এবার লিভারপুল–সিটি–আর্সেনালের ত্রিমুখী লড়াই
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গত রাতে লুটন টাউনের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ৪–১ গোলে জিতেছে লিভারপুল। ঘুরে দাঁড়ানো এ জয়ে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। গত রাতের আগপর্যন্ত ২৫ ম্যাচ শেষে লিভারপুলের পয়েন্ট ছিল ৫৭। সমান ম্যাচ থেকে ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ৫৬, আর্সেনালের ৫৫।
লিভারপুল কাল লুটনকে হারিয়ে সিটির চেয়ে ৪ এবং আর্সেনালের চেয়ে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে গেলেও তাত্ত্বিকভাবে ব্যবধান আসলে যা ছিল তা-ই আছে। কারণ, লিভারপুলের ম্যাচ এখন একটি বেশি। এই ম্যাচটা বাদ দিলে গত রাত পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের ১ ও ৩ নম্বর দলের পয়েন্টের ব্যবধান ছিল মাত্র ২। ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জমজমাট লড়াইটা যে ইংল্যান্ডেই হচ্ছে এবার, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ফ্রান্সে শীর্ষে থাকা পিএসজি এগিয়ে ১৩ পয়েন্টে, ইতালিতে ইন্টার মিলান জুভেন্টাসের চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে ১ নম্বরে, বুন্দেসলিগায় লেভারকুসেনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট পিছিয়ে দুইয়ে থাকা বায়ার্ন মিউনিখ, স্পেনে দীর্ঘদিন শীর্ষে থাকা জিরোনা এখন রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে নেমে গেছে ২ নম্বরে। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের বাকি চারটিতে যখন এ রকম একক দাপট চলছে, সেখানে ইংল্যান্ডে চলছে কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান অবস্থা।
এমনিতেও মনে করা হয়, ইউরোপের সবচেয়ে জমজমাট লিগ হয় ইংল্যান্ডে। যদিও পেপ গার্দিওলা ম্যানচেস্টার সিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর সর্বশেষ ছয় মৌসুমে পাঁচবার প্রিমিয়ার লিগ জিতে সিটি এটাকে প্রায় এক ঘোড়ার দৌড়ই বানিয়ে ফেলেছে। তবে এই পাঁচবারের মধ্যে দুবার সিটি লিগ জিতেছে লিভারপুলের চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে। সব মিলিয়েও সর্বশেষ ছয় মৌসুমে আসলে সিটির মূল প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিল লিভারপুলই, যারা ৩০ বছর পর লিগ জেতে ২০১৯-২০ মৌসুমে। শুধু গত মৌসুমে লিভারপুলের জায়গাটা নিয়েছিল আর্সেনাল।
তবে ৩৮ সপ্তাহের মধ্যে ২৭ সপ্তাহ শীর্ষে থেকেও শেষ পর্যন্ত লিগ জিততে পারেনি গানাররা। শেষ দিকে দুর্দান্ত পারফর্ম করে লিগ জিতে নেয় সিটি। এবার লিগে লড়াইটা অন্য মাত্রা পেয়েছে, কারণ, এবার আর দ্বিমুখী নয়, শিরোপার জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে তিন দলের। ২৫টি করে ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরও লিভারপুল, সিটি বা আর্সেনাল—কোনো দলকেই পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই।
প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ এমন জমজমাট লড়াই দেখা গিয়েছিল ২০১৫-১৬ মৌসুমে। ২৬ ম্যাচ শেষে সেবার শীর্ষে থাকা লেস্টার সিটির চেয়ে ২ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল তিনে থাকা আর্সেনাল। এমনকি মৌসুমের এ পর্যায়ে পয়েন্টের এত কম পার্থক্য প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসেই সব মিলিয়ে দেখা গেছে ৭ বার, এ শতকে মাত্র ৪ বার!
মৌসুমজুড়ে সপ্তাহ শেষে শীর্ষে থাকার লড়াইয়ে চোখ রাখলেও বোঝা যাবে কেন এবারের মৌসুমটি আলাদা। চলতি মৌসুমে গতকাল রাত পর্যন্ত ৯ সপ্তাহ লিগের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে ছিল সিটি, লিভারপুল ছিল ৬ সপ্তাহ এবং ৫ সপ্তাহ আর্সেনাল। অন্য লিগগুলোতে তাই পিএসজি, ইন্টার মিলান, লেভারকুসেন বা রিয়াল মাদ্রিদের লিগ জয়ের পক্ষে যতটা সহজে বাজি ধরা যাচ্ছে, প্রিমিয়ার লিগে সেটা করা যাচ্ছে না মোটেও। কোন দলের পক্ষে ধরবেন?
ফুটবল পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান অপ্টার সুপার কম্পিউটার অবশ্য তারপরও সিটিকেই এগিয়ে রাখছে। প্রতি সপ্তাহেই সুপার কম্পিউটারের অনুমান হালনাগাদ করে অপ্টা। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২৫টি করে ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সুপারকম্পিটার বলেছে, সিটির আবারও লিগ জেতার সম্ভাবনা ৪৯ ভাগ, লিভারপুলের সম্ভাবনা ৩৬ ভাগ, আর্সেনালের ১৪ ভাগ।
তবে ক্রীড়া পরিসংখ্যান গবেষণার আরেক প্রতিষ্ঠান গ্রেসনোট বলছে অন্য কথা। তাদের হিসাবে লিভারপুলের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ৪৪ ভাগ, সিটির ৪২ ভাগ, আর্সেনালের ১৪ ভাগ।
এ সবই আসলে কাগুজে হিসাব-নিকাশ। মাঠের খেলা সব সময় এসব তথ্য-উপাত্তের সূত্র মেনে চলে না। আর চলে না বলেই তো ফুটবল এত রোমাঞ্চকর!