ঈদের দিন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সেই ম্যাচ

২০০৩ সালে ঈদুল ফিতরের দিন তাজিকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশসংগৃহীত

গত বছরও ঈদুল আজহার সময় দেশের বাইরে ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। বেঙ্গালুরুতে চলছিল সাফ ফুটবল। ঈদের আগের দিন ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল ৩-১ গোলে। ২০০৯ সালের পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে খেলার ফুরফুরে অনুভূতি নিয়েই পরদিন বেঙ্গালুরুর একটি মসজিদে সবাই মিলে ঈদের নামাজ পড়েছিলেন জামাল ভূঁইয়া-রাকিব হোসেন-তারিক কাজী-শেখ মোরছালিনরা।

২১ বছর আগে ঈদের নামাজ পড়েই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের এক ম্যাচের দিকে মনোযোগ ঘুরিয়েছিলেন হাসান আল মামুন, আলফাজ আহমেদ, আমিনুল হকরা। ২০০৩ সালের ঈদুল ফিতরের দিন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলা ছিল শক্তিশালী তাজিকিস্তানের বিপক্ষে। তখন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ক্রিকেটের হাতে যায়নি। নিয়মিতই চলে ফুটবল। তাজিকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচ হয়েছিল মিরপুর স্টেডিয়ামে, ঈদের দিন দুপুরে। ডিসেম্বর মাসের সেই ঈদে মিঠে-কড়া রোদ গায়ে মেখে ফুটবলপ্রেমীরা উপভোগ করেছিলেন সেই ম্যাচ।

পেশাদারি এ যুগে ঈদের দিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খুব বিরল ঘটনা নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এ অভিজ্ঞতা হয়েছে বেশ কয়েকবার। ২০১৯ সালে ঈদুল ফিতরের দিন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। ক্রিকেটারদের অনেকেই বেশ কয়েকটি ঈদই কাটিয়েছেন দেশের বাইরে। সে তুলনায় বাংলাদেশের ফুটবলারদের ঈদের সময় দেশের বাইরে কাটানোর অভিজ্ঞতা কম।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে একসময় ফুটবল খেলা হতো
প্রথম আলো

২০১৯ সালে লাওসের বিপক্ষে ভিয়েনতিয়েনে বিশ্বকাপের প্রাক্‌-বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ ফুটবল দল। সেই ম্যাচ হয়েছিল ঈদের পরদিন। ওই বছরই ঈদের দিন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রিকেটাররা মাঠে নেমেছিল। তবে দেশের মাটিতে ঈদের দিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ, একটু বিশেষ কিছুই। এখনো পর্যন্ত ২০০৩ সালের ঈদুল ফিতরের দিনই এমনটি হয়েছে।

আরও পড়ুন

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাসান আল মামুন খেলেছিলেন সেই ম্যাচে। তাঁর স্মৃতিতে এখনো দিনটা স্পষ্ট, ‘ঈদের দিন ম্যাচটা খেলেছিলাম তাজিকিস্তানের বিপক্ষে। হেরেছিলাম ২-০ গোলে। ঈদের সময় খেলার জন্য বিদেশে থাকার ঘটনা ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবারই ঘটেছে। কিন্তু দেশের মাটিতে ঈদের দিন ম্যাচ সেবারই খেলেছি। অন্য রকম একটা অনুভূতি ছিল। তবে দেশের জার্সিতে, দেশের জন্য খেলছি, এই ভাবনাই আমাদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছিল। মনে আছে, ম্যাচটা বিকেলে খেলে রাতেই আমরা অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে তাজিকিস্তান রওনা হয়েছিলাম।’

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক হাসান আল মামুন
ফেসবুক

ম্যাচের আগের দুই রাত পূর্বাণী হোটেলে ছিল দল। আলফাজ আহমেদের মনে পড়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ার সেই স্মৃতি, ‘সেই ম্যাচের আগে ক্যাম্প হয়েছিল বিকেএসপিতে। আগের দুই দিন আমরা ছিলাম পূর্বাণী  হোটেলে। তখন তো এসব হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ছিল না। ইন্টারনেটও সহজলভ্য নয়। পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা হতো। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়েছিলাম বায়তুল মোকাররমে।’

আলফাজ সেই ম্যাচের একটি ঘটনা আজও ভুলতে পারেন না, ‘সেই ম্যাচে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নেমেছিল আজমল হোসেন বিদ্যুৎ। খুবই এক্সাইটেড ছিল সে। কিন্তু ঈদের দিনের সেই ম্যাচে লাল কার্ড খেয়ে যায় সে। ওর সেই রাতে আর তাজিকিস্তান যাওয়া হয়নি।’

আরও পড়ুন

সে ম্যাচে মাঠ একেবারে খালি ছিল না। ফুটবল আর দেশের টানে অনেক ফুটবলপ্রেমীই উপস্থিত ছিলেন গ্যালারিতে। দর্শকদের জন্য ছিল সেটি নতুন এক অভিজ্ঞতা। তবে ২-০ গোলে দেশ হেরে যাওয়াতে ঈদের দিন নিশ্চয়ই মন কিছুটা খারাপ হয়েছিল সবার। দুশানবেতে ফিরতি ম্যাচেও বাংলাদেশ হারে ২-০ গোলে।

সেই ম্যাচের একটি ঘটনা এখনো মনে পড়ে আলফাজ আহমেদের
প্রথম আলো

বাংলাদেশের সেই ম্যাচের স্কোয়াডে যাঁরা ছিলেন: আমিনুল হক, রজনীকান্ত বর্মণ (অধিনায়ক), নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ সুজন, মতিউর মুন্না, আরমান মিয়া, ফিরোজ মাহমুদ হোসেন, আলফাজ আহমেদ, মনোয়ার হোসেন, রোকনুজ্জামান কাঞ্চন, আজমল হোসেন, হাসান আল মামুন, হাসান মাহমুদ, সাইফুল ইসলাম, মোস্তফা আনোয়ার পারভেজ, মেহেদী হাসান, বিপ্লব ভট্টাচার্য, আরিফুল কবির।