কুমিল্লার ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মোহামেডান-ইয়ংমেনস লড়াইটা চলছিল গোলশূন্য। মাত্র সাত মিনিট আগে বদলি হিসেবে মাঠে এসেছেন ফকিরেরপুল ইয়ংমেনসের উজবেক মিডফিল্ডার সারদর জাখনভ। মাঠে নামার সময় কি ভেবেছিলেন দিনের সব আলো গিয়ে পড়বে তাঁর ওপর?
যাই ভাবুন, দিনটা হলো তাঁরই। ৬৬ মিনিট দূরপাল্লার দুরন্ত এক শট নিলেন মোহামেডানের পোস্টে। এই একটা শটই চলতি প্রিমিয়ার লিগে সাদা–কালোদের অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে দিল। সেটাও লিগের প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে।
আগের ৮ ম্যাচে টানা জিতে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা মোহামেডানকে অবশেষে কেউ থামাতে পারল। বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী, পুলিশ, ফর্টিস, রহমতগঞ্জ...কেউ পারেনি। শেষ পর্যন্ত পেরেছে কিনা ১০ দলের লিগের আট নম্বরে থাকা ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস! জাখনভের দুরন্ত শটটা ডান দিকে ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি মোহামেডান গোলকিপার মোহাম্মদ সুজন।
গোল খেয়ে ম্যাচে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে মোহামেডান; কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান ফকিরেরপুলের গোলকিপার তায়েব সিদ্দিকী। কুলদিয়াতির হেড অবিশ্বাস্যভাবে সেভ করেন তিনি। বাঁচিয়েছেন আরও কয়েকটি গোল। ম্যাচশেষে তায়েবের হাতেই উঠেছে সেরার পুরস্কার।
যোগ করা আট মিনিটের শেষ মুহূর্তে দলের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ফকিরেরপুলের রফিক। গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করেছেন তিনি। মোহামেডান আগের আট ম্যাচে ২১ গোল করেছে, যার ১৩টি করেছে দ্বিতীয়ার্ধে। কিন্তু আজ গোল করতে পারেনি।
২০০৭ সালে পেশাদার ফুটবল চালুর পর এই প্রথম দেশের শীর্ষ লিগে খেলছে ফকিরেরপুল। পেশাদার যুগে এই প্রথম তারা হারিয়েছে মোহামেডানকে। যেমনটা আশি-নব্বই দশকে তারা প্রায়ই বড় দলকে হারিয়ে খবরের শিরোনামে আসত। অনেক দিন পর আজ আবার এল। খুব স্বাভাবিকভাবেই জয়ের পর উৎসবে মেতে ওঠে ফকিরেরপুলের ফুটবলাররা। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ মোহামেডান তৎকালীন ঢাকা লিগে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় ক্লাবটির টানা ৭৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর কীর্তি থামে ফকিরেরপুলের কাছে হেরে।
মোহামেডানের এই হারে জমে উঠল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। অন্যদের সঙ্গে কমল সাদা–কালোর পয়েন্টের ব্যবধানও। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট পাওয়া আবাহনী প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে ব্রাদার্সের বিপক্ষে কাল জিতলে মোহামেডানের সঙ্গে তাদের ব্যবধান নেমে আসবে ২ পয়েন্টে। এরই মধ্যে কিংসের সঙ্গে মোহামেডানের ব্যবধান ১০ থেকে কমে এসেছে ৭–এ। কিংস আজ বড় জয় দিয়ে প্রথম পর্ব শেষ করেছে।
গাজীপুরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে কিংস প্রথমার্ধেই করেছে ৩-০। শেষ পর্যন্ত স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-০। পাঁচ গোলের তিনটিই হয়েছে হেডে। ১১ মিনিটে কিংসের ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক মিগুয়েলের পাস থেকে তাঁরই স্বদেশি জোনাথনের গড়ানো প্লেসিংয়ে ১-০।
৩০ মিনিটে জুনিয়র সোহেল রানা গোললাইনের খুব কাছ থেকে হেডে করেন ২-০। ৩৯ মিনিটে মজিবুর রহমান আলতো করে বলে তুলে দেন গোলের সামনে। তপুর হেডে হয় ৩-০। চলতি প্রিমিয়ার লিগে এটি তপুর তৃতীয় গোল এবং মৌসুমে ষষ্ঠ গোল। ৬৬ মিনিটে রফিকের ক্রসে হেডে ফরোয়ার্ড রকিব করেন ৪-০। শেষ গোলটাই দিনের সেরা। মিগুয়েল বক্সের ঠিক ওপর থেকে বাঁ পায়ের ফ্রি-কিকে বল জালে পাঠান।
আজ আরেক ম্যাচে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে রহমতগঞ্জকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আগের আট ম্যাচের পাঁচটিতেই হেরে যাওয়া পুলিশ এফসি। ২৫ মিনিটে ওশির গোলে রহমতগঞ্জ এগিয়ে যাওয়ার পর জোড়া গোলে পুলিশ এফসিকে জিতিয়ে দেন আল–আমিন।
মোহামেডান, আবাহনীর কাছে হারের পর লিগে এটি রহমতগঞ্জের টানা তৃতীয় হার। সপ্তম রাউন্ড পর্যন্ত দুইয়ে থাকা দলটি পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগে আপাতত চারে পুরান ঢাকার দলটি। ১৭ পয়েন্ট নিয়ে কিংস উঠে এসেছে তিনে।