‘বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলকিপার’ যাচ্ছেন লিভারপুলে
গুঞ্জনটি কয়েক দিন ধরেই বাতাসে ভাসছিল। শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্যি হলো!
জর্জিয়ান গোলকিপার গিওর্গি মামারদাশভিলিকে দলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে লিভারপুল। গতকাল তাঁকে সই করানোর ব্যাপারে সম্মত হওয়ার খবর জানিয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। নতুন কোচ আর্নে স্লটের অধীনে লিভারপুল এই প্রথম কোনো খেলোয়াড়কে দলে টানল। সেটাও যৌথভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলকিপার! ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাব অনুযায়ী পর্তুগালের গোলকিপার দিয়োগো কস্তা ও মামারদাশভিলি এখন বাজারমূল্যে যৌথভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলকিপার। দুজনের বাজারমূল্যই সমান ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো।
কিন্তু লিভারপুল এই বাজারমূল্যের চেয়ে কমে পেয়েছে মামারদাশভিলিকে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দলবদলের এই মৌসুমে প্রথম খেলোয়াড়টি কিনতে ৩ কোটি ইউরো দেবে লিভারপুল। এর পাশাপাশি অ্যাড-অনস হিসেবে দিতে হবে আরও ৫০ লাখ ইউরো। সব মিলিয়ে সাড়ে ৩ কোটি ইউরো খরচ হবে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির।
তবে ২৩ বছর বয়সী এ গোলকিপারের লিভারপুলে যোগ দেওয়া নির্ভর করছে ইংল্যান্ডে তাঁর ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া এবং আন্তর্জাতিক ছাড়পত্রের ওপর, যেটায় কোনো সমস্যা না হওয়াই স্বাভাবিক। আর ভ্যালেন্সিয়ায় এই মৌসুমটা থেকে ২০২৫-২৬ মৌসুমে লিভারপুলে যোগ দেবেন মামারদাশভিলি। লিভারপুলের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গিওর্গি মামারদাশভিলির দলবদলের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে লিভারপুল। এখন ওয়ার্ক পারমিট এবং আন্তর্জাতিক ছাড়পত্র পাওয়া বাকি। ২৩ বছর বয়সী এ গোলকিপার আগামী মৌসুমে মার্সিসাইডে আসার আগে চলতি মৌসুমের বাকি সময় স্পেনে “লস চে”দের (ভ্যালেন্সিয়া) সঙ্গেই থাকবেন।’
ব্রাজিলের আলিসন বেকার এখনো লিভারপুলের প্রথম পছন্দের গোলকিপার। তাঁর পাশাপাশি আইরিশ গোলকিপার কেভিন কেলাহারও আছেন। কিন্তু মামারদাশভিলিকে লিভারপুলের কেনার অর্থ হলো তাঁরা ভবিষ্যতের কথা ভাবছে। আগামী অক্টোবরে ৩২ বছরে পা রাখতে যাওয়া আলিসনের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁর সম্মতি নিয়েই মামারদাশভিলিকে কেনার ব্যাপারে এগিয়েছে লিভারপুল। সেক্ষেত্রে কেলাহারের ক্লাবটি ছাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মামারদাশভিলিকে সম্ভবত আলিসনের স্থলাভিষিক্ত করার কথা ভাবছে লিভারপুল। ব্রাজিলিয়ান গোলকিপারের সঙ্গে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে এখনো দুই বছর বাকি। এর মধ্যে মামারদাশভিলিকে তৈরি করতে চায় লিভারপুল।
লিভারপুলের সংবাদমাধ্যম ‘লিভারপুল ইকো’কে আলিসন এর আগে বলেছেন, ‘আমার মতে ক্লাবের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। আমরা এখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকব না। আমার মতে এটা ভালো পরিকল্পনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপারটা (মামারদাশভিলি) আসার আগেই আমি জানতাম। এটা আমার জন্য ভালো বার্তা। কারণ ক্লাব আমার ভাবনাকে গুরুত্ব দেয়।’
গত জুলাইয়ে শেষ হওয়া ইউরোয় দুর্দান্ত খেলে নজর কেড়েছিলেন মামারদাশভিলি। শেষ ষোলোয় স্পেনের কাছে হেরে বিদায় নেওয়ার আগে জর্জিয়ার চারটি ম্যাচে পোস্ট সামলেছেন। ২০২১ সালে ভ্যালেন্সিয়ায় যোগ দিয়ে গত দুই মৌসুমে লা লিগায় একটি ম্যাচ বাদে ক্লাবটির সব ম্যাচেই প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছেন। এ মৌসুমে বার্সেলোনা ও সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ভ্যালেন্সিয়ার হারের দুই ম্যাচেও একাদশে ছিলেন মামারদাশভিলি।
৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই গোলকিপারের জন্ম জর্জিয়া তিবিলিসিতে। সেখানকার খ্যাতিমান ক্লাব দিনামো তিবিলিসির মূল দলে খেলাই ছিল মামারদাশভিলির শৈশবের স্বপ্ন। বাড়ির উঠোনে অনুশীলন করিয়ে তাঁকে গোলকিপার হিসেবে বড় করে তুলেছেন বাবা দাভিত মামারদাশভিলি। তিনি নিজেও ছিলেন পেশাদার গোলকিপার। সন্তানকে নিয়ে ফুটবল ছাড়া আর কোনো পরিকল্পনা ছিল না তাঁর। কিন্তু ২০১২ সালে দিনামো তিবিলিসির বয়সভিত্তিক দলে যোগও দিলেও মামারদাশভিলির স্বপ্নপূরণ হয়নি। ক্লাবটি কখনোই তাঁকে মূল দলে খেলায়নি। ধারে পাঠায়। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী লোকোমোটিভ তিবিলিসিতে ধারে খেলার সময়ই প্রথম নজর কাড়েন মামারদাশভিলি।
ম্যানুয়েল নয়্যারকে আদর্শ মানা মামারদাশভিলি ২০২০ সালে ইউরোপা লিগে নজর কাড়েন। সেবার গ্রানাদার বিপক্ষে লোকোমোটিভের ম্যাচে গ্যালারিতে ভ্যালেন্সিয়ার স্কাউটেরাও ছিলেন। ৯ মাস পরই মামারদাশভিলির ঠিকানা হয় মেস্তায়া (ভ্যালেন্সিয়ার মাঠ)।
মানসিকভাবে ভীষণ শক্তিশালী মামারদাশভিলিকে ভ্যালেন্সিয়ায় প্রস্তুত করেছেন লিভারপুলেরই সাবেক গোলকিপার হোসে ওচোতোরেনা। ধীরে ধীরে ২৩ বছর বয়সী মামারদাশভিলি নিজেকে ইউরোপের অন্যতম সেরা তরুণ গোলকিপার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জন্মভূমি জর্জিয়ায় তাঁকে এবং তাঁরই জাতীয় দল সতীর্থ নাপোলি স্ট্রাইকার খিচা কাভারাস্কাইয়াকে অনেকেই আদর্শের চোখে দেখেন।
তিবিলিসির খোনিতে (জন্মস্থান) মামারদাশভিলির একটি ভাস্কর্য রয়েছে। জাতীয় দলের পতাকা সংবলিত সেই ভাস্কর্যের পাশে লেখা ‘দ্য গ্রেট জর্জিয়ান ওয়াল।’ গ্রিসের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউট ঠেকিয়ে জর্জিয়াকে ২০২৪ ইউরোর মূল পর্বে তোলার পর এবং মূল পর্বে চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সের পর জর্জিয়ার বাতুমি অঞ্চলেও মামারদাশভিলির একটি প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। তিনি কতটা উঁচুমানের গোলকিপার সে বিষয়ে ‘দ্য অ্যাথলেটিক’কে বলেছেন জর্জিয়া জাতীয় দলের সহকারী কোচ ডেভিড ওয়েব, ‘খিচা সোনার ছেলে, তবে মামারদাশভিলিও এখন পিছিয়ে নেই। সে লিভারপুলে যোগ দিচ্ছে।’