হ্যাটট্রিকের স্মৃতি ফিরিয়ে আজ কি বার্সাকে জবাব দিতে পারবেন এমবাপ্পে
২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বার্সেলোনা সফরে গিয়েছিল পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে সেবার মুখোমুখি হয়েছিল বার্সা-পিএসজি। ক্যাম্প ন্যুর সেই ম্যাচকে ঘিরে চরমে উঠেছিল উত্তেজনা। লিওনেল মেসির বার্সার চ্যালেঞ্জের জবাব কিলিয়ান এমবাপ্পের পিএসজি কীভাবে দেয় সেদিকেই ছিল সবার চোখ। ম্যাচের ২৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে মেসি গোল করলে ক্যাম্প ন্যুর উল্লাসে ঢাকা পড়ে যায় পিএসজির হতাশা।
যদিও উল্লাস থামাতে এমবাপ্পে সময় নেন মাত্র ৫ মিনিট। বক্সের ভেতর থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করে সমতায় ফেরান পিএসজিকে। কিন্তু সেটা ছিল কেবলই শুরু। বিরতির পর রীতিমতো রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন এমবাপ্পে। ৬৫ ও ৮৫ মিনিটে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করার সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেন বার্সাকে। ৪-১ গোলের জয়ে অন্য গোলটি করেন মইজে কিন।
আজ এমবাপ্পের আরেকবার বার্সেলোনা ভ্রমণের মুহূর্তে বারবার ফিরে আসছে সেই হ্যাটট্রিক ম্যাচের প্রসঙ্গ। যদিও ক্যাম্প ন্যুর পরিবর্তে এবারের ম্যাচটি হবে অলিম্পিক লুইস স্টেডিয়ামে। তবে মাঠ যেটাই হোক, এমবাপ্পের সেই হ্যাটট্রিকের স্মৃতি নিশ্চিতভাবেই দুই দলের খেলোয়াড়দের মনে পড়বে। তবে হ্যাটট্রিকের বিষয়টি সরিয়ে রাখলেও নানা দিক থেকে এ ম্যাচটি এমবাপ্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৭ সালে মোনাকো থেকে পিএসজিতে আসেন এমবাপ্পে। শুরুতে নেইমারের কারণে কিছুটা আড়ালে থাকলেও পরে তিনিই হয়ে ওঠেন পিএসজির মূল অস্ত্র। দলটির চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্নও ছিল তাঁর কাঁধে। এর মধ্যে একবার ফাইনাল খেললেও ট্রফি উঁচিয়ে ধরার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি এ ফরাসি তারকা। এমবাপ্পেকে দিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করে তাঁকে ধরে রাখে পিএসজি।
তবে ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, এ মৌসুম শেষেই পিএসজি ছেড়ে রিয়ালে যাবেন এমবাপ্পে। সে খবর সত্যি হলে পিএসজিকে ইউরোপ সেরা বানানোর এটাই শেষ সুযোগ এমবাপ্পের জন্য। কিন্তু আজকের ম্যাচটি হেরে বিদায় নিলে এমবাপ্পের পিএসজি–অধ্যায় অনেকটা হতাশা ও ব্যর্থতাতেই শেষ হবে। এমন আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নিতে এমবাপ্পে নিজেও নিশ্চয় চাইবেন না।
আগামী মৌসুমে রিয়ালে যাওয়ার খবর সত্যি হলে, এ ম্যাচটা এমবাপ্পের জন্য এটা দেখানোর যে তিনি দলের জন্য কী করতে পারেন। রিয়ালে গেলে নিয়মিতই বার্সার বিপক্ষে ‘এল ক্লাসিকো’তে খেলতে হবে তাঁকে। উত্তেজনাপূর্ণ সেসব ম্যাচে এমবাপ্পেই হবে দলটির অন্যতম তুরুপের তাস। দলীয় ঐক্য তো বটেই, এমন ম্যাচে এমবাপ্পের ব্যক্তিগত শৈলীর জাদুর প্রয়োজনও হবে রিয়ালের। সেটি তিনি কতটা দক্ষতার সঙ্গে করতে পারবেন, সেটাই আজ প্রমাণের সুযোগ তাঁর জন্য।
প্যারিসে প্রথম লেগে ৩-২ গোলে হারা ম্যাচে রীতিমতো নিষ্প্রভ ছিলেন এমবাপ্পে। উইং ধরে তাঁর গতির ঝড়, বুলেট গতির শট, চোখধাঁধানো ড্রিবলিং কিংবা নিখুঁত ফিনিশিংয়ের কিছুই দেখা যায়নি সেদিন। সেই ম্যাচে বার্সার তরুণ ডিফেন্ডাররা রীতিমতো নজরবন্দী করে রেখেছিলেন এমবাপ্পেকে। পুরো ম্যাচে বলার মতো কিছুই করতে পারেননি বিশ্বকাপজয়ী এ ফরোয়ার্ড। জুলেস কুন্দে, রোনাল্দ আরাউহো কিংবা পাউ কুবারসিদের পাতা ফাঁদ ছিঁড়ে বেরই হতে পারেননি এমবাপ্পে।
তাঁর এমন নিষ্প্রভ থাকার দিনে হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় পিএসজিকে। আজ এমবাপ্পের জন্য এ ম্যাচটি তাই প্রতিশোধেরও, এটা দেখানোর যে যেকোনো বিশ্বসেরা রক্ষণকে তিনি গুঁড়িয়ে দিতে পারেন। আর কে না জানে, এমবাপ্পে সেরা ছন্দে ফিরলে কী হতে পারে! এখন সেই ছন্দ এমবাপ্পে ফিরে পান কি না সেটাই দেখার অপেক্ষা।