২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ধর্ষণের দায়ে দানি আলভেজের সাড়ে চার বছর কারাদণ্ড

দানি আলভেজএএফপি

ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ব্রাজিলের সাবেক খেলোয়াড় দানি আলভেজকে আজ সাড়ে চার বছর কারাবাসের শাস্তি দিয়েছেন স্পেনের আদালত। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বার্সেলোনার নৈশক্লাবে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মামলা হয় আলভেজের বিরুদ্ধে।

বার্সেলোনার আদালত রায়ে বলেছেন, ‘ভুক্তভোগীর সম্মতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাদীর করা ধর্ষণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’ ভুক্তভোগীকে ১ লাখ ৫০ হাজার ইউরো দেওয়ার জন্য আলভেজকে নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন

বাদীপক্ষের আইনজীবী আলভেজের ৯ বছর কারাদণ্ড দাবি করেছিলেন। এর পাশাপাশি ১০ বছরের ‘প্রবেশন’ দেওয়ারও দাবি করেছিলেন তাঁরা। যদিও আলভেজের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ঘটনায় সেই নারীর সম্মতি ছিল। শিরোপাসংখ্যায় (৪৩) আলভেজ ফুটবলের ইতিহাসেই সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়দের একজন। বার্সেলোনায় পেপ গার্দিওলার ‘ড্রিম টিম’-এ আলো ছড়ানো ৪০ বছর বয়সী সাবেক এই রাইটব্যাক ধর্ষণের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারিতে স্পেনে গ্রেপ্তার হন

বার্সেলোনা ছাড়াও জুভেন্টাস ও পিএসজির হয়ে লিগ জিতেছেন আলভেজ। তাঁর মতো হাইপ্রোফাইল খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বলে নয়, এ মামলা স্পেনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসার আরেকটি কারণ হলো নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার দেশটির জনমত।

বার্সেলোনার আদালতে বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে আলভেজের
এএফপি

২০২২ সালে যৌন-সহিংসতার মামলায় ‘সম্মতি’কে অন্যতম বড় উপাদান করে আইন প্রণয়নের পর স্পেনে এটা অন্যতম আলোচিত মামলা। আইনের সেই পরিবর্তনে ন্যূনতম কারাদণ্ডের সময়ও বাড়ানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন

২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বরে বার্সেলোনার সাটন নৈশক্লাবে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে আলভেজের বিরুদ্ধে। তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী আলভেজের বিচার শুরু হয়েছিল চলতি মাসের শুরুতে। অভিযোগকারী বাদী সাক্ষ্য দিয়েছেন পর্দার আড়ালে যেন তাঁর পরিচয় প্রকাশ না হয়। বাদীর অভিযোগ, নৈশক্লাবের বাথরুমে আলভেজ জোর করে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। সে সময় ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেছেন সেই নারী। তাঁর আইনজীবীর মতে, ভুক্তভোগী সে সময় ‘যন্ত্রণাকাতর এবং ভীত’ হয়ে পড়েছিলেন।

ভুক্তভোগী নারীর এক বন্ধু আদালতে কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর বাদী ‘অনিয়ন্ত্রিতভাবে কান্নাকাটি’ করছিলেন এবং বলেছেন আলভেজ তাঁকে ‘সত্যিই আঘাত’ করেছেন। পুলিশের কর্মকর্তারা আদালতকে বলেছেন, তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া অবস্থায় দেখেছেন। সেই নারীর দুশ্চিন্তা ছিল, ‘তার অভিযোগ কেউ বিশ্বাস করবে না।’

বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছেন আলভেজ
এএফপি

তিন দিনের সেই বিচারকার্যে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আলভেজ। তিনি দাবি করেন, সেই নারীর সঙ্গে সম্মতির ভিত্তিতেই সবকিছু হয়েছে এবং তাঁকে তিনি আঘাত করেননি কিংবা চুলও টেনে ধরেননি। বিচারকার্যের সময় আদালতে তাঁর আইনজীবী জানতে চেয়েছিলেন, তিনি জোর করে সেই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন কি না? আলভেজ বলেছিলেন, ‘আমি সে ধরনের মানুষ নই। আমি সহিংস নই। সে (বাথরুম থেকে) বের হয়ে যেতে চাইলে যেতে পারত। সে ওখানে থাকতে বাধ্য ছিল না।’

আরও পড়ুন

সেই রাতে আলভেজের সঙ্গে তাঁর এক বন্ধুও ছিলেন। তিনি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, নৈশক্লাবে যাওয়ার আগে ওয়াইন ও হুইস্কি পান করেছিলেন আলভেজ। তাঁর ৩১ বছর বয়সী স্ত্রী জোয়ানা সাঞ্জ গত মঙ্গলবার আদালতকে বলেছেন, আলভেজ বার্সেলোনার বাসায় মাতাল হয়ে ফিরেছিলেন। সে সময় সাঞ্জ তাঁর স্বামীর কাছে কিছু জানতে চাননি। সেটি আলভেজ ‘যে অবস্থায় ছিলেন’ সেটির পরিপ্রেক্ষিতে। সাঞ্জ জানিয়েছেন, শোবার ঘরে আলভেজ ঢোকার পর তাঁর মুখ থেকে তিনি অ্যালকোহলের তীব্র গন্ধ পেয়েছেন। সাঞ্জের ভাষায়, ‘সে কিছু আসবাবের সঙ্গে গুঁতো খেয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়েছিল।’

ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর আলভেজ শুরুতে একটি টিভি সাক্ষাৎকারে ঘটনাটি অস্বীকার করেছিলেন। পরে দাবি করেন, সেই নারীর সম্মতির ভিত্তিতেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এরপর গত জুনে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘লা ভ্যানগার্ড’কে আলভেজ বলেন, তিনি মিথ্যা বলেছিলেন। ভেবেছিলেন স্ত্রী তাকে ছেড়ে যেতে পারেন।

ব্রাজিলের হয়ে এক শ এর বেশি ম্যাচ খেলেছেন আলভেজ
এএফপি

গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলভেজ বেশ কয়েকবার জামিন চাইলেও আদালত তা মঞ্জুর করেননি। এর আগে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, জামিন পেয়ে ব্রাজিলে পালিয়ে যেতে পারেন—এমন শঙ্কা থেকেও আলভেজের আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি। ব্রাজিলও তাদের কোনো নাগরিক অন্য দেশে অপরাধ করে সাজা পেলে তাকে সেই দেশে ফেরত পাঠায় না।

বার্সেলোনায় দুই মেয়াদে খেলেছেন আলভেজ। ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ক্লাবটির হয়ে ২৩টি শিরোপা জিতেছেন। পরে ২০২১-২২ মৌসুমে ফিরেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় মেক্সিকান ক্লাব পুমাস ইউএনএমের সঙ্গে চুক্তি ছিল আলভেজের। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর ক্লাবটি তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।

আলভেজ ব্রাজিলের হয়ে ১২৬ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন। দুবার করে কোপা আমেরিকা ও কনফেডারেশন কাপ জিতেছেন দেশের হয়ে। ২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিকে সোনাজয়ী ব্রাজিল দলের সদস্যও ছিলেন আলভেজ।

আরও পড়ুন