চলতি মৌসুমে শীর্ষ লিগে সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া খেলোয়াড় কারা
ফুটবলের সঙ্গে অর্থের নিবিড় যোগ রয়েছে। বিশেষ করে ক্লাব ফুটবলে অর্থই অনেক ক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে। খেলোয়াড়দের ক্লাব বদলানোর পেছনেও বড় ভূমিকা রাখছে অর্থ। যদি সেটা না হতো, তবে অখ্যাত সৌদি প্রো লিগে ফুটবলের মহাতারকারা ভিড় করতেন না। আর অর্থ নিয়ে এমন মাতামাতির কারণে দর্শকেরাও বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রিয় খেলোয়াড়দের কে কেমন বেতন পান, তা নিয়েও কৌতূহল থাকে তাঁদের।
চলতি মৌসুমে কোন লিগে সপ্তাহে কে সর্বোচ্চ বেতন পান, সেটি ফুটবলারদের ডেটা বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ‘ক্যাপোলজি’র বরাত দিয়ে তুলে ধরেছে ক্রীড়াভিত্তিক পোর্টাল ‘গিভমিস্পোর্ট’। যেখানে ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর সঙ্গে সৌদি প্রো লিগ এবং মেজর লিগ সকারকে (এমএলএস) অন্তর্ভুক্ত করেছে তারা। এখানে ইউরোপিয়ান শীর্ষ ৫ লিগের সঙ্গে সৌদি লিগ এবং এমএলএসে কারা সর্বোচ্চ বেতন পান, তা তুলে ধরা হলো।
প্রিমিয়ার লিগ, কেভিন ডি ব্রুইনা: ৪ লাখ পাউন্ড
বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারদের একজন কেভিন ডি ব্রুইনা। পেপ গার্দিওলার অপ্রতিরোধ্য ম্যানচেস্টার সিটিতে তিনি কাজ করেন ‘নিউক্লিয়াস’ হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রিমিয়ার লিগে সিটির আধিপত্যেও বড় ভূমিকা ছিল ডি ব্রুইনার। গত মৌসুমে সিটির ট্রেবল জয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। তাই প্রিমিয়ার লিগে ডি ব্রুইনার সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। বর্তমানে সিটির কাছ থেকে সপ্তাহে ৪ লাখ পাউন্ড বেতন পান ডি ব্রুইনা। তাঁর কাছাকাছি আছেন সতীর্থ আর্লিং হলান্ড এবং লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ। হলান্ড সিটির কাছ থেকে পান সপ্তাহপ্রতি ৩ লাখ ৭৫ হাজার পাউন্ড আর সালাহ লিভারপুলের কাছ থেকে পান ৩ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড।
লা লিগা, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং: ৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮২ পাউন্ড
আয়াক্সে খেলেই মূলত আগমনী বার্তা দেন ডাচ তারকা ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং। ২০১৮ সালে আয়াক্সের চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে খেলাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। এরপর এই মিডফিল্ডারের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে একাধিক ক্লাব। তবে সবাইকে পেছনে ফেলে ডি ইয়ংকে নিয়ে আসে বার্সেলোনা। যোগ দেওয়ার পর থেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও হয়ে ওঠেন তিনি। বার্সার কাছ থেকে চোখধাঁধানো বেতনও পাচ্ছেন ডি ইয়ং। সপ্তাহপ্রতি তিনি পান ৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮২ পাউন্ড। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন তাঁর ক্লাব সতীর্থ রবার্ট লেভানডফস্কি। পোলিশ স্ট্রাইকার বেতন পান ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬০৫ পাউন্ড।
বুন্দেসলিগা, হ্যারি কেইন: ৪ লাখ ১০ হাজার ৪৫৫ পাউন্ড
তিনি ছিলেন টটেনহামের ঘরের ছেলে। তাঁকে ছাড়ার কোনো পরিকল্পনাও ছিল না প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটির। কিন্তু টটেনহামকে বিদায় জানিয়ে শেষ পর্যন্ত গত গ্রীষ্মের দলবদলে বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেন হ্যারি কেইন। মূলত রবার্ট লেভানডফস্কির বিকল্প হিসেবে কেইনকে নিয়ে এসেছে বায়ার্ন। বুন্দেসলিগার ক্লাবটিতে যোগ দিয়ে প্রথম মৌসুমেই নিজেকে চেনাচ্ছেন কেইন। এর মধ্যে ভেঙেছেন একাধিক রেকর্ডও। বিপরীতে কেইনকে উচ্চ বেতনও দিচ্ছে বায়ার্ন। সপ্তাহপ্রতি যা ৪ লাখ ১০ হাজার ৪৫৫ পাউন্ড। তাঁর কাছাকাছি বেতন পান কেবল বায়ার্ন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার, যিনি সপ্তাহপ্রতি পান ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৮২ পাউন্ড।
লিগ আঁ, কিলিয়ান এমবাপ্পে: ১১ লাখ ৮২ হাজার ১১০ পাউন্ড
ফরাসি লিগ আঁতে সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড়টি যে কিলিয়ান এমবাপ্পে হবেন, তা বোধ হয় আলাদা করে না বললেও চলে। এই ফরোয়ার্ডের রিয়াল মাদ্রিদ যাওয়া ঠেকাতে তাঁকে বড় অঙ্কের বেতন দিয়ে আসছে পিএসজি। ইউরোপিয়ান লিগে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়ও এমবাপ্পে। সপ্তাহপ্রতি যিনি প্যারিসের ক্লাবটির কাছ থেকে পান ১১ লাখ ৮২ হাজার ১১০ পাউন্ড। শোনা যাচ্ছে, গ্রীষ্মের দলবদলে রিয়ালে গেলে এই অঙ্ক অনেক নিচে নেমে আসতে পারে। এমনকি লিগ আঁতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া উসমান দেম্বেলেও এমবাপ্পের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন। পিএসজি দেম্বেলেকে দিচ্ছে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৪ পাউন্ড।
সিরি ‘আ’, দুসান ভ্লাহোভিচ: ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ পাউন্ড
সিরি ‘আ’তে সবচেয়ে বেশি বেতন পান দুসান ভ্লাহোভিচ। ফিওরেন্তিনায় আলো ছড়ানোর পর ২০২২ সালে তাঁকে নিয়ে আসে ‘তুরিনের বুড়ি’রা। তাঁকে ভাবা হচ্ছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দীর্ঘমেয়াদি বিকল্প হিসেবে। যদিও যে প্রত্যাশা নিয়ে তাঁকে আনা হয়েছে, তা পূরণ হয়েছে সামান্য। এরপরও সিরি ‘আ’তে সবচেয়ে বেশি বেতনধারী খেলোয়াড় ভ্লাহোভিচ। জুভেন্টাস তাঁকে দেয় সপ্তাহে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ পাউন্ড। নাপোলিতে তাঁর প্রায় কাছাকাছি বেতন পান ভিক্টর ওসিমেন। এই নাইজেরিয়ান পান ২ লাখ ১০ হাজার ৪৮১ পাউন্ড।
সৌদি লিগ, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ৩২ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪০ পাউন্ড
গত বছরের শুরুতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে আল নাসরে গিয়ে সেখানকার ফুটবল বদলে দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এই পর্তুগিজ মহাতারকাকে আল নাসর যে বেতন দিচ্ছে, তা–ও চোখ কপালে ওঠার মতো। সৌদি ক্লাবটি রোনালদোকে সপ্তাহপ্রতি দিচ্ছে ৩২ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪০ পাউন্ড। ইউরোপিয়ান শীর্ষ পাঁচ লিগের সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া খেলোয়াড়দের সম্মিলিত বেতনও এর চেয়ে কম। এই লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া করিম বেনজেমা ও নেইমারও ইউরোপের শীর্ষ বেতনধারীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। বেনজেমাকে আল ইত্তিহাদ দিচ্ছে সপ্তাহপ্রতি ১৬ লাখ ৪১ হাজার ৮২০ পাউন্ড। নেইমারও বেনজেমার সমান বেতন পান আল হিলালের কাছ থেকে।
এমএলএস, লিওনেল মেসি: ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৩০ পাউন্ড
এ তালিকায় বেতনে সবার ওপরে থাকতে পারতেন লিওনেল মেসি। তখন অবশ্য তাঁর ক্লাব ইন্টার মায়ামির বদলে হতো আল হিলাল। আর লিগ মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) পরিবর্তে হতো সৌদি প্রো লিগ। তবে বিপুল অর্থের হাতছানি ভুলে মেসি আল হিলালকে ফিরিয়ে দিয়ে যোগ দেন ইন্টার মায়ামিতে। যেখানে তাঁর বেতনও বাকিদের তুলনায় অনেক কম।
ইন্টার মায়ামি মেসিকে সপ্তাহপ্রতি ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৩০ পাউন্ড বেতন দেয়। তবে বেতনের পাশাপাশি স্পনসরশিপ চুক্তি এবং অন্যান্য খাত থেকেও টাকা পেয়ে থাকেন মেসি। আর্জেন্টাইন মহাতারকার পর এমএলএসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতনধারী ইতালিয়ান তারকা লরেনৎসো ইনসিনিয়ের, যিনি টরন্টো এফসিতে পান ১ লাখ ১৪ হাজার ১৪৪ পাউন্ড।