গার্দিওলা নিজেই এখন গার্দিওলার কাঠগড়ায়
পেপ গার্দিওলা গত পরশু বলেছেন, ম্যানচেস্টার সিটি হবে তাঁর শেষ ক্লাব। তাঁর সঙ্গে সিটির চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে ২০২৬ সালে। ধরে নেওয়া যাক, বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোনোর পরও গার্দিওলা আরও কয়েক মৌসুম ইংলিশ ক্লাবটিতে থাকবেন। তবু মানুষ এক জীবনে প্রায় সবকিছু দেখে ফেললেই সম্ভবত আগেভাগে এভাবে বলে ফেলে! উত্থান ও তারপর চূড়ান্ত সফলতার চূড়ায় ওঠার পর ধীরে ধীরে যখন পতনের রাস্তাও উঁকি দিতে থাকে—গার্দিওলার মতো চৌকস কোচেরা তখনই সম্ভব বুঝে ফেলেন ভবিষ্যৎ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে!
গার্দিওলা এখন সেই পতনের রাস্তায় আছেন। হতে পারে রাস্তাটা ঘুরে আবার ওপরেও হয়তো উঠবে। তাই বলে বর্তমান কিংবা নিকট অতীতকে তো আর অস্বীকার করা যায় না। গার্দিওলার নিকট অতীত হলো, চ্যাম্পিয়নস লিগে গতকাল রাতে তুরিনে জুভেন্টাসের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে তাঁর দল সিটি।
এই হারের পর গার্দিওলার বর্তমানটা হলো আরও ক্ষতবিক্ষত। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সর্বশেষ ১০ ম্যাচে এক জয়, হার ৭টি! এতটা ক্ষতবিক্ষত গার্দিওলাকে এর আগে কখনোই দেখা যায়নি। যেমন ধরুন, গার্দিওলার কোচিং ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা তিন ম্যাচে তাঁর দলকে ন্যূনতম ২টি করে গোল হজম করতে দেখা গেল।
২০১৬ সালে সিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্লাবটিকে ১৫টি ট্রফি জেতানো এই কোচ, যে পথে আছে ‘ট্রেবল’ ও টানা চারবার লিগ জয়ের রেকর্ড—এখন এতটাই সঙিন পরিস্থিতিতে যে তাঁর ক্লাব সর্বশেষ কবে এমন বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, তা খুঁজতে গিয়ে দেড় যুগ পেছনে ফিরে যেতে হয়েছে। স্টুয়ার্ট পিয়ার্স কোচ থাকতে সিটি সর্বশেষ এমন বাজে সময় পার করেছিল ২০০৬ সালে।
গার্দিওলার প্রসঙ্গে ফেরা যাক। সর্বশেষ ১০ ম্যাচে সিটি হজম করেছে ২৩ গোল। অথচ ট্রেবল জয়ের ২০২২-২৩ মৌসুম মিলিয়ে এই দলই হজম করেছিল ৪৩ গোল। গার্দিওলা পতন ঠেকাতে না পারলে এই পরিসংখ্যান কোথায় গিয়ে ঠেকবে কে জানে! তবে গোল হজমের হিসাবে এরই মধ্যে ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেছে।
নভেম্বরের শুরু থেকে ৯ ম্যাচে ২১ গোল হজম করেছে সিটি—ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের দলগুলোর মধ্যে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে যা এ সময়ে সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়ার নজির। লোকে এরই মধ্যে গার্দিওলাকে নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছে। ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার ও বিশ্লেষক রিও ফার্ডিনান্ড যেমন টিএনটি স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘গার্দিওলার দলকে এতটা বাজে অবস্থায় কখনো দেখেননি’ তিনি। কোচ গার্দিওলার সামর্থ্য ফুরিয়ে এসেছে, এমন কথা বলার লোকেরও অভাব নেই। সিটির ম্যাচ থাকলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটা যেন এখন নিয়মিত চর্চার বিষয়!
তবে এই মুহূর্তে গার্দিওলার সামর্থ্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি সন্দেহগ্রস্ত থাকলে সেই ব্যক্তিটি সম্ভবত গার্দিওলা নিজেই।
সিটির মুখোমুখি হওয়ার আগে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সর্বশেষ ৬ ম্যাচের একটিতে জিতেছিল জুভেন্টাস। এমন ফর্মে থাকা ইতালিয়ান ক্লাবটির কাছে হারের পর গার্দিওলার কাছে সংবাদকর্মীরা জানতে চেয়েছিলেন,নিজের দল পরিচালনা তিনি নিজেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন কি না? স্প্যানিশ কোচের উত্তর, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। অবশ্যই আমি ভালো ও খারাপ, দুরকম সময়েই নিজেকে প্রশ্ন করি। ভালো সময়েও যেমন স্থিতধী থেকেছি, তেমনি খারাপ সময়েও...আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কোচ হওয়ার সুযোগ পেয়ে কাজ চালিয়ে যেতে ফল এনে দেওয়া। প্রথম, দ্বিতীয় মৌসুমে যদি বড় চ্যালেঞ্জগুলোয় না পারতাম তাহলে আমি এখানে থাকতাম না।’
৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ টেবিলে ২২তম সিটি। ৩৬ দলের এই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে শীর্ষ ২৪ দলের মধ্যে থাকতে হবে সিটিকে। আগামী মাসে পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচেও হারলে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ার গভীর শঙ্কায় পড়বে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও তেমন একটা ভালো অবস্থানে নেই গার্দিওলার দল। ১৪ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে ৮ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলা সিটি। রোববার নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মুখোমুখি হবে সিটি।