শীর্ষ পর্যায়ে খেলার আগেই স্বাধীন বাংলা দলে খেলেছিলেন প্রয়াত আমিনুল
‘ওর সঙ্গে সব সময়ই যোগাযোগ ছিল আমার। ও এমন একজন মানুষ, ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেই হতো’—স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রয়াত সদস্য আমিনুল ইসলাম সুরুজ প্রসঙ্গে কথাটা বলেছেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। আমিনুল ইসলাম সুরুজ গতকাল সোমবার ৭৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে যখন দেশের শীর্ষ ফুটবলাররা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করতে যাচ্ছেন, তখনই আমিনুলের সঙ্গে পরিচয় প্রতাপ শঙ্কর হাজরার। ওই সময় দেশের প্রতিষ্ঠিত ক্রীড়াবিদদের একজন প্রতাপ শঙ্কর। আমিনুল এসেছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অংশ হওয়ার জন্য ট্রায়াল দিতে।
সেই স্মৃতি স্মরণ করে প্রতাপ শঙ্কর বলেন, ‘ট্রায়ালেই সুরুজকে প্রথম দেখি। ওর পায়ের কাজ ছিল দারুণ। রাইট ইনে খেলত, প্রয়োজনে রাইট ব্যাক পজিশনেও খেলেছে। দ্রুতগতির খেলোয়াড় ছিল। তবে খেলোয়াড়ি যোগ্যতা ছাপিয়েও সুরুজের মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকত।’
আমিনুল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে প্রথম বড় পর্যায়ের ম্যাচ খেলেন বলে জানালেন প্রতাপ, ‘সুরুজ যখন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে ট্রায়াল দিতে আসে, তখনো সে ঢাকার ফুটবলে নাম লেখায়নি। ভারতের মাটিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জার্সিতেই সে প্রথম বড় পর্যায়ের ম্যাচ খেলেছিল। স্বাধীনতার পরে সত্বর দশকজুড়ে সুরুজ প্রথমে মোহামেডানে ও পরে আবাহনীতে খেলেছে।’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে আমিনুলের স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল প্রতাপ শঙ্করের, ‘সে আমাদের দলটাকে মাতিয়ে রাখত। বরিশালের ছেলে সুরুজ। দারুণ রসিকও ছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় প্রবাসে পরিবার–পরিজনকে ছেড়ে অনিশ্চিত জীবনযাপনের মধ্যেও সুরুজের মুখে হাসি দেখেছি। ওর কথায় আমরাও হেসেছি। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের যাবতীয় সাংগঠনিক কাজে ওকে পেতাম।’
মৃত্যুর আগপর্যন্ত প্রতাপ শঙ্কর হাজরার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আমিনুলের, ‘প্রায়ই ফোনে কথা হতো। ওর অসুস্থতার কথা জানতাম।’
আমিনুল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে কয়টি ম্যাচ খেলেছেন, আজ এত বছর পর মনে করতে পারছেন না প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ১৬টি ম্যাচ খেলেছিলাম। সুরুজ বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছিল। আসলে ওই সময় সুরুজ উঠতি ফুটবলার ছিল। ঢাকা ফুটবল লিগেও তাঁর অভিষেক হয়নি। তবে সে দারুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় ছিল, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের শীর্ষ ফুটবলারদের নিয়ে গড়া স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে সে নিজের যোগ্যতা দিয়েই জায়গা করে নিয়েছিল।’