থিম্পুর উচ্চতায় খেলা কতটা কঠিন তপু–মোরছালিনদের জন্য

ভুটানে ৮ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় লড়তে হয়েছে বাংলাদেশকেবাফুফে

বলিভিয়ার লাপাজে স্তাদিও হার্মান্দো সিলেসের খেলা বিশ্বের বড় বড় ফুটবল তারকাদের জন্যও রীতিমতো আতঙ্কের। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটি ১১ হাজার ৯৭৫ ফুট উঁচুতে। ফলে লাপাজে খেলতে নামলে ফুটবলাররা অক্সিজেনের ঘাটতিতে ভোগেন। ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার মতো দল লাপাজে গিয়ে নাকাল হয়েছে, অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলিভিয়ার বিপক্ষে হেরে গেছে। ২০০৯ সালে লাপাজেই আর্জেন্টিনা হেরেছিল ৬–১ গোলে। লাপাজের উচ্চতায় খেলা বিদেশি দলগুলোর জন্য বেশ কঠিনই।

আরও পড়ুন

ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চাংলিমিথান স্টেডিয়াম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮ হাজার ফুট উঁচুতে। গতকাল এই স্টেডিয়ামেই ভুটানকে প্রথম ফিফা প্রীতি ম্যাচে ১–০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভুটানের বিপক্ষেই বাংলাদেশের রেকর্ড সবচেয়ে ভালো। ১৫ ম্যাচের ১২টিতেই জয়। ড্র ২টি। ১টি মাত্র হার, সেটি এই চাংলিমিথান স্টেডিয়ামেই। ২০১৬ সালে এশিয়ান কাপের প্রাক্‌–বাছাইপর্বে ভুটানের বিপক্ষে ৩–১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার কারণে অক্সিজেনের ঘাটতি হয় খেলোয়াড়দের
বাফুফে

এবার দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে ভুটানে যাওয়ার আগে ভুটানের উচ্চতা–সমস্যার কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ভুটানের ভূপ্রকৃতিও ফুটবলের জন্য যথেষ্ট কঠিনই। থিম্পু বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম রাজধানী হিসেবে পরিচিত। ৫ দিন আগে ভুটান পৌঁছে ফুটবলাররা শ্বাস–প্রশ্বাসজনিত সমস্যার কথা বলছিলেন। গতকাল ম্যাচের সময়ও দেখা গেছে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারছেন না তপু বর্মণেরা।

আগের অভিজ্ঞতা থেকেই বৃহস্পতিবার ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচটি রয়েসয়ে খেলেছে বাংলাদেশ
বাফুফে

ম্যাচটা কতটা কঠিন ছিল বাংলাদেশের জন্য? এ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা ডিফেন্ডার তপু বর্মণ ২০১৬ সালে সেই হারের ম্যাচের দলেও ছিলেন। তপু ছাড়া সেই ম্যাচের আর কেউ নেই এই দলে। তপু পেছন ফিরে প্রথম আলোকে থিম্পু থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘ভুটানের মাটিতে ভুটানের বিপক্ষে খেলা সব সময়ই কঠিন। এই তো কিছুদিন আগে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে থিম্পুতে হংকংয়ের মতো দল ২–০ গোলে হেরে গেছে ভুটানের বিপক্ষে। আমরা কাল সাবধানী ফুটবল খেলেছি কোচের নির্দেশ অনুযায়ী। ভুটানের মাটিতে অলআউট ফুটবল খেলতে গেলে সমস্যায় পড়তে হতো।’

আরও পড়ুন

তপু যোগ করেন, ‘সেবার আমরা ম্যাচের দুই দিন আগে থিম্পু পৌঁছেছিলাম। কোচ ছিলেন বেলজিয়ামের টম সেইন্টফিট। ম্যাচের আগে দীর্ঘক্ষণ অনুশীলন করি দুই সেশনে। মাঠে নেমে ভেবেছিলাম, ভুটানকে উড়িয়ে দেব। ঢাকায় আগের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হওয়ায় কিছুটা চাপে ছিলাম। কিন্তু খেলার সময় পুরো উল্টো ঘটনা ঘটে। আমরা ভুটান দলের সঙ্গে পেরেই উঠিনি। সেই অভিজ্ঞতাটা এবার মাথায় ছিল।’

মোরছালিনের গোলে থিম্পুর উচ্চতা জয় করেছে বাংলাদেশ
বাফুফে

শেখ মোরছালিনের গোলেই কাল ভুটানকে হারিছে বাংলাদেশ। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে রাকিব হোসেনের ক্রস ভুটানের গোলকিপার শেরিনের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। সামনেই দাঁড়ানো মোরছালিন বল আলতো টোকায় জালে পাঠান। গোল করতে পেরে খুশি মোরছালিনও প্রথম আলোকে জানিয়েছেন থিম্পুতে খেলার অভিজ্ঞতা, ‘এই প্রথম ভুটানে খেললাম। এখানে আসার পর থেকে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। একটু দৌড়ালেই হাঁপিয়ে যাচ্ছিলাম। সেই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠে আমরা কাল নেমেছিলাম। কিন্তু খেলাটা বেশ কঠিন ছিল। ভুটানে মূল সমস্যা, পা অসার হয়ে যায়। তবে কোচ এসব মাথায় রেখে একটা পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন, আমরা সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলেছি।’

ভুটানের উচ্চতায় ভিনদেশি খেলোয়াড়দের কেন সমস্যা হয়? বাংলাদেশ দলের ফিজিও আবু সুফিয়ানের ব্যাখ্যা, ‘থিম্পু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে। উচ্চতার কারণে বাংলাদেশের মতো সমতল ভূমির দেশের ফুটবলাররা অক্সিজেনের ঘাটতিতে ভোগেন। এই পরিবেশে পুরোনো চোট নতুন করে দেখা দিতে পারে। মাংসপেশী অসার হয়ে আসে। ভুটানে নেমেই আমরা হাইকিংয়ের পরিকল্পনা করি। এটা ছিল খেলোয়াড়দের উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে তোলার একটা কৌশল।’