ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভবিষ্যৎ কি তিন রুশ ভাইয়ের হাতে
আমির ইব্রাগিমভ, ফুটবল দুনিয়ায় তেমন পরিচিত কোনো নাম নয়। কিন্তু রাশিয়ান বংশোদ্ভূত এ কিশোর সম্প্রতি নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছে এক ম্যাচে চার গোল করে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে গত পরশু নিউক্যাসল অনূর্ধ্ব-১৬ দলের বিপক্ষে অভিষেকে একাই চার গোল করে আমির ইব্রাগিমভ। পারফরম্যান্সের কারণে তো বটেই, চার গোল করে ইব্রাগিমভ আলোচনায় এসেছে খেলাধুলায় নিজেদের পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণেও।
শুরুতেই বলা যাক ইব্রাগিমভের কথা। তার জন্ম রাশিয়ার দেগেস্তানে এক মুসলিম পরিবারে। ১১ বছর বয়সে তার পরিবার ইংল্যান্ডে চলে আসে। এরপর তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয় শেফিল্ড ইউনাইটেডের যুব একাডেমিতে। পরে শেফিল্ড থেকে সে চলে আসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একাডেমিতে। ইউনাইটেডে এসে নিজের ফুটবল প্রতিভায় মুগ্ধ করে সবাইকে। ‘রেড ডেভিল’দের অনূর্ধ্ব-১৪ ও ১৫ দলের নেতৃত্বও দেয় ইব্রাগিমভ। এর মধ্যে ভিন্ন এক কারণে ইতিবাচকভাবে আলোচনায়ও আসে এই উদীয়মান ফুটবলার।
২০২২ সালের মার্চে ইউনাইটেডের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে টটেনহামের বিপক্ষে খেলছিল ইব্রাগিমভ। ম্যাচের একপর্যায়ে বল নিয়ে ড্রিবল করে ঢুকে পড়ে প্রতিপক্ষের বক্সে। এ সময় টটেনহাম ডিফেন্ডার তাকে ফাউল করলে পেনাল্টি দেন রেফারি। কিন্তু ইব্রাগিমভের বিশ্বাস ছিল সে ফাউলের শিকার হয়নি। পেনাল্টি নিতে গিয়ে গোলের চেষ্টা না করে আলতো টোকায় বল তুলে দেয় প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের হাতে। এমন আচরণে মুহূর্তের মধ্যে আকর্ষণের কেন্দ্রে চলে আসে ইব্রাগিমভ। দারুণভাবে প্রশংসিতও হয় এ কিশোর। এরপর ২০২২ সালের আগস্টে ক্লাবের সঙ্গে প্রি-স্কলারশিপ চুক্তিও সম্পন্ন করে ইব্রাগিমভ।
এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ইউনাইটেডের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে লিভারপুলের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের বিপক্ষে গোলও করে ইব্রাগিমভ। একই দিন লিভারপুল অনূর্ধ্ব ১৮ দলের বিপক্ষেও খেলেছে সে। দুটি ম্যাচেই জেতে ইউনাইটেড। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ইউনাইটেডের মূল দলের অনুশীলনও করেছে এই ফরোয়ার্ড। তার সঙ্গে দেখা হয়েছে ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার আলেক্স ফার্গুসনেরও।
ইব্রাগিমভ চাইলে রাশিয়া এবং ইংল্যান্ড দুই দলকেই জাতীয় দল হিসেবে বেছে নিতে পারে। জন্মসূত্রে রাশিয়া এবং বাসস্থান হিসেবে ইংল্যান্ড। এর মধ্যে অবশ্য ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৫ দলের অভিষেক হয়েছে তার। তবে চাইলে সে রাশিয়ার হয়েও খেলতে পারে।
খেলোয়াড় হিসেবে ইব্রাগিমভের সামর্থ্য কেমন, তা নিয়ে ইউনাইটেডে তাকে রিক্রুট করা কোচ রাদুসিও কিং বলেছেন, ‘তার মতো করে দৌড়াতে আমি বেশিজনকে দেখিনি। আমি তাকে ১০ নম্বর জার্সি পরে ওয়েইন রুনির জায়গায় খেলতে দেখি।’ এই কিশোরকে নিয়ে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা চাই না সে তার স্টাইল বা সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে ফেলুক। কোচ হিসেবে আমি তার মধ্যে সফল হওয়ার সব উপাদান দেখি।’
ইব্রাগিমভের অন্য তিন ভাইও যুক্ত খেলাধুলার সঙ্গে, যাদের দুজনই আবার ফুটবলার। গাজিক ও মুহাম্মদ নামে এ দুজনও খেলেছে ইউনাইটেডের বয়সভিত্তিক দলে। গাজিক কিছু সময় ম্যানচেস্টার সিটির একাডেমিতে খেলে যোগ দেয় ইউনাইটেডে। ইব্রাগিমভ ও গাজিক এরই মধ্যে ইউনাইটেডের হয়ে একসঙ্গেও খেলেছে। লিভারপুলের বিপক্ষে সে ম্যাচে ইউনাইটেড জিতেছিল ৫-৩ গোলে। ম্যাচের পর নিজেদের ইউনাইটেডের জার্সি পরা ছবি ইব্রাগিমভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছে।
ক্যাপশনে ইব্রাগিমভ লিখেছিল, ‘জয় উদ্যাপন করে এবং ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মাঠে খেলতে পেরে আনন্দিত।’ তাদের ছোট ভাই মুহাম্মদও গাজিকের মতো সিটির একাডেমি ছেড়ে ক্যারিংটনে এসেছে গত নভেম্বরে। এর আগে যমজ ভাই ফাবিও ও রাফয়েল এবং দুই ভাই গ্যারি নেভিল ও ফিল নেভিল ইউনাইটেডের হয়ে একসঙ্গে খেলেছিলেন। ভাইদের জুটি বেঁধে খেলার আরও কিছু দৃষ্টান্ত অবশ্য আছে।
তবে কোনো একদিন এই তিন ভাই একসঙ্গে ইউনাইটেডের হয়ে খেললে সেটা দারুণ এক দৃশ্যই হবে। ওহ তাদের বড় ভাই ইব্রাগিম ইব্রাগিমভের কথা তো বলাই হয়নি। তিনি অবশ্য ফুটবল নয়, খেলেন এমএমএ-তে। ১৯ বছর বয়সী এ এমএমএ ফাইটার অবশ্য ৬ ম্যাচে খেলে কোনোটিতেই হারেননি।