টাইব্রেকার জয়ের প্রস্তুতি যেভাবে নিয়েছে আর্জেন্টিনা
টাইব্রেকার শুটআউট ফুটবলে সম্ভবত সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত। ১২০ মিনিট ধরেও যার নিষ্পত্তি হয় না, টাইব্রেকারে তা ঠিক হয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মহিমায়। অনেকটাই লটারির মতো।
কিন্তু এই ‘লটারি’ জেতার জন্যও আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয় দলগুলোর। লুসাইলে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ সামনে রেখে আর্জেন্টিনাও টাইব্রেকারের প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিশ্বকাপ টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার সুখস্মৃতি আছে। ১৯৯০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকার জিতেছে আর্জেন্টিনা। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও টাইব্রেকার জিতেছে লাতিন আমেরিকার দলটি। আর ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারিয়েই উঠেছে ফাইনালে।
আছে বিষাদের স্মৃতিও। ২০০৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছে টাইব্রেকারে। আর বিশ্বকাপের বাইরে ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকা ফাইনালেও টাইব্রেকারে হেরেছে আর্জেন্টিনা। কাতার আজ কি অপেক্ষা করছে?
আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনির লক্ষ্য, টাইব্রেকারে যাওয়ার আগেই জয় তুলে নেওয়া। কিন্তু তা করতে না পারলে? এ জন্য ‘প্ল্যান বি’ হিসেবে পেনাল্টি শুটআউট অনুশীলন করেছে আর্জেন্টিনা দল। ম্যাচের পরিস্থিতি তৈরি করে এই অনুশীলন করেছেন মেসিরা। তবে সব সময়ই যে এই অনুশীলন কাজে লাগবে তা নয়। শেষ ষোলোয় মরক্কোর বিপক্ষে ১ হাজার পেনাল্টি অনুশীলন করেও বিশ্বকাপে টিকে থাকতে পারেনি স্পেন। যে পাবলো সারাবিয়া আগের ১৬টি পেনাল্টিতেই লক্ষ্যভেদ করেছেন, সেই তিনি-ই মরক্কোর বিপক্ষে পারলেন না! টাইব্রেকারে তাই ভাগ্যও বিমুখ থাকে অনেক সময়।
আর্জেন্টিনা দলের এবারের টাইব্রেকার নিয়ে প্রস্তুতিটা একটু আলাদা। একজন মনোবিদের সঙ্গে এ নিয়ে বসেছেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। স্নায়ুক্ষয়ী টাইব্রেকারে টিকে থাকতে মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন মার্তিনেজ। এ বিষয়ে তাঁকে সাহায্য করেছেন গোলকিপার কোচ মার্টিন তোকাল্লি ও ভিডিও অ্যানালিস্ট মাতিয়াস মানা। দুজনেই ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে কোচ হোর্হে সাম্পাওলির অধীনে ছিলেন।
লিওনেল স্কালোনি কোচ হয়ে আসার পর একবারই টাইব্রেকার শুটআউটের পরীক্ষা দিতে হয়েছে গোলকিপার মার্তিনেজকে। গত বছর অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকা সেমিফাইনালের টাইব্রেকারে কলম্বিয়ার তিন খেলোয়াড়ের পেনাল্টি রুখে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন অ্যাস্টন ভিলার এই গোলকিপার। এ ছাড়াও ৯০ মিনিটের মধ্যে এ পর্যন্ত তিনটি পেনাল্টির মুখোমুখি হয়ে দুবারই রুখে দিয়েছেন মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার হয়ে টাইব্রেকারে কারা শট নেবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। এমনকি লিওনেল মেসির পেনাল্টিতে শট নেওয়াও অনিশ্চিত। এবার বিশ্বকাপেই পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেছেন। গত বছর কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে কলম্বিয়ার জালে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন মেসি, লিয়ান্দ্রো পারাদেস ও লাওতারো মার্তিনেজ। রদ্রিগো দি পল মিস করেন।
আনহেল দি মারিয়া, পাপু গোমেজ ও পাওলো দিবালার পেনাল্টি নেওয়ার অভ্যাস আছে ক্লাব ফুটবলে। দিবালা অবশ্য এখনো কাতার বিশ্বকাপে মাঠে নামারই সুযোগ পাননি। গঞ্জালো মন্তিয়েল, এনজো ফার্নান্দেস, ম্যাক অ্যালিস্টার ও হুলিয়ান আলভারেজরাও পেনাল্টি নিয়েছেন। তবে স্কালোনি টাইব্রেকারে অভিজ্ঞদের ওপরই ভরসা রাখবেন, এমনটাই জানিয়েছে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস।’