মালদ্বীপের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক বাংলাদেশকে দেখার আশা
প্রশ্নটা শুনতেই বাংলাদেশ দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি। মালদ্বীপের বিপক্ষে মালেতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ দিয়েই স্প্যানিশ কোচের বাংলাদেশ–অধ্যায় শুরু হয়েছিল। ২০২২ সালের মার্চের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল ২–০ গোলে। কাল সেই মালদ্বীপের বিপক্ষেই দুই আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের প্রথমটি খেলতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল।
৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে কাবরেরার চুক্তি। তার আগে এই মালদ্বীপের বিপক্ষে যদি দুটি জয় তুলে নেওয়া যায়, মন্দ হয় না। নতুন চুক্তি হবে কি না, সেটি ভবিষ্যতের প্রসঙ্গ হলেও কাবরেরা খুব করেই চান বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় মালদ্বীপের বিপক্ষে এই দুই ম্যাচ জিততে।
কাবরেরার অধীন গত তিন বছরে খুব খারাপ করেনি বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের পর মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম জয় পায় ২০২১ সালে এসে। কাবরেরা তখন কোচ না থাকলেও তাঁর অধীন মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে দুটি। প্রথমটি ২০২৩ বেঙ্গালুরু সাফে। পরেরটি গত বছর অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় লেগে। যে জয় বাংলাদেশকে নিয়ে যায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্বে। কাবরেরার কথা, ‘বোঝাই যাচ্ছে, এই সময়ে বাংলাদেশ কতটা উন্নতি করেছে। ২০২৩ সালের সাফে মালদ্বীপকে হারানোটা ছিল বিরাট উন্নতির প্রমাণ। এবারের উইন্ডোতে আমরা চাই আরও উন্নতির ছাপ রাখতে।’
তবে কাবরেরা এটাও বলেছেন, ‘মালদ্বীপ দলে প্রতিভার অভাব নেই। বিশেষ করে তাদের ফরোয়ার্ডরা দুর্দান্ত। দলটির দুর্ভাগ্য যে নানা সমস্যার কারণে গত বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার পর তারা আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলা সব সময়ই কঠিন। তবে এবার আমরা আত্মবিশ্বাসী, আমরা তাদের বিপক্ষে ভালো খেলব এবং জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ব।’
মালদ্বীপের ফুটবলে টালমাটাল অবস্থা চলছে অনেক দিন ধরেই। গত বছর অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক পর্বে মালেতে বাংলাদেশের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করার পর ঢাকায় ২–১ গোলে হেরে বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে যেতে পারেনি মালদ্বীপ। এরপর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে একপ্রকার নির্বাসনেই চলে গিয়েছিল তারা। ফেডারেশন সভাপতিও নিষিদ্ধ হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলা দূরের কথা, দেশটিতে প্রিমিয়ার লিগও হয়নি। কোচ মোহাম্মদ সুজাইন বলেছেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্বে কোয়ালিফাই করতাম, তারপরও অস্ট্রেলিয়া, লেবানন বা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে তাদের হোম ভ্যেনুতে গিয়ে খেলতে পারতাম কি না, সন্দেহ। এতটাই বাজে অবস্থা মালদ্বীপ ফুটবলের। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই ম্যাচ আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ। খেলোয়াড়েরা নিজেদের প্রমাণ করতে মরিয়া। পুরোপুরি প্রস্তুত আমরা।’
২০২১ সালের পর পরিস্থিতি যে আর আগের মতো নেই, সেটিও স্বীকার করেছেন সুজাইন, ‘মালদ্বীপ তো একসময় বাংলাদেশের কাছে ৮ গোলেও হেরেছে। সুদূর অতীতে বাংলাদেশের ধারেকাছেও মালদ্বীপ ছিল না। সেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল পুরোপুরি। আমরা বাংলাদেশকে বলেকয়ে হারিয়েছি। এখন বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উন্নতি করছে। সেই প্রমাণ তারা রেখেছে।’
বাংলাদেশ স্কোয়াডে নেই জামাল ভূঁইয়া। তাঁর বদলে কাল মালদ্বীপের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করবেন তপু বর্মণ। তাঁর অনুপ্রেরণা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী নারী দল ও নেপাল থেকে আরেকটি সাফ জিতে আসা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দল, ‘আমরা নারী দল ও অনূর্ধ্ব–২০ দলকে অভিনন্দন জানাই। দারুণ খেলেই তারা জিতেছে। আমরাও চাই মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি জিতে সবাইকে আনন্দিত করতে।’
আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করতে না পারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অসুখ। গত এক বছরে আট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ গোল করেছে মাত্র দুটি। তপুর কথা, ‘আমরা গোল করতে পারছি না, তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে ম্যাচে আমরা গোল করি, সেটি আমরা হারি না। কাল মালদ্বীপের বিপক্ষেও আমরা গোল করতে চাই।’
ভুটানের বিপক্ষে সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ দুটি অবশ্য খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী হতে দিচ্ছে না। ভুটানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। এক ম্যাচ জিতলেও হেরেছে আরেকটি ম্যাচ। কাবরেরা ভুটানের কঠিন কন্ডিশনের কথা বললেন সেই প্রসঙ্গে, ‘আমাদের ভুটানের উচ্চতায় খেলতে হয়েছে। অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলতে হয়েছে। টার্ফে খেলা সব সময়ই কঠিন। আমার কথাগুলো হয়তো অজুহাতের মতো শোনাচ্ছে। ওই সময় আমাদের খেলোয়াড়েরাও পুরোপুরি ফিট ছিল না, মৌসুম শেষে ছুটিতে ছিল। সব মিলিয়ে আমরা খারাপ করেছি। তবে কাল মালদ্বীপের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক বাংলাদেশকেই দেখবে সবাই। আমরা সমর্থকদের আনন্দ দিতে চাই। জিতে মাঠ ছাড়তে চাই।’