রেকর্ড দামেও কি কাইসেদোকে পাচ্ছে না লিভারপুল
দলবদলের শুরু থেকেই চেলসির চোখ ছিল ব্রাইটন তারকা মইজেস কাইসেদোর ওপর। বেশ কয়েকবার তাঁকে পেতে প্রস্তাবও দেয় চেলসি। চেলসির সর্বশেষ প্রস্তাবটি ছিল ১০ কোটি পাউন্ডের। যদিও চেলসির সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় ব্রাইটন; এরপরও একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল, দুই পক্ষের চুক্তি শুধুই সময়ের ব্যাপার। দাম আরেকটু বাড়িয়ে চেলসি হয়তো তাঁকে নিয়েই নেবে। কিন্তু পাশার দান উল্টে দিয়ে খেলোয়াড় ছিনতাইয়ের জন্য বিখ্যাত চেলসিকে বড় ধাক্কা দিয়ে সেই কাইসেদোকে দলে ভেড়ানোর পথে এগিয়ে যায় লিভারপুল।
একাধিক ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমের খবর ব্রিটিশ রেকর্ড ভেঙে ১১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ডে কাইসেদোকে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে লিভারপুল ও ব্রাইটন। যেকোনো মুহূর্তে কাইসেদোকে দলে টানা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে ‘অল রেড’রা। যদি শেষ পর্যন্ত এই চুক্তি আলোর মুখ দেখে, তাহলে দামের দিক থেকে এনজো ফার্নান্দেজকে (১০ কোটি ৭০ লাখ) পেছনে সবার ওপরে উঠে আসবেন কাইসেদো। কিন্তু সব যখন ঠিকঠাক তখন বেঁকে বসেছেন কাইসেদো নিজে।
ইউরোপীয় ফুটবলের দলবদলের বাজার বরাবরই নাটকীয়তায় ভরপুর থাকে। চূড়ান্ত ঘোষণা আসার আগপর্যন্ত বাতাসের গতি বদলাতে পারে যেকোনো দিকে। কাইসেদোর দলবদল নিয়ে নাটকীয়তাও আরেকবার সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে দুই ক্লাব ঐকমত্যে পৌঁছালেও এখনো কাইসেদোর সঙ্গে লিভারপুলের ব্যক্তিগত শর্তে দর-কষাকষি চলছে বলে জানা গেছে। স্কাই স্পোর্টস বলছে, লিভারপুলে যাওয়া নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবছেন কাইসেদো।
তিনি এবং তাঁর প্রতিনিধিও এখন লন্ডনে। চেলসি নতুন কোনো প্রস্তাব নিয়ে লড়াইয়ে ফিরে আসে কি না, সেই অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। দলবদল বিশেষজ্ঞ ফাবরিজিও রোমানো জানিয়েছেন, কাইসেদো লিভারপুলকে না করে দিয়েছেন। চেলসিকে কথা দিয়েছেন তিনি, সেটাই রাখতে চান।এর আগে বিবিসিসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দ্রুত ব্যক্তিগত শর্তে ঐকমত্যে পৌঁছাবে লিভারপুল ও কাইসেদো। আর আজকের মধ্যে সম্পন্ন হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইকুয়েডরিয়ান ক্লাব ইন্দেপেনদিয়েন্তে দেল ভালে থেকে মাত্র ৪০ লাখ পাউন্ডে ব্রাইটনে আসেন কাইসেদো। লিগে তাঁর অভিষেক হয়েছে গত বছরের এপ্রিলে। জানুয়ারির দলবদলে তাঁর জন্য একাধিক প্রস্তাব দিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল আর্সেনাল। এর মধ্যে গত মার্চে কাইসেদোর সঙ্গে ২০২৭ সাল পর্যন্ত চুক্তি বাড়ায় ব্রাইটন।
আর এখন এসে তাঁর নতুন ক্লাবে যাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন নাটক, যেখানে ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ কোটি পাউন্ড।
গতকাল পর্যন্ত অবশ্য লিভারপুলের চোখ ছিল সাউদাম্পটন মিডফিল্ডার রোমিও লাভিয়ার ওপর। তাঁকে কিনতেও মুখোমুখি অবস্থানে ছিল লিভারপুল ও চেলসি। এর মধ্যে লাভিয়ার জন্য তিনবার প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে লিভারপুল। কিন্তু এখন এসে লাভিয়ার জন্য চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে কাইসেদোকেই দলে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।
এদিকে মৌসুম শুরুর আগমুহূর্তে কাইসেদোকে দলে টেনে নিতে পারলে সেটা শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলোর জন্য লিভারপুলের বড় বার্তাই হবে। গত মৌসুমের পুরোটা জুড়ে কার্যকর মিডফিল্ডারের অভাবে ভুগেছে অ্যানফিল্ডের দলটি। দলে মিডফিল্ডার ঘাটতি নিয়ে হতাশা ছিল সমর্থকদের মধ্যেও। এদিকে মৌসুম শেষে লিভারপুল ছেড়ে গেছেন অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন এবং ফাবিনিওর মতো মিডফিল্ডাররা।
বিপরীতে বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকা অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্টার এবং হাঙ্গেরিয়ান তরুণ ডমিনিক সোবোসলাইকে দলে ভিড়িয়েছে লিভারপুল। যাঁদের সঙ্গে এবার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড পজিশনে আসতে যাচ্ছেন কাইসেদোও, যা লিভারপুলের মাঝমাঠে দারুণভাবে শক্তি বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি পুনর্গঠিত এই মাঝমাঠ সমর্থকদের মধ্যেও ফিরিয়ে দেবে দারুণ আত্মবিশ্বাস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাইসেদো বেঁকে বসায় জটিল হয়েছে লিভারপুলে দলবদল সমীকরণ।