ইন্টার মায়ামি আর মেজর লিগ সকার সম্পর্কে জেনে নিন

ইন্টার মায়ামির মূল জার্সি গোলাপি রঙেররয়টার্স

লিওনেল মেসি ঘোষণাটা দিয়েছেন প্যারিসে বসে। আর সেই ঘোষণা ভূমিকম্প হয়ে ধাক্কা দিয়েছে প্রায় ৭ হাজার ২৯৮ কিলোমিটার দূরে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায়। অবশ্য শুধু ফ্লোরিডা কেন, ধাক্কাটা তো খেয়েছে পুরো ফুটবল–বিশ্বই!

কদিন ধরেই মেসির সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল আর বার্সেলোনার নামই উচ্চারিত হয়েছে বেশি। বার্সেলোনা বিশ্ব ফুটবলের সফলতম ক্লাবগুলোর একটি, দর্শকের জন্য নতুন করে চেনাজানার ব্যাপার নেই। তবে সৌদি আরবের আল হিলাল নিয়ে দর্শকের আগ্রহ তুঙ্গে ওঠে। মেসির সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে ক্লাবটি সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।

কিন্তু বেরসিক মেসি আল হিলালকে এড়িয়ে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণার পর সমর্থকদের যেন একটু বাড়তি পরিশ্রমই করতে হচ্ছে! এখন চলছে মেজর লিগ সকার (এমএলএস) আর মায়ামিকে নিয়ে কাঁটাছেঁড়া। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল লিগটি কেমন, কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, কারা খেলে, ইন্টার মায়ামি ক্লাবটি কেমন, কে মালিক, মাঠ কোথায়, তাদের আর্থিক সক্ষমতা কেমন, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে অনুসারীর সংখ্যাই–বা কত—এসব খুঁটিনাটি বিষয় জানার চেষ্টা করছেন মেসির সমর্থকেরা।

যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে নাম লেখাচ্ছেন মেসি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

ফুটবলপ্রেমীদের এই খোঁজ নেওয়ার ধারাবাহিকতায় ইনস্টাগ্রামে মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে তরতরিয়ে। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ঘোষণা দেওয়ার আগে ইনস্টাগ্রামে মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখের কাছাকাছি, যা ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪৫ লাখে।

যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লিগে (এমএলএস) দলগুলোর মধ্যে ইনস্টাগ্রামে এত দিন লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সির অনুসারীর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি—প্রায় ১৪ লাখ। কিন্তু মেসির এক ঘোষণার ধাক্কায় ইনস্টায় এমএলএসের ক্লাবগুলোর মধ্যে অনুসারীর সংখ্যায় মায়ামি এখন শীর্ষে। এবার মায়ামির আরও কিছু পরিচয় দেওয়া যাক।

তুলনামূলক নতুন এক দল ইন্টার মায়ামি

ইন্টার মায়ামি ফ্লোরিডাভিত্তিক ক্লাব। খুব বেশি দিন আগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ২০১৮ সালে এ ক্লাব যাত্রা শুরু করে, ২০২০ সাল থেকে জায়গা করে নেয় মেজর লিগ সকারে। ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারহিলে ডিআরভি পিএনকে স্টেডিয়াম মায়ামির ঘরের মাঠ।

মেসির একসময়ের জাতীয় দলের সতীর্থ গঞ্জালো হিগুয়েইন ও ফ্রান্সের জয়ে বিশ্বকাপজয়ী ব্লেইস মাতুইদি মায়ামির হয়ে খেলেছেন। এখন পর্যন্ত তিন মৌসুম এমএলএসে খেলে বলার মতো কোনো সাফল্য পায়নি মায়ামি। মেসি এখন পর্যন্ত তাঁর ক্লাব ক্যারিয়রে যে দুই দলে খেলেছেন, সে তুলনায় ইন্টার মায়ামি নিতান্তই শিশু। মেসির বেড়ে ওঠা ও প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ক্লাব বার্সেলোনা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৯ সালে, পিএসজি ১৯৭০ সালে।

আরও পড়ুন

মালিকানায় বেকহাম

মোটামুটি সবারই জানা, ইন্টার মায়ামির মালিকানায় আছেন ইংল্যান্ডের সাবেক মিডফিল্ডার ডেভিড বেকহাম। ক্লাবের প্রেসিডেন্টও তিনি। এই মালিকানায় বেকহামের সঙ্গে আরও দুজন অংশীদার আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৌশল ও নির্মাণশিল্প ব্যবসায় বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠা দুই ব্যবসায়ী ভাই হোর্হে ও হোসে মাস মায়ামির মালিকানার অংশীদার।

ইন্টার মায়ামির সভাপতি ও মালিক ডেভিড বেকহামের সঙ্গে লিওনেল মেসি
ছবি: টুইটার

২০০৭ সালে এমএলএসের দল লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সিতে যোগ দেওয়ার পর ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিতে একটি সুযোগ রাখা হয়েছিল বেকহামের জন্য—খেলা ছাড়ার পর বেকহাম চাইলে এমএলএসের একটি দল কিনতে পারবেন।

২০১৮ সালে এমএলএসে ইন্টার মায়ামি হয়ে সামনে আসে বেকহামের দল। ওইসময় মাস ভাইদের সেই ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকানায় যুক্ত করেন বেকহাম। তখন এর নামকরণ হয় ইন্টার মায়ামি। ওই বছরই বেকহামের ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন মেসি। বেকহাম ক্লাব কেনার পর মেসি তাঁকে ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ‘ডেভিড, তোমাকে অভিনন্দন। আশা করি, নতুন প্রকল্পের সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলবে। কে জানে, কয়েক বছর পর হয়তো তুমিই আমাকে একটা ফোন করবে।’

আরও পড়ুন

মেজর লিগ সকারে কেমন করছে মায়ামি


এখন পর্যন্ত বলার মতো সাফল্য নেই ইন্টার মায়ামির। প্রথম মৌসুমে ইস্টার্ন কনফারেন্সে দশম আর সমন্বিত তালিকায় ১৯তম হয় দলটি। দ্বিতীয় বছর নিজেদের কনফারেন্সে হয় ১১তম আর সমন্বিত তালিকায় ২০তম। ২০২২ সালে অবশ্য কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। ইস্টার্ন কনফারেন্সে ষষ্ঠ আর দুই কনফারেন্স মিলিয়ে ১২তম হয়েছিল তারা। এ মৌসুমে খুবই খারাপ অবস্থা মায়ামির। ইস্টার্ন কনফারেন্সে ১৫ দলের মধ্যে ১৫তম স্থানে আছে।

আরও পড়ুন

কোচ কে মায়ামির

মায়ামির প্রথম কোচ ছিলেন ডিয়েগো আলনসো। উরুগুইয়ান এই কোচ ২০২১ সালে বিদায় নিলে কোচের দায়িত্ব নেন ইংল্যান্ডের ফিল নেভিল। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বেকহামের সঙ্গে খেলা নেভিলকে বরখাস্ত করা হয় গত মাসে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে কাজ করছেন আর্জেন্টিনার হাভিয়ের মোরালেস। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ওলে জানিয়েছে, বার্সেলোনার সাবেক কোচ টাটা মার্টিনোকে কোচের দায়িত্ব দিতে পারে মায়ামি।

ইন্টার মায়ামির সঙ্গে কি ইন্টার মিলানের কোনো সম্পর্ক আছে

ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের সঙ্গে নামে মিল আছে ইন্টার মায়ামির। কিন্তু এই দুই ক্লাব পুরোপুরি আলাদা। দুই ক্লাবই ভিন্ন মালিকানাধীন। এই ‘ইন্টার’ নাম নিয়ে আইনি জটিলতাও তৈরি হয়েছে এর আগে। ইন্টার মায়ামির পুরো নাম দ্য ক্লাব ইন্টারন্যাশিওনাল দি ফুটবল মায়ামি, আর ইন্টার মিলানের পুরো নাম দ্য ফুটবল ক্লাব ইন্টারন্যাজিওনাল মিলানো। উভয় ক্লাবই যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘ইন্টার’ নামের স্বত্ব দাবি করেছিল। তবে কয়েক বছরের আইনি বাদানুবাদের পর কোনো ক্লাবকে আলাদাভাবে স্বত্ব দেওয়া হয়নি। ফুটবল বিশ্বে বেশ কয়েকটি ক্লাবে যেমন ইউনাইটেড আর রিয়াল শব্দ দুটি আছে। ঠিক তেমনি ইন্টার শব্দটিও ব্যবহার হচ্ছে মিলান ও মায়ামি দুই নামের সঙ্গেই।

আরও পড়ুন

মেজর লিগ সকারে সবচেয়ে সফল দল কোনটি

মেজর লিগ সকারের সবচেয়ে বেশি শিরোপা জিতেছে লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সি—৫টি। দুই কনফারেন্স মিলিয়ে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা দলকে দেওয়া সাপোর্টার্স শিল্ডস পুরস্কার, যা সর্বোচ্চ চারবার করে জিতেছে লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সি ও ডিসি ইউনাইটেড। মেজর লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি। ২০২২ সালের নভেম্বরে ফিলাডেলফিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জেতে দলটি।

আরও পড়ুন

এমএলএসে কীভাবে খেলা হয়

লিগ পর্বে ২৯টি দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে খেলে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের ১৩টি ও কানাডার দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ১৫টি দল খেলছে ইস্টার্ন কনফারেন্সে। ওয়েস্টার্ন কনফারেন্সে দল ১৪টি।

দলগুলো ১৭টি হোম ও ১৭টি অ্যাওয়েসহ মোট ৩৪টি করে ম্যাচ খেলবে। ইস্টার্ন কনফারেন্সের দলগুলো নিজেদের মধ্যে দুবার করে ও অন্য কনফারেন্সের ছয়টি দলের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলবে।

ওয়েস্টার্ন কনফারেন্সেও নিজেদের মধ্যে দুবার করে খেলতে তো হবেই, নিজ কনফারেন্সের দলের সঙ্গে একটি বা দুটি বাড়তি ম্যাচও খেলবে। অন্য কনফারেন্সের ৬টি বা ৭টি দলের সঙ্গে একটি করে ম্যাচ খেলে ওয়েস্টার্নের দলগুলো।

দুই কনফারেন্সের জন্য আলাদা পয়েন্ট টেবিল তো আছেই, দুই কনফারেন্স মিলিয়েও একটি টেবিল আছে। যার যার অংশের প্রথম ৯টি করে দল উঠবে প্লে-অফ পর্বে। আর সম্মিলিত টেবিলের শীর্ষ দল পায় সাপোটার্স শিল্ড।

কনফারেন্সের যার যার অংশের অষ্টম ও নবম দলগুলো ওয়াইল্ড কার্ড ম্যাচ খেলবে। জয়ী দুই দল যার যার অংশের শীর্ষ সাত দলের সঙ্গে যোগ দেবে। দুই অংশেই আটটি দল প্লে-অফের প্রথম রাউন্ডে বেস্ট অব থ্রি নকআউট ম্যাচে অংশ নেবে। এরপর কনফারেন্স সেমিফাইনাল ও কনফারেন্স ফাইনাল শেষে দুই অংশ থেকে দুই দল এমএলএস কাপ ফাইনালে উঠবে। সেই ফাইনাল শেষেই নির্ধারিত হবে চ্যাম্পিয়ন।

আরও পড়ুন