মেসির তিন ছেলে কে কেমন, কোন স্কুলে পড়ে, কেমন জীবন তাদের
বেশির ভাগ পেশাদার ফুটবলারের জীবন বদলি চাকরির মতো। এই মৌসুম এক ক্লাবে, তো পরের মৌসুম আরেক ক্লাবে।
তবে বার্সেলোনার সমর্থক হয়ে ওঠায় অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন লিওনেল মেসি কাতালান ক্লাবটিতেই তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন। কিন্তু তা হয়নি।
বার্সার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে মেসিকেও বদলি চাকরির মতো ক্লাব বদলাতে হয়েছে। ফ্রান্সের পিএসজি হয়ে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির ঠিকানা এখন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামি।
বাবা কর্মস্থল পাল্টালে অনেক ক্ষেত্রে সন্তানদেরও সেই ঠিকানায় চলে যেতে হয়। মেসির পরিবারও তাঁর সঙ্গে এখন ফ্লোরিডাতেই থাকছে। ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেলের অভিজাত এলাকা বে কলোনির গেটেড কমিউনিটিতে স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জো ও তিন পুত্রসন্তান নিয়ে তাঁর সুখের সংসার।
মেসিকে নিয়ে তো কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু তাঁর তিন ছেলেকে নিয়ে কতজন জানেন? তারা কী করে, কী খেতে পছন্দ করে, কোন স্কুলে পড়াশোনা করে—এসব ব্যাপারে অনেকেরই কৌতূহল থাকতে পারে।
যদিও কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ছোঁকছোঁক করা উচিত নয়। মেসি নিজ থেকে কিছু না বললে বিস্তারিত জানা সম্ভবও নয়। সন্তানদের সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তিনি যতটুকু বলেছেন কিংবা সেলিব্রিটি বিষয়ক সংবাদমাধ্যমগুলো যতটুকু তথ্য জোগাড় করতে পেরেছে, সেসবের আলোকেই মেসির তিন ছেলেকে নিয়ে এই লেখা—
মেসির বড় ছেলের নাম থিয়াগো। জন্ম ২০১২ সালের ২ নভেম্বর ২০১২। বর্তমানে তার বয়স ১২। মেজ ছেলের নাম মাতেও। জন্ম ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। মাতেওর বয়স এখন ১০। ছোট ছেলে চিরোর জন্ম ২০১৮ সালের ১০ মার্চ। এ মাসেই নিজের সপ্তম জন্মদিনের কেট কেটেছে সে। থিয়াগো, মাতেও, চিরো—তিনজনেরই জন্ম বার্সেলোনায়।
বাবার পথ ধরে তিন ভাইও ফুটবলে ঝুঁকেছে। বর্তমানে তিনজনই ইন্টার মায়ামির বয়সভিত্তিক দলে খেলছে। থিয়াগো মায়ামি অনূর্ধ্ব–১৩ দলে, মাতেও অনূর্ধ্ব–১১ ও চিরো অনূর্ধ্ব–৭ দলে। চিরো দলের অধিনায়ক। মেসির মতো তাঁর তিন ছেলেও ফরোয়ার্ড এবং তাঁর জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলোও পেয়েছে। বল নিয়ে বাঁ পায়ে ছুটে চলা, চোখে লেগে থাকার মতো ড্রিবল—সবই যেন মেসির অনুকরণ! গত মাসে তাদের দল ওয়েস্টন কাপের শিরোপাও জিতেছে।
থিয়াগো, মাতেও এবং চিরো লেখাপড়াও করে একই স্কুলে—ফোর্ট লডারডেলের পাইন ক্রেস্ট স্কুল। মেসির বাসা থেকে এই স্কুলের দূরত্ব খুব বেশি নয়। পাইন ক্রেস্ট স্কুল আমাদের দেশের গতানুগতিক স্কুলগুলোর মতো পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সেখানে বরং নৈতিক শিক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
পাইন ক্রেস্ট স্কুলের মূল কয়েকটি লক্ষ্য হলো প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চরিত্র (স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য) ও নেতৃত্বগুণ বিকশিত করা এবং তাদের বাকি জীবনের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করা।
এক সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছিলেন, বাসায় থাকলে তিনিই ছেলেদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া–আসা করেন, ‘আমি সকাল সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে নাশতা করি। তখন ছেলেরাও উঠে পড়ে। কখনো কখনো আমি তাদের স্কুলে নিয়ে যাই। কখনো আবার নিয়ে যেতে পারি না। ওরা (সন্তানেরা) টোস্ট ও চকলেটমিশ্রিত দুধই বেশি খায়। অনুশীলন শেষ করে বেলা একটার মধ্যে আমি বাসায় ফিরি। এরপর কিছু একটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম থেকে উঠে তাদের (স্কুল থেকে) নিয়ে এসে আবারও অনুশীলনে যাই।’
সাক্ষাৎকারে তিন সন্তানকে নিয়েও খোলামেলা কথা বলেছিলেন মেসি, ‘থিয়াগো কথা বলতে পছন্দ করে। আন্তোনেলাকেই সে সব বলে। মাতেও সবাইকে সবকিছু বলে দেয়। সারাক্ষণ বকবক করতেই থাকে। চিরো সেই তুলনায় একটু চুপচাপ, অনেকটা আমার মতো।’
খেলা থাকলে বা মায়ামির বাইরে গেলে স্ত্রী রোকুজ্জোই সন্তানদের সামলান বলে জানিয়েছেন মেসি, ‘সে স্ত্রী ও মা হিসেবে দুর্দান্ত। মোটামুটি ২৪ ঘণ্টাই সন্তানদের সঙ্গে কাটায়। আমাকে মাঝেমধ্যেই দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে থাকতে হয়—সফর, ম্যাচ, প্রাক্–মৌসুম প্রস্তুতি, জাতীয় দল (আর্জেন্টিনা)…কখনো কখনো আমাকে মাসের পর মাস বাইরে থাকতে হয়। তখন সে–ই সন্তানদের সামলায়।’
আরেকটি সাক্ষাৎকারে মেসি তাঁর একটি অপূর্ণ ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিলেন। কথাটা তাঁর মুখেই শুনুন, ‘আমরা আরেকটি সন্তান নিতে চাই। সেই চেষ্টা এখনো শুরু করিনি। আশায় আছি, সেটি কন্যাসন্তান হবে।’
খেলোয়াড়ি জীবনে মেসির অপূর্ণতা বলতে কিছু নেই। সাংসারিক জীবনেও তাঁর এই ইচ্ছাটা হয়তো একদিন পূরণ হবে।