প্রিমিয়ার লিগের সব দল চায় সিটি শাস্তি পাক, বলেছেন গার্দিওলা

ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলাএএফপি

ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক নীতিমালা ভঙ্গের ১১৫টি অভিযোগ গঠন করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। আগামী সোমবার এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শুরু হবে। এ নিয়ে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা বলেছেন, আর্থিক নীতিমালা ভাঙার দায়ে সিটি শাস্তি পাক, এটা দেখতে চায় প্রিমিয়ার লিগে ক্লাবটির প্রতিদ্বন্দ্বীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ মামলার শুনানি শুরু হতে যাওয়ায় খুশিও হয়েছেন গার্দিওলা।

আরও পড়ুন

চার বছর তদন্তের পর গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষের ওপর দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রিমিয়ার লিগের এসব আর্থিক নিয়ম ভেঙেছে সিটি।

প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ চারবারের চ্যাম্পিয়নরা জোরালোভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে এবং এ মামলায় তাদের পক্ষে ‘অকাট্য প্রমাণ’ আছে বলেও দাবি করেছে।

লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস বরাবরই সিটি ও পিএসজির বড় সমালোচক। সিটির মালিক সিটি ফুটবল গ্রুপের প্রধান আবুধাবি রাজপরিবারের সদস্য শেখ মনসুর। ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজিও কাতারের ধনকুবের নাসের আল খেলাইফির মালিকানাধীন কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের অধীনে। তেবাস দাবি করে এসেছেন, এ দুটি ক্লাব আসলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং সে জন্যই ‘অর্থনৈতিক ডোপিং’ করছে।

তেবাস জানিয়েছেন, তিনি প্রিমিয়ার লিগের বেশ কিছু ক্লাবের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁর বিশ্বাস, এসব ক্লাব সিটির শাস্তি পাওয়া দেখতে চায়। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মুন্দো দেপোর্তিভো গত পরশু এ নিয়ে তেবাসের উদ্ধৃতি প্রকাশ করে, ‘আমি প্রিমিয়ার লিগের বেশ কিছু ক্লাবের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের বেশির ভাগই মনে করে, সিটির শাস্তি পাওয়া উচিত।’

আরও পড়ুন

লা লিগা সভাপতির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সিটি কোচ গার্দিওলা, ‘এই প্রথমবারের মতো তেবাসের সঙ্গে আমি একমত। প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাবই যে আমাদের শাস্তি চায়, সেটা নিশ্চিত। কিন্তু এ কারণেই আমি জনাব তেবাস ও প্রিমিয়ার লিগের বাকি সব ক্লাবকে বলতে চাই, স্বাধীন প্যানেলের (রায়ের) জন্য অপেক্ষা করুন। আধুনিক গণতন্ত্রে ন্যায়বিচার আছে। এটা তার চেয়ে বেশি জটিল নয়।’ গার্দিওলা এরপর বলেছেন, ‘আমি জানি না, তিনি (তেবাস) কিংবা প্রিমিয়ার লিগের বাকি দলগুলো আইনজীবী কি না, তাই এমন বলছি। এটা উয়েফার সঙ্গেও ঘটেছে। আমরা মনে করি, আমরা কোনো ভুল করিনি।’

সংবাদমাধ্যম বিবিসি সিটির এই শুনানিকে ‘শতাব্দীর আলোচিত বিচার’ আখ্যা দিয়েছে। একটি স্বাধীন প্যানেল ১০ সপ্তাহের মধ্যে শুনানি কার্যক্রম শেষ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রায় পাওয়া যাবে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে।

প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ সিটির বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ গঠন করেছে। আর্থিক নীতিমালা ভাঙার এই মামলার তদন্তে সিটির বিরুদ্ধে অসহযোগিতা করার অভিযোগ তুলেছে তারা। প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে তদন্ত শুরুর সময় সিটি দাবি করেছিল, অভিযোগগুলো ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ এবং এসব অভিযোগের মূল শিকড় জার্মান সংবাদমাধ্যম ‘দার স্পেইগেল’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদন, যাতে অবৈধ হ্যাকিং এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে সিটির মেইলগুলো ফাঁস করা হয়।

আরও পড়ুন

গুরুতর অভিযোগগুলোয় সিটি দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হিসেবে তাদের পয়েন্ট কেটে নেওয়া হতে পারে এবং তাতে সিটির প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমনও হতে পারে। কিংবা প্রিমিয়ার লিগ থেকে বহিষ্কারও হতে পারে সিটি।

২০০৮ সালে আবুধাবির রাজপরিবার সিটির মালিকানা নিয়ে নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ৮ বার প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি। এ ছাড়াও চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ঘরোয়া বিভিন্ন শিরোপাও তারা জিতেছে। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে আর্লিং হলান্ড, কেভিন ডি ব্রুইনা, রদ্রিদের নিয়ে তারকাখচিত স্কোয়াড গড়েছে সিটি।

মামলার শুনানির বিষয়ে গার্দিওলা বলেছেন, ‘এটা দ্রুত শুরু হয়ে আশা করি দ্রুতই শেষ হবে। একটি স্বাধীন প্যানেল সিদ্ধান্ত নেবে এবং আমি তার অপেক্ষায় আছি। ভালো লাগছে যে এটা সোমবার শুরু হবে। জানি, অনেক গুজব ছড়াবে এবং রায়ের বিষয়ে নতুন বিশেষজ্ঞদেরও আবির্ভাব ঘটবে। আমি জানি, লোকে কিসের অপেক্ষায় আছে, কী প্রত্যাশা করে। দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত সবাই নিরপরাধ।’

প্রিমিয়ার লিগে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ব্রেন্টফোর্ডের মুখোমুখি হবে গার্দিওলার দল।