো শোনার পর আবার জুভেন্টাসে ফিরে যান তিনি।
৬. এডেন হ্যাজার্ড (চেলসি থেকে রিয়াল মাদ্রিদ, ২০১৯)
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চলে যাওয়ার পরের বছর হ্যাজার্ডের জন্য ১০ কোটি ইউরো খরচ করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা হ্যাজার্ডের সামনে ছিল রোনালদো–পরবর্তী রিয়ালের পোস্টারবয় হয়ে ওঠার সুযোগ। কিন্তু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এসে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। বেলজিয়ান তারকা হোঁচট খেয়েছেন চোটের কারণেও। রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগসহ গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা জিতেছেন বটে, কিন্তু অবদান রাখতে পেরেছেন কমই।
৭. রোমেলু লুকাকু (ইন্টার মিলান থেকে চেলসি, ২০২১)
বেলজিয়ামের আন্ডারলেখট থেকে বের হওয়ার পর রোমেলু লুকাকুর প্রথম ক্লাব ছিল চেলসি। তবে ২০১১-১২ মৌসুমের চেলসি-অধ্যায় ছিল হতাশায় ভরা। ১২ ম্যাচ খেলে কোনো গোলই করতে পারেননি। ১০ বছর পর ইন্টার মিলান থেকে চেলসিতে নাম লিখিয়ে লুকাকু বলেছিলেন, ‘অসমাপ্ত কাজ’ এবার শেষ করবেন।
সেই অসমাপ্ত কাজ আর চেলসির দেওয়া ১১ কোটি ইউরোর মোটামুটি ভালো ‘প্রতিদান’ই দেন লুকাকু। ২০২১-২২ মৌসুমে ৪৪ ম্যাচে করেন ১৫ গোল, যা চেলসির মৌসুম সর্বোচ্চ।
তবে স্কাই স্পোর্ট ইতালিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে চেলসির জন্য হয়ে ওঠেন হতাশার কারণ। সাক্ষাৎকারে ইন্টারের প্রতি ভালোবাসা আর টমাস টুখেলের কৌশলের সমালোচনা করে স্টামফোর্ড ব্রিজে আস্থা হারান। এক বছর পরই ধারে ফিরে যেতে হয়েছে ইন্টারে।