ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ক্যামেরুনের
সালভাদরের ফন্তে নোভা স্টেডিয়ামে গা গরম করছিলেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। ঠিক তখনই শুরু হলো ‘গোল্ডেন রুটস’ কার্যক্রম। কৃষ্ণাঙ্গ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের শেকড় খুঁজে বের করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ)। মানে খেলোয়াড়দের বংশের শেকড় কোথায়, সেটা খুঁজে বের করার কার্যক্রমের নামই গোল্ডেন রুটস।
বংশগতি অনুসন্ধানের একটি প্রতিষ্ঠান সিবিএফের এই কার্যক্রমের অংশীদার। উরুগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের ১–১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটি শুরুর আগে সেই কার্যক্রমে ব্রাজিল তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন ক্যামেরুনের অধিবাসী।
সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ ও ভিনিসিয়ুসের বাবা ভিনিসিয়ুস হোসে পাইহাও দে অলিভেইরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। ডিএনএ পরীক্ষার পর ভিনিসিয়ুসকে একটি সার্টিফিকেটও দেওয়া হয় ও স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় দেখানো হয় ভিডিও।
জেনেটিক ট্র্যাকিং প্রতিষ্ঠান আফ্রিকানঅ্যানচেস্ট্রি ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জিনা পাইজ এ নিয়ে বলেছেন, ‘নিজের শেকড়কে সম্মান দেওয়ার গভীর ইচ্ছা পোষণ করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। আফ্রিকান বংশোদ্ভুত অনেকের মতো তার বংশানুক্রমিক ইতিহাসও ক্রীতদাস প্রথা এবং বর্ণবাদের কারণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। আফ্রিকান অ্যানচেস্ট্রি ডটকমের ডিএনএ পরীক্ষা বিশ্বব্যাপী কৃষ্ণাঙ্গদের পিতৃ ও মাতৃপরিচয় বের করতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে। আমরা আবিষ্কার করেছি, ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ক্যামেরুনের টিকার গোত্র থেকে এসেছেন।’
সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ বলেছেন, ‘ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে উদ্যাপন করা মানে ব্রাজিলিয়ানদের অর্জনকেও উদ্যাপন করা। তাঁর আদি পরিচয় বের করার মাধ্যমে আমরা অর্ন্তভুক্তিমূলক সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পুনরায় নিশ্চিত করলাম। এর মাধ্যমে বিশ্ব ফুটবলে আমাদের অর্জন ও পরিচয়ে আফ্রো–ব্রাজিলিয়ান সংস্কৃতির মৌলিক প্রভাবকেও স্বীকৃতি দেওয়া হলো।’
টিকার গোত্র মধ্য আফ্রিকার জাতিগোষ্ঠী, যাদের বসবাস ক্যামেরুনে। শিল্পকলা, হস্তশিল্পের জন্য তারা পরিচিতি। নাম আছে গল্পবলিয়ে হিসেবেও। একসময় তারা যাযাবর ছিল এবং লোকমুখে প্রচলিত গল্প অনুসারে এই জাতিগোষ্ঠীর আদি নিবাস ছিল নীল নদের উপত্যকায়, যা বর্তমান সুদানে অবস্থিত।
ব্রাজিলে কৃষ্ণাঙ্গ সচেতনতা দিবস কী ব্রাজিলে কৃষ্ণাঙ্গ সমাজের অবদান উদ্যাপন ও এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে প্রতিবছর ২০ নভেম্বর এই দিবস পালন করা হয়। ষাটের দশক থেকে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে ব্রাজিলে। শুরুতে দিবসটি ১৩ মে পালন করা হতো। ১৮৮৮ সালের এই দিনে ব্রাজিলে আইন কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দাসপ্রথার বিলোপ সাধন করা হয়। পরে ক্রীতদাসপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা কুইলোমবোলাদের নেতা জুম্বির প্রতি সম্মান জানাতে ২০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুর দিন কৃষ্ণাঙ্গ সচেতনতা দিবস উদ্যাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত বছর ২১ ডিসেম্বর আইন করে ২০ নভেম্বরকে জাতীয় ছুটির দিনও ঘোষণা করা হয়েছে।