বাংলাদেশের ফিজিও জীবন বাঁচালেন ভুটানি তরুণের
থিম্পুর চাংলিমিথান স্টেডিয়ামে গতকাল বাংলাদেশ–ভুটান প্রথম ফিফা প্রীতি ম্যাচের প্রথমার্ধের শেষ মিনিটের কথা। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন গোড়ালিতে চোট পেলেন। তাঁকে শুশ্রূষা করতে মাঠে ঢুকেছিলেন বাংলাদেশ দলের ফিজিও আবু সুফিয়ান।
চোটের অবস্থা বুঝে রাকিবকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি স্ট্রেচার ডাকেন। কিন্তু তখনো ফিজিও জানতেন না, রাকিবের চোট নয়, এক স্ট্রেচার বাহকের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে তাঁকে।
রাকিবকে স্ট্রেচারে তুলে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় চার স্ট্রেচার বাহকের একজন হঠাৎ জ্ঞান হারান। সবাই হতভম্ব। ২৩–২৪ বছর বয়সী সেই স্ট্রেচার বাহকের হৃদ্যন্ত্রে কোনো সমস্যা হয়নি তো! তিনি হার্ট অ্যাটাক করেননি তো!
আবু সুফিয়ান তখন রাকিবকে ফেলে সেই স্ট্রেচার বাহকের চিকিৎসা শুরু করেন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন সিপিআর (কৃত্রিম শ্বাস এবং রক্তসঞ্চালন শুরু করার পদ্ধতি) দেওয়ার। ওই সময় স্ট্রেচার বাহকের কোনো হৃৎস্পন্দন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
ঘটনাটা মনে করিয়ে দেয় ২০২০ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ডেনমার্ক–ফিনল্যান্ড ম্যাচের কথা। ডেনমার্কের ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন সেদিন মাঠেই জ্ঞান হারিয়েছিলেন। আক্রান্ত হয়েছিলেন হৃদ্রোগে। প্রাথমিক সেবার পর হাসপাতালে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়ে অনেক দিন পর মাঠে ফিরে এসেছিলেন।
আবু সুফিয়ান আজ প্রথম আলোকে থিম্পু থেকে টেলিফোনে বলছিলেন, ‘ভুটানের ছেলেটির খিঁচুনি বা মৃগী রোগ ছিল। এই রোগে হার্ট অ্যাটাকও হয়ে যেতে পারে। আমি ওকে ১০ মিনিটের মতো সিপিআর করে পালস খুঁজে পাই। দ্রুততার সঙ্গে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সে এখন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছে।’
ওই মুহূর্তে রাকিবের গোড়ালির চোটের চেয়েও স্ট্রেচার বাহকের জীবন তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল মানবিক কারণেই। আবু সুফিয়ান তা নিয়ে বলছিলেন, ‘রাকিব ভাইয়ের চোট ছিল পায়ে। কিন্তু দেখলাম চোখের সামনেই একজন স্ট্রেচার বয় জ্ঞান হারিয়েছেন। দ্রুত চিকিৎসা না দিলে সে মারাও যেতে পারে। তখন তাঁকে সিপিআর করাটা কর্তব্য মনে করেছি। তখন একটা বিষয়ই মাথায় ছিল, যেভাবেই হোক ছেলেটাকে বাঁচাতে হবে। ভালো লাগছে একটা মানুষের জীবন বাঁচাতে পেরেছি। ছেলেটা এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়। তবে দোয়া করি, সে যেন সুস্থ হয়ে ওঠে।’
তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেটির নামও জানতে ভুলে গেছেন সুফিয়ান, ‘নাম জানাটা বড় ব্যাপার নয়। সে বেঁচে আছে, এটাই আসল।’
সৈয়দপুরের ছেলে আবু সুফিয়ান গণস্বাস্থ্য থেকে ফিজিও থেরাপির ওর ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছেন। কাজ করেছেন বিভিন্ন ক্লাবে ফিজিও হিসেবে। যেকোনো খেলাতেই ফিজিও বড় ভূমিকা রাখেন। খেলোয়াড়দের চোট থেকে সারিয়ে তোলা, খেলার জন্য পুরো ফিট করে তোলার সঙ্গে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসায় বড় ভূমিকা থাকে ফিজিওর। একসময় বিদেশ থেকে ফিজিও আনত বাংলাদেশের ক্লাব ও জাতীয় দল। এখন ফিজিও বেরিয়ে আসছেন বাংলাদেশ থেকেই। এবং তাঁরা ভালো কাজও করছেন। সুফিয়ান তো ভুটানি তরুণের জীবন বাঁচিয়ে প্রশংসা পাচ্ছেন ভুটানে।