অ্যাস্টন ভিলাকে যেভাবে বদলে দিয়েছেন উনাই এমেরি
এ মৌসুমে অ্যাস্টন ভিলা যেন বদলে যাওয়া এক দল। গত মৌসুমে দলটি যখন ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে অবনমন অঞ্চলের আশপাশে ধুঁকছিল, তখন স্টিভেন জেরার্ডকে বাদ দিয়ে উনাই এমেরিকে কোচ বানায় ভিলা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দলকে আমূল বদলে দিয়েছেন এই স্প্যানিশ কোচ। গত মৌসুমে ৭ নম্বরে শেষ করার পর চলতি মৌসুমে ১৬ ম্যাচ শেষে বার্মিংহামের ক্লাবটির অবস্থান ৩ নম্বরে। ঘরের মাঠ ভিলা পার্কে পরপর দুই ম্যাচে গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি ও রানার্সআপ আর্সেনালকেও হারিয়েছে তারা। সব মিলিয়ে নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সময় পার করছে ক্লাবটি।
সঠিক খেলোয়াড় কেনা এবং সঠিক কৌশল তো রয়েছেই, পাশাপাশি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে মাঠের বাইরেও নানা উদ্যোগ নেন এমেরি। সবচেয়ে বেশি যে কাজ এমেরি করেছেন, তা হলো খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসী করা এবং তাঁদের ঐক্যবদ্ধ রাখা। এ লক্ষ্যে অ্যাস্টন ভিলার অনুশীলন মাঠে খেলোয়াড়দের দক্ষতা ও সামর্থ্য বাড়ানোর পাশাপাশি দলীয় সমন্বয় বাড়ানোর প্রতিও মনোযোগ দিতে দেখা গেছে। যা কিনা দলটির দুর্দান্ত ছন্দে থাকার অন্যতম কারণও।
এ ছাড়া কোচ হিসেবে এমেরির নিজেকে প্রস্তুত করার দিকগুলোও দারুণ। অ্যাস্টন ভিলার ব্যায়ামাগারে ট্রেডমিলে দৌড়ানোর সময় গান কিংবা পডকাস্ট শোনার পরিবর্তে এমেরি সময়টা ব্যয় করেন পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষের পারফরম্যান্সের রেকর্ডিং দেখে। সেগুলো দেখেই তিনি চেষ্টা করেন প্রতিপক্ষের খেলার ধরন বোঝার এবং তাদের দুর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করার। এরপর ভিডিও বিশ্লেষণ সেশনে এমেরি তাঁর শিষ্যদের কাছে নিজের অনুসন্ধান এবং গুরুত্বপূর্ণ বার্তাগুলো বুঝিয়ে দেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৩ মাস ধরে দলকে মূলত এভাবেই তৈরি করে আসছেন এমেরি। ছোট-বড় সব বিষয়ে তিনি আলো ফেলার চেষ্টা করেছেন, যা ক্লাবটিকে আমূল বদলে দিয়েছে। আর এই বদলে যাওয়ার প্রমাণ দলটির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও পয়েন্ট তালিকার দিকে তাকালেই পাওয়া যাবে।
অ্যাস্টন ভিলার এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পেছনে ওপরের কারণগুলো তো রয়েছেই, সঙ্গে আরও কিছু পরিবর্তন দলটিতে এনেছেন এমেরি। যেমন আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরা যাক। গত ফেব্রুয়ারিতে আর্সেনালের বিপক্ষে ৪-২ গোলে হারের পর এমেরি খেলোয়াড়দের সতর্ক করে বলেছেন, তাঁরা যেন একই ভুল বারবার না করেন। তাঁর কথা যে খেলোয়াড়েরা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন, সে প্রমাণ সর্বশেষ ম্যাচটিতেই পাওয়া গেছে। যেখানে দারুণ খেলে আর্সেনালকে ১-০ গোলে হারায় অ্যাস্টন ভিলা।
এর আগে ক্লাবে যোগ দেওয়ার আগে তিনি সব খেলোয়াড়কে নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র তৈরি করেন। যেখানে তিনি ব্যাকরুম স্টাফদের ক্লিপগুলোকে একত্র করার নির্দেশ দেন। যার মধ্য দিয়ে দলে আসা নতুন খেলোয়াড়দের বোঝার কাজটিও দারুণভাবে করেছেন এমেরি। প্রাক্–মৌসুমে খেলোয়াড়দের কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের ভেতর দিয়ে নিয়ে গেছেন এমেরি, যার প্রভাব মাঠের পারফরম্যান্সেও এখন দেখা যাচ্ছে।
এ ছাড়া খেলোয়াড়দের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের একটা ধারণারও জন্ম দিয়েছেন এই স্প্যানিশ কোচ। শুধু কোচের কাছ থেকেই নয়, দলের মালিকদের কাছ থেকেও দারুণ সমর্থন পেয়েছেন খেলোয়াড়েরা। দলকে উজ্জীবিত রাখতে ভূমিকা রাখছেন তাঁরাও। এমনকি দলের ভেতর সমন্বয়কে মজবুত করতে গ্রাউন্ড স্টাফদেরও খাওয়াতে নিয়ে গেছেন এমেরি। দলের এই উজ্জীবিত অবস্থার ভেতর সামগ্রিকভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নও সাধন করেছে ভিলা কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে দলীয় শক্তিতে একটি দলের বদলে যাওয়ার অনন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে অ্যাস্টন ভিলা, যার নেপথ্যে বড় ভূমিকা একজন উনাই এমেরির।