শিলংয়ে টাকা দিয়ে অনুশীলন করতে হচ্ছে হামজাদের

অনুশীলনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন হামজারাপ্রথম আলো

সিলেটের তামাবিল হয়ে ডাউকি সীমান্ত দিয়ে যে রাস্তা ধরে শিলং আসতে হয়, তা খুবই সুন্দর। পাহাড়ের মাঝখানে খাঁজকাটা আঁকাবাঁকা রাস্তা। কাল বিকেলে সেই রাস্তা ধরে শহরে আসার পথে একটু বৃষ্টি হয়েছে।

বৃষ্টির কারণে প্রকৃতি আরও মনোরম হয়ে ওঠে। গাড়িচালক যে রাস্তা ধরে অনেকটা উঁচু থেকে সমতলে নামলেন, রোমাঞ্চের সঙ্গে তা ভয়ের অনুভূতিও জাগায়। নিরাপদে পথটুকু পার হয়ে একটু পরেই চালক নিয়ে এলেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানীতে।

শহরের ভেতরটাও পাহাড়ি পরিবেশময়। অনেক খাড়া রাস্তা। পাহাড় কেটে তৈরি। পাহাড়ের পেটে তৈরি করা বাড়ি ঘরগুলো ছবির মতো। আর শহরে বলতে গেলে ইউরোপের ছোঁয়া। দারুণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তো বটেই, শিলং ঠান্ডারও শহর। কাল সন্ধ্যায় ১৪ ডিগ্রিতে নেমে আসে তাপমাত্রা। হালকা বৃষ্টির কারণে ঠান্ডাটা যেন আরও জাঁকিয়ে বসেছে।

তবু শহরময় মানুষ, চারদিকে নানা শপিংমল। নারীদের মুক্ত চলাফেরা আলাদাভাবে চোখ কাড়ে। শহরের প্রাণকেন্দ্র পুলিশ বাজার এলাকায় কোনো না কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে আপনার দেখা হয়ে যাবেই। বাংলাদেশি খাবারও পাওয়া যায়। শিলংয়ে এলে বাংলাদেশিরা এখানেই ওঠেন বেশি।

আরও পড়ুন

মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্তে আজ দেখা বাফুফে সদস্য সাবেক ফুটবলার বিজন বড়ুয়া, আবাহনীর সহকারী ম্যানেজার নজরুল ইসলাম, সহকারী কোচ প্রাণতোষ কুমারের সঙ্গে। এসেছেন খাগড়াছড়ির জ্যোতিষ বসু ত্রিপুরা। একসময় ঢাকায় তৃতীয় বিভাগ ফুটবল খেলা ‘সি’ সনদধারী এই কোচ খাগড়াছড়িতে একটি ফুটবল একাডেমি চালান। শিলংয়ের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া নিজের মেয়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগে ‘রথ দেখা কলা বেচার’ মতো ২৫ মার্চ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটাও দেখবেন। ডাউকি থেকে আসার পথে জ্যোতিষ বললেন, ‘সৌভাগ্য আমাদের। হামজা চৌধুরীর মতো ফুটবলার এসেছেন। ভারতের সঙ্গে ম্যাচটায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে আশা করি আমরাই জিতব।’

বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও জয়ের ছকই কষছেন। তবে এর জন্য তাঁর চাই ভালো মাঠে নিবিড় অনুশীলন। শুক্রবার বাংলাদেশ দল চেয়েছিল ম্যাচ ভেন্যু জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে। কিন্তু অনুমতি মেলেনি অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের। নিয়ম অনুযায়ী অনুমতি মিলবে আসলে ম্যাচের আগের দিন। অগত্যা বাংলাদেশ দলকে অনুশীলনে পাঠানো হয় শহরের নর্থ ইস্টার্ন হিলস বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ। মাঠটি ভালো নয় বলে বেজায় নাখোশ কাবরেরা।

দলের সঙ্গে অনুশীলনে হামজা
প্রথম আলো

গতকাল অবশ্য নেহরু স্টেডিয়ামেই অনুশীলন হয়েছে। তবে মূল মাঠে নয়, গ্রাউন্ড-টু টার্ফ মাঠে। অথচ পাশের মূল মাঠে স্বাগতিক ভারত অনুশীলন করে যাচ্ছে টানা। আয়োজক হওয়ার বাড়তি সুবিধা ষোলো আনাই নেবে ভারত। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু বাংলাদেশ দলকে ভারতে এসে এক রকম যুদ্ধই করতে হচ্ছে অনুশীলনের সময়, মাঠ ইত্যাদি নিয়ে। বৈরী একটা পরিবেশে পড়েছেন বলে দাবি করছে গোটা দল।

তবে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার আমের খান এতে দারুণ ক্ষুব্ধ। আয়োজকদের তরফে কোনো সহযোগিতা বাংলাদেশ দল পাচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ, ‘আমাদের ভালো মাঠ দেওয়া হচ্ছে না। আজ (কাল) অনুশীলনের সময় ছিল সাড়ে পাঁচটা। কিন্তু তারা তখনো মাঠ দেয়নি। এখন সাড়ে সাতটায় যুদ্ধ করে নিতে হয়েছে মাঠ। তা–ও টাকা দিতে হবে।’

আরও পড়ুন

নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ দল আজ থেকে প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধা পাবে। এ কারণেই আয়োজকেরা গত সন্ধ্যায় ফ্লাডলাইটে অনুশীলনের খরচ নেবে বাংলাদেশের কাছ থেকে। আয়োজকেরা বাংলাদেশ দলকে বলছে, মাঠ আর নেই তাদের। আজও সেই ভার্সিটি মাঠে বাংলাদেশের অনুশীলন দেওয়া হয়েছে। ‘কিন্তু ওই মাঠ ভালো নয়। ভার্সিটির মাঠে আমরা যাব না। ওখানে ফ্লাডলাইট নেই’, বলেছেন ক্ষুব্ধ আমের খান।

অনুশীলনে হামজা
প্রথম আলো

লড়াইয়ের আগে এমন প্রতিকূলতায় বিরক্ত ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিনও। অনুশীলন শুরুর আগে বললেন, ‘এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার। আজ (কাল) অনুশীলন ছিল সাড়ে পাঁচটায়। সেটি হচ্ছে সাড়ে সাতটায়। আমাদের জন্য এতে সমস্যা হচ্ছে। ঘাসের মাঠে অনুশীলন করতে পারলে ভালো হতো।’

আমাদের ভালো মাঠ দেওয়া হচ্ছে না। আজ (কাল) অনুশীলনের সময় ছিল সাড়ে পাঁচটা। কিন্তু তারা তখনো মাঠ দেয়নি। এখন সাড়ে সাতটায় যুদ্ধ করে নিতে হয়েছে মাঠ। তা–ও টাকা দিতে হবে।
আমের খান, বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার

সাদের একটু পেছনে তখন অনুশীলনে সতীর্থদের সঙ্গে হামজা। কেমন দেখছেন তাঁকে? মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয়ের মুখে উচ্ছ্বাস, ‘আমি তাঁকে ১০০ তে ১০০ নম্বর দেব। তাঁর কাছ থেকে শিখছি অনেক কিছু।’

মনোযোগে যাতে চিড় না ধরে, তার জন্য কোচের তরফ থেকে সাংবাদিকের উদ্দেশে দুটি ‘নির্দেশ’ জারি হয়েছে শিলংয়ে। পূর্ব অনুমোদন ছাড়া যেন কেউ টিম হোটেলে না যান এবং বাংলাদেশ দলের অনুশীলন যেন কেউ ‘লাইভ’ না করেন। ভারত যেন বাংলাদেশ দলটাকে আগে থেকেই জেনে না ফেলে, তার জন্যই হয়তো এত সতর্কতা কাবরেরার!