গত মার্চে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব দেখতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন এক তরুণী। হুইলেন বারবিয়েরি নামের সেই তরুণী আর্জেন্টিনা–পানামার খেলা দেখার জন্য নিজ অফিসে অসুস্থতার ভুয়া কাগজ দেখিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে। পানামার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ২-০ গোলের জয় ভালোই উপভোগ করেছিলেন বারবিয়েরি। কিন্তু তারপর চাকরি হারিয়ে এর খেসারত দিতে হয়েছে তাঁকে।
প্রিয় দলের খেলা দেখার জন্য নানা অজুহাতে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফাঁকি দেওয়ার উদাহরণ অবশ্য নতুন নয়। তবে ব্রাজিলের সরকারি কর্মচারীদের নারী বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না। এমনকি খেলা দেখে দেরি করে অফিসে এসে দিতে হবে না কোনো অজুহাতও। ব্রাজিলের সরকারি কর্মচারীদের অফিসের জন্য খেলা দেখতে না পারার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিচ্ছে খোদ দেশটির সরকার। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে আয়োজিত বিশ্বকাপের ম্যাচ ঠিকঠাক উপভোগ করার সুযোগ করে দিতে সরকারি কর্মচারীদের অফিসের সময়সূচি বদলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ব্রাজিল সরকার।
অস্ট্রেলিয়ায় মার্তাদের বিশ্বকাপ ম্যাচগুলো শুরু হবে ব্রাজিলের স্থানীয় সময় ভোরবেলায়। ভোরে এই ম্যাচ চলাকালে কর্মীদের অফিসে আনা সহজ হবে না বলে বিশ্বাস ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ইসথের ডিউইকের। যে কারণে ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা পর অফিসে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের।
এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডিউইক বলেছেন, ‘যেসব দিনে ম্যাচ ব্রাজিলের স্থানীয় সময় ৭টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে, সেসব দিনে অফিস শুরু হবে বেলা ১১টায়। আর যেসব দিনে খেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, সেসব দিনে অফিসের কাজের জন্য দুপুর ১২টায় এলে হবে।’
আগামীকাল শুরু হবে নারীদের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। উদ্বোধনী ম্যাচে নরওয়ের বিপক্ষে খেলবে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ব্রাজিল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে ২৪ জুলাই। শুরুর ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে পানামাকে। দ্বিতীয় ম্যাচে ২৯ জুলাই ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। আর জ্যামাইকার বিপক্ষে ব্রাজিল গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে ২ আগস্ট।
এবারের বিশ্বকাপ ব্রাজিলের মেয়েদের জন্য আক্ষেপ দূর করার চ্যালেঞ্জের আসর। আশা জাগিয়ে প্রতিবার বিশ্বকাপে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত হতাশাই সঙ্গী হয়েছে দলটির। এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের সর্বোচ্চ অর্জন ২০০৭ সালে চীনে আয়োজিত বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলা। ওই বছর ফাইনালে জার্মান মেয়েদের কাছে ২–০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল ছেলেদের ফুটবল বিশ্বকাপে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।
আর সর্বশেষ দুই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মেয়েরা বিদায় নিয়েছেন দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। সেসব ব্যর্থতা ভুলে ব্রাজিল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। ব্রাজিল যদি বিশ্ব জয়ের সেই মিশনে সফল হয়, তবে দেরি করে অফিসে আসা সেসব ফুটবলপ্রেমীর মূল্যবান সময়ও সার্থক হবে।
অন্যদিকে এবার বিশ্বকাপ ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার মার্তার জন্যও ‘শেষ’ সুযোগ। হাঁটুর চোট ও বয়সের কারণে ছয়বারের ফিফা বর্ষসেরা তারকার দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে নিয়েই দল ঘোষণা করেছে ব্রাজিল। এটি মার্তার ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। নারী–পুরুষ মিলিয়ে যা সর্বোচ্চ।
ছেলেদের ফুটবলে সবচেয়ে বেশি পাঁচটি করে বিশ্বকাপ খেলছেন ছয়জন। মেসি, রোনালদো ও ম্যাথাউসের সঙ্গে এই তালিকায় আছেন মেক্সিকোর তিন ফুটবলার আন্তোনিও কারবাহাল, আন্দ্রেস গারদাদো ও রাফায়েল মার্কেজ। সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ দলে থাকার তালিকায় ওই ছয়জন ছাড়াও আছেন জিয়ানলুইজি বুফন ও গিয়ের্মো ওচোয়া। ২০২৩ বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়ে মার্তা ছাড়িয়ে গেলেন তাঁদের সবাইকে।