কমলাপুরে নতুন টার্ফ বসছে বলে থেমে আছে তৃণমূলের ফুটবল
ফিফার গোল প্রকল্পের অধীন ১০ বছর পর কমলাপুর স্টেডিয়ামে নতুন টার্ফ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে গত মাসে। তবে এখানে খেলা নেই পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে।
পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর বা চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ (বিসিএল), সিনিয়র ডিভিশন লিগ, মেয়েদের লিগসহ অনেক খেলাই হয় কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ, পাইওনিয়ার লিগ, ডেভেলপমেন্ট কাপ, একাডেমি কাপের কিছু ম্যাচের ভেন্যুও এটি।
মেয়েদের জাতীয় দল, ছেলে–মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল, বাফুফের এলিট একাডেমি, বিসিএলের ক্লাবসহ তৃণমূলের বিভিন্ন ক্লাবের অনুশীলনও এখানেই হয়। মাঠ কখনো ফাঁকা থাকে না।
এই অতি ব্যবহারেই বছর পাঁচেকের মধ্যেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল ফিফার অর্থায়নে ২০১৫ সালে স্থাপিত টার্ফটি। গত কয়েক বছর অনেক খেলোয়াড়ের চোটের কারণও হয়েছে তা। অবশেষে টার্ফটি তুলে ফেলা হয়েছে। মাঠের এক পাশে যা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এখন। মাঠের মধ্যে জায়গায় জায়গায় টার্ফের রাবারের দানার স্তূপ। গতকাল নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে জানা গেল, ছয়-সাত দিন ধরে কাজ বন্ধ। ১৬ জানুয়ারি যা আবার শুরু হওয়ার কথা।
মাঠে না হয় কাজ চলছে। কিন্তু ভিআইপি বক্সসহ বিভিন্ন কক্ষের যা হাল, দেখলে মনে হবে না এই স্টেডিয়ামের কোনো ‘মালিক’ আছে। তিনতলায় বাফুফের এলিট একাডেমির ছেলেদের আবাসিক ক্যাম্প এখন বন্ধ। আর দোতলায় কক্ষগুলো ভাঙা হাটের মতো। অনেক আসবাব ভেঙে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে, কোথাও কোথাও স্তূপ হয়ে আছে। অযত্ন ও অবহেলার ছাপ সব জায়গায়। ধুলাবালুতে একাকার কক্ষগুলো। দেখার যেন কেউ নেই।
খেলা না থাকায় ব্যস্ততা হারিয়ে কমলাপুর স্টেডিয়াম এখন নীরব। নতুন টার্ফ স্থাপনে দুই-তিন মাসের বেশি লাগার কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে কোনো স্থাপনার সংস্কার সময়মতো শুরু আর শেষ হওয়ার নজির বিরল। ফলে কমলাপুরের মাঠ নতুন চেহারা নিতে কত দিন লাগে, কে জানে!
জুলাই আন্দোলনের সময় সিনিয়র ডিভিশন লিগ চলছিল এ মাঠে। ৩ আগস্ট এই স্টেডিয়ামে সর্বশেষ খেলা হয় সিনিয়র ডিভিশন লিগের। ১৮টি দলের সিঙ্গল লিগ ভিত্তিক সিনিয়র ডিভিশনের ৬ রাউন্ড শেষ হয়েছিল তখন পর্যন্ত। সপ্তম রাউন্ডের তিন-চারটা ম্যাচও হয়েছে। নভেম্বরের শুরুতে বাফুফের নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন লিগ কমিটি প্রথম সভাতেই ওই লিগটা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। মাঠ না থাকা, ক্লাবগুলোর অনীহা ইত্যাদি কারণে অমন সিদ্ধান্ত।
কমলাপুরে নতুন টার্ফ বসলে এখানে সিনিয়র ডিভিশন লিগ ও বিসিএল হওয়ার কথা। বিসিএলের জন্য ক্লাব লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া চলছে। ১৪টি দল আবেদন করেছে। ৮-৯টি ক্লাব তা পেতে পারে। বিসিএল-সিনিয়র ডিভিশন শেষে নিচের দিকের লিগগুলো হতে পারে কমলাপুরে। তবে এরই মধ্যে সেশনজটে পড়ে গেছে ঘরোয়া ফুটবল।
এ জন্য মাঠ সমস্যাকে দায়ী করছেন ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটির প্রধান ও বাফুফের সহসভাপতি সাব্বির আহমেদ আরেফ। তাঁর কথা, ‘খেলা দেব যে মাঠ কোথায়? মাঠই আমাদের বিরাট সমস্যা। তবে আশার কথা, কমলাপুরের টার্ফটা ঢাকা বিমানবন্দরে চলে এসেছে। এখন এটি শুল্ক দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হবে। বাফুফে সভাপতি চেষ্টা করছেন শুল্কমুক্ত করতে। টার্ফ বসে গেলেই আমরা খেলা শুরু করব। দ্রুত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পেতেও আমরা চাপ দিচ্ছি।’
কমলাপুর স্টেডিয়াম আবার ঠিকঠাক হতে কত দিন লাগবে, তা পরিষ্কার বলতে পারছে না সাব্বির আহমেদ, ‘রোজার আগে হবে না, এটা বলাই যায়। ঈদের পর (এপ্রিলে) হয়তো আমরা খেলা শুরু করতে পারব কমলাপুরে।’ এর আগে বিকল্প মাঠ খুঁজে খেলা শুরু করা যায় না? ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটির প্রধানের ভাষ্য, ‘বিকল্প ব্যবস্থায় যেতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি সিটি করপোরেশন থেকে কোনো মাঠ ১০-১৫ বছরের জন্য লিজ নিতে।’
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৪২ মাস ধরে ম্যারাথন সংস্কার চলছে। কবে শেষ হবে, কেউ জানে না। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলা হলেও আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে সেই সময়। বিকল্প হিসেবে ঢাকার বাইরে না হয় ছেলেদের প্রিমিয়ার লিগটা চালিয়ে নিচ্ছে বাফুফে, আন্তর্জাতিক ম্যাচ করছে বসুন্ধরার মাঠে, কিন্তু কমলাপুর শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের বিকল্প নেই বাফুফের হাতে। এই স্টেডিয়াম খেলার অবস্থায় না থাকলে তৃণমূল ফুটবলের হৃৎস্পন্দনই থেমে যায়। কবে প্রাণ ফিরবে এই কমলাপুর স্টেডিয়ামের?