দেউলিয়া হয়ে অপেশাদার ক্লাবে পরিণত ফরাসি লিগের ৬ বারের চ্যাম্পিয়নরা
পেছনে ১০৪ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। ৬ বার জিতেছে ফরাসি লিগ আঁ’র শিরোপাও। কিন্তু কোনো ইতিহাস কিংবা অর্জন ঠেকাতে পারল না ফরাসি ক্লাব বোর্দোর মহাবিপর্যয়। ৯০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেউলিয়া হয়ে অপেশাদার ক্লাবে পরিণত হয়েছে ঐতিহাসিক এই ক্লাব। এই সপ্তাহের শুরুতেই বোর্দোর পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়, ফরাসি ফুটবলের আর্থিক নজরদারি সংস্থা ডিএনজিজির মাধ্যমে তৃতীয় স্তরে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেবে তারা।
১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বোর্দো ফুটবল ক্লাব। এরপর ১৯৩৭ সালে প্রথমবারের মতো পেশাদার ক্লাবের মর্যাদা লাভ করে তারা। ১৯৪৯–৫০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো জিতে নেয় লিগ সেরার স্বীকৃতিও। পরবর্তী সময়ে আরও ৫ বার লিগ শিরোপা ঘরে তোলে তারা। যার সর্বশেষটি বোর্দো জিতেছিল ২০০৮–০৯ মৌসুমে।
তবে সব মিলিয়ে ক্লাবটি সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ২০১২–১৩ মৌসুমে। সেবার ফ্রেঞ্চ কাপ জিতেছিল তারা। কিন্তু এর পর থেকে মাঠে ও মাঠের বাইরে দুঃসময়ের বৃত্তে ঢুকে পড়ে ক্লাবটি। ২০২২ সালে দ্বিতীয় স্তরের লিগেও নেমে যায় তারা। আর এবার দেউলিয়া ও অপেশাদার হওয়ার মধ্য দিয়ে পৌঁছে গেছে তলানিতে।
জানা গেছে, নিজেদের হিসাবের খাতায় ভারসাম্য আনতে বোর্দোর প্রয়োজন ছিল ৪ কোটি ইউরো। এই অর্থের জন্য তারা লিভারপুলের মালিক ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ (এফএসজি) ও মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দেনদরবারও করেছে। কিন্তু কোনো জায়গা থেকে সুখবর পায়নি তারা।
এক বিবৃতিতে ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘প্রয়োজনীয় পুনর্গঠন সম্পন্ন করার জন্য মঙ্গলবার বোর্দোর বাণিজ্যিক আদালতে দেউলিয়া হওয়ার আবেদন করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ক্লাবকে পেশাদার মর্যাদাও ছাড়তে হয়েছে।’ কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্লাব কর্তৃপক্ষ যদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা ডিএনজিজিকে দেয় এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সেটা যদি প্রতিফলিত না হয়, তবে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে ক্লাবটিকে।
ক্লাবের বিতর্কিত মালিক জেরার্ড লোপেজের এ সিদ্ধান্তে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন শহরের মেয়র পিয়রে হারমিক। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, ‘জেরার্ড লোপেজের এ সিদ্ধান্ত আমাকে হতবাক করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা তিন বছরের মধ্যে আমাদের ক্লাবকে লিগ আঁ থেকে অপেশাদর স্তরে নামিয়ে দিয়েছে।’
বোর্দো শুধু ক্লাব হিসেবেই ঐতিহাসিক নয়, এখানে খেলে গেছেন বিশ্বসেরা অনেক তারকাও। যাঁদের মধ্যে জিনেদিন জিদান, বিক্সেনতে লিজারাজু ও ক্রিস্তোফ দুগারি অন্যতম। সাম্প্রতিক সময়ে রিয়াল মিডফিল্ডার অরেলিয়েঁ চুয়ামেনিও খেলেছেন এই ক্লাবে।
১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা লিজারাজু ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘এই ক্লাবকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের মতো আমিও ভয়ানক অসুস্থ বোধ করছি। যা ঘটছে, তা কয়েক বছরের বিপর্যস্ত ফুটবল ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফল।’