বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দল নেপাল থেকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এসেছে এক মাসও হয়নি। কিন্তু একই দলকে নিয়ে আসন্ন এএফসি অনূর্ধ্ব–২০ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে তেমন কোনো আশাই দেখছেন না কোচ মারুফুল হক। ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল কতটা ভালো করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান দেশের একমাত্র উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ।
দল নিয়ে আশার কথা শোনাতে না পারা মারুফুল মূলত ক্ষুব্ধ। আজ বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কণ্ঠে ছিল অভিমান ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ভিয়েতনামগামী অনূর্ধ্ব–২০ দলটিকে মনমতো প্রস্তুত করতে পারেননি জানিয়ে বলেছেন, ‘সব দোষ আমারই। যেহেতু আমি দলের হেড কোচ, আমি হয়তো তাদের সেভাবে বোঝাতে সক্ষম হইনি। আমার প্রয়োজনীয়তা, টিমের প্রয়োজনীয়তা আর টুর্নামেন্টের গুরুত্ব আমি ঠিকমতো বোঝাতে পারিনি কাউকে, এটাই আমার ব্যর্থতা।’
মারুফুলের কণ্ঠে এমন সুরের পেছনে আছে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে খেলোয়াড় ছাড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব। ব্যাপারটা গড়িয়েছে অনেকদূরই। সোমবার কিংস কর্তৃপক্ষ মারুফুল হকের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ বাফুফেকে একটি চিঠি দিয়েছিল।
সেখানে ক্লাব থেকে ক্যাম্পে পাঠানো ২ ফুটবলারকে মারুফুল কেন অনুশীলনে যোগ দিতে দেননি, এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কিংস। মারুফুল কোচ থাকলে ভবিষ্যতে কিংস জাতীয় দল, নারী দল কিংবা যেকোনো বয়সভিত্তিক দলে কোনো খেলোয়াড় না দেওয়ারও হুমকি দেয়। মারুফুল সেদিনই তিন পাতার এক চিঠিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে কিংসের বিরুদ্ধে তাঁর সম্মানহানির অভিযোগও আনেন। আইনি ব্যবস্থার হুমকিও দেন।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে অনূর্ধ্ব–২০ দল নিয়ে ভিয়েতনামে যাচ্ছে মারুফুল। সেখানে এএফসি অনূর্ধ্ব–২০ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ খেলবে স্বাগতিক ভিয়েতনাম, সিরিয়া, ভুটান ও গুয়ামের বিপক্ষে। ২১ সেপ্টেম্বর শক্তিশালী সিরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। অথচ দল আজ রাতে রওনা দিয়ে হ্যানয় পৌঁছাবে আগামীকাল দুপুরে। একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামার আগে যতটুকু অনুশীলন প্রয়োজন, ততটুকুও পাচ্ছে না দল।
সংবাদ সম্মেলে এ নিয়ে আক্ষেপ করেছেন কোচ, ‘প্রথম ম্যাচ ২১ সেপ্টেম্বর। প্রতিটা টিমের ম্যাচের আগের দিন একটা গুরুত্বপূর্ণ সেশন থাকে। সেই দিন আমরা ট্রেনিং করতে পারব। হয়তো ম্যাচের আগের দিন ১ ঘণ্টা ট্রেনিং করব। এসব কিছু মিলিয়ে আমাদের যে টোটাল প্ল্যান হওয়ার দরকার ছিল, আমি সেটা করতে পারিনি।’
২৮ আগস্ট অনূর্ধ্ব–২০ দল নেপালে সাফ শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। এরপর দেশে ফিরে এই দলটিরই এএফসি টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু মারুফুলের অভিযোগ, জাতীয় ফুটবল দল ভুটানে খেলতে যাওয়ায় তাঁর দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সঙ্গে বসুন্ধরা কিংসের অসহযোগিতার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
কিংসের সঙ্গে তাদের মাঠে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ যে তাঁর দলের সর্বনাশ করেছে, সেটিও আজকের সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন মারুফুল। সোমবার নিজের প্রতিবাদপত্রেও সে দিনের ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন মারুফুল, ‘৫ তারিখ বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে আমাদের প্রস্তুতি ম্যাচ নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর শুরু হয়। এ জন্য আমাকে দলের খেলোয়াড়দের বাড়তি সময় ওয়ার্মআপ করাতে হয়। সেই ম্যাচে আমার দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় রুস্তম দুখু মিয়ার মিনিসকাস ছিঁড়ে যায়। ওর অস্ত্রোপচার লাগবে। ওকে নিয়ে ভিয়েতনামে আমার বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। এটা একটা বড় ক্ষতি।’
সাফ আর এশিয়ান পর্যায়ের টুর্নামেন্টের পার্থক্য সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন মারুফুল, ‘আমরা ১৫ দিনের অনুশীলন করে সাফ জিতেছিলাম। কিন্তু এবার যাচ্ছি এএফসির টুর্নামেন্ট খেলতে। এখানে সিরিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দল থাকবে। এটা ফুটবল, ক্রিকেট নয় বা ব্যক্তিগত কোনো খেলা নয় যে সবাই এসে ম্যাচের আগে যোগ দেবে। আর খেলে ফেলবে। ফুটবলে একটা কম্বিনেশনের প্রয়োজন আছে। এ জন্য ৭ দিনও যথেষ্ট নয় বলে আমি মনে করি। সেখানে আমি পুরো দল পেয়েছি মাত্র ৩ দিন। আমরা আগে ছিলাম সাফ অঞ্চলে, এখন এশিয়ান পর্যায়ে যাচ্ছি। সেখানে (খেলোয়াড়দের) প্রস্তুতির জন্য যতটুকু সময় দেওয়ার দরকার ছিল, ততটুকু আমরা দিইনি।’
২১ সেপ্টেমর সিরিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পর এক দিন বিরতি দিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর খেলা গুয়ামের বিপক্ষে। ভিয়েতনাম ও ভুটানের বিপক্ষে পরের দুটি ম্যাচ যথাক্রমে ২৭ ও ২৯ সেপ্টেম্বর। এএফসি অনূর্ধ্ব–২০ বাছাইপর্বে ১০ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও ৬ সেরা রানার্সআপ খেলবে চূড়ান্ত পর্বে।