পেলের যত জাদুকরি মুহূর্ত

পেলে রেখে গেছেন অনেক জাদুকরি মুহূর্তরয়টার্স

'এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর'— জীবনানন্দ দাশের অমর এই কবিতার মতো একবারই একজন হয়ে এসেছিলেন পেলে। ফুটবলের রাজা তিনি। আজ চলে গেলেন, আর ফিরবেন না। তবে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য, মানুষের জন্য রেখে গেছেন জাদুকরি সব মুহূর্ত। পেলে বিদায়ী বেলায় সেই মুহূর্তগুলোর কিছু এখানে তুলে ধরা হলো।

অভিষেকে গোল

১৯৫৬ সালে পেশাদার ফুটবলে প্রথম অভিষেক হয় পেলের। তখন জাদুকরের বয়স মাত্র ১৫ বছর। সফল ট্রায়াল শেষে মাত্র কদিন আগেই সান্তোসে যোগ দেন পেলে। আর মাঠে নেমে দলের ৭-১ জয়ে গোল করেন পেলে।  এরপর ১৯৫৭ সালের জুলাই মাসে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেকেও গোল করে তাক লাগিয়ে দেন ফুটবলের রাজা। কৈশোরে বড় বার্তা দিয়ে মারাকানায় ব্রাজিলের ২-১ গোলে জয়ের পথে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন 'কালো মানিক' খ্যাত এই ফুটবলার।

রাজার জন্ম

পেলে বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে চেনান সুইডেনে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে। যদিও নিজেকে চেনানোর জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। যখন ওয়েলসের ব্যাকলাইন কাঁপিয়ে গোল করে দলকে জয় এনে দেন ফুটবলের রাজা।
এরপর সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার ঘোষণাটাও যেন দিয়ে দেন পেলে। আর নিজের অমরত্ব নিশ্চিত করতে বেছে নেন ফাইনাল ম্যাচটিকে। যেখানে সুইডেনের বিপক্ষে ৫-২ গোলের জয়ে তাঁর প্রথম গোলটি এখনো সর্বকালের সেরা গোলের একটি বিবেচিত হয়ে থাকে। আর এই বিশ্বকাপ দিয়ে জন্ম হয় সর্বকালের সেরা এক ফুটবলারের।

মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন

১৯৬২ সালে ক্লাব পর্যায়ে সান্তোসকে মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন করে নিজের উচ্চতাটাকে আরেকটু বাড়িয়ে নেন পেলে। সেবার কোপা লিবার্তিদোসে পেনারোলের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ম্যাচ যখন সমতায়, তখন নিরপেক্ষ ভেন্যু এস্তাদিও মনুমেন্তালের প্লে অফে পেলেই সান্তোসের তরি পার করান। সে ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর ম্যাচের ফল বদলে দেওয়া খেলা ইতিহাসের পাতাতে অক্ষয় হয়ে আছে এখনো। যেটি ছিল সান্তোসের প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান ট্রফি।


যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছিলেন পেলে

পেলের কিংবদন্তি শুধু ফুটবল মাঠেই আটকে থাকেনি। এমনকি যুদ্ধের মঞ্চেও দারুণ প্রভাব রেখেছিলেন এই অতিমানব।
ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৭ সালে। নাইজেরিয়ায় খেলতে গিয়েছিল সান্তোস। পেলের খেলা দেখতে  ৪৮ ঘন্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল নাইজেরিয়া ও বায়াফ্রা। বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য এক ঘটনা হয়ে আছে এটি।

১০০০ গোল

এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে যা বিতর্কের উর্ধ্বে তা হলো—১৯৬৯ সালের ১৯ নভেম্বর সান্তোস ও ভাস্কো দা গামার সমর্থকেরা ১০০০তম গোলের জন্য দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছিল পেলেকে। যখন পেলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তখন তাঁর বয়স ৩০ হয়নি।


বিশ্বকাপে অমরত্ব

১৯৫৮ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। ৬২ বিশ্বকাপে নায়ক হতে দেয়নি চোট। তবে যেটুকু অস্বস্তি তা দূর করে দেন ৭০—এ। ব্রাজিলের হয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতে ফুটবল সিংহাসনের একচ্ছত্র রাজার জায়গা দখলে নিয়ে নেন পেলে। এমনকি ডিয়েগো ম্যারাডোনা উত্থানের আগ পর্যন্ত অন্য কারও পেলের পাশে বসার সাহসও হয়নি। পেলে এমনই। একজন!