ম্যারাডোনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়াটাই ভুল হয়েছিল, বললেন চিকিৎসক
বুয়েনস এইরেসের সান ইসিদরো আদালতে বিচার চলছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলোয় তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত সাতজন চিকিৎসক এই মামলায় অভিযুক্ত। ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। গতকাল শুনানিতে এক চিকিৎসক নিজের সাক্ষ্যে বলেছেন, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর ম্যারাডোনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়াটা ভুল হয়েছে।
মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সপ্তাহ দু-এক পর ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর মারা যান ম্যারাডোনা। বুয়েনস এইরেসে এক অভিজাত এলাকায় ভাড়া করা বাড়িতে জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে ’৮৬ বিশ্বকাপের কিংবদন্তির। সে বাসাকে ‘হোম হসপিটাল’ বানিয়ে ম্যারাডোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ম্যারাডোনার দুই কন্যা দালমা ও জিয়ানিন্নার পক্ষের আইনজীবী ফের্নান্দো বার্লান্দো এর আগে শুনানিতে দাবি করেন, সেই বাসা কোনো রোগীর থাকার জন্য উপযোগী ছিল না, ‘বাসাটা ছিল শূকরের খোঁয়াড়ের মতো, এতটা নোংরা খুব কমই দেখা যায়।’
আদালতে গতকাল সাক্ষ্য দেন ম্যারাডোনার দীর্ঘ দুই দশকের চিকিৎসক মারিও আলেহান্দ্রো সেইতের, ‘তাঁর একটি পুনর্বাসন ক্লিনিকে যাওয়া উচিত ছিল...সেটা তাঁর জন্য আরও সুরক্ষিত জায়গা হতো।’ এর আগে শুনানিতে ম্যারাডোনার মরদেহের ময়নাতদন্তে অংশ নেওয়া ফরেনসিক চিকিৎসক মরিসিও কাসিনেল্লিও আদালতকে বলেন, যে বাড়িতে ম্যারাডোনা মারা যান, সেটা ‘ঘরোয়া হাসপাতালের জন্য বেমানান’ বলে মনে হয়েছে তাঁর।
মারিও আলেহান্দ্রো ম্যারাডোনার মাদকাসক্তির চিকিৎসা করেছেন। আদালতে তিনি বলেছেন, ‘রোগীকে যেহেতু জানি, আমি বাসায় চিকিৎসায় পরামর্শ দিতাম না; তাঁকে সামলানো সহজ ছিল না। সেটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বাজে সময়ে চিকিৎসালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।’
মোট আটজন ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলোয় তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন। অবহেলার অভিযোগে বিচার চলছে সাতজনের। দিনের বেলায় ম্যারাডোনাকে দেখভাল করতেন যে নার্স, তাঁর বিচার করা হবে আলাদাভাবে। অবহেলার অভিযোগে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন একজন নিউরোসার্জন, একজন মনোরোগবিদ, একজন মনোবিজ্ঞানী, একজন মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর, একজন নার্স কো-অর্ডিনেটর, একজন চিকিৎসক এবং রাতের পালার নার্স। তাঁরা প্রয়োজনীয় ও যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে না পারায় ম্যারাডোনা মারা গেছেন, এ অভিযোগে করা মামলার বিচারকার্যক্রম শুরু হয়েছে গত মাসে।
মারিও আলেহান্দ্রো আরও জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন পরামর্শক, সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। ক্লিনিকের পরিচালকেরা তাঁকে বলেছেন, ‘তাঁরা বাসায় চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
এর আগে আর্জেন্টিনার টিভি চ্যানেল এলত্রেসে প্রচারিত অনুষ্ঠান ‘লা নোচে দে মিরথা’য় আইনজীবী বার্লান্দো দাবি করেন, ‘“এটা প্রমাণিত”, চিকিৎসার দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা “কিছু একটা” করতে পারতেন। তাঁদের মধ্যে কথাও হয়েছে, যেখানে আপনি শুনতে পাবেন, তাঁরা বলছেন, “এল গোর্দো” (ফ্যাট ওয়ান/মোটু) চলে যাচ্ছেন। এল গোর্দো মারা যাচ্ছেন।’
বিচারকাজে কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, ম্যারাডোনাকে যে বাসায় নেওয়া হয়েছিল, সেখানে চিকিৎসার সরঞ্জামের অভাব ছিল।
ম্যারাডোনার মরদেহের ময়নাতদন্তেও অংশ নেন মারিও আলেহান্দ্রো। আদালতে তিনি বলেছেন, ‘সব প্রমাণ বলছে, পরিবর্তনযোগ্য চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।’ সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ফুটবলারের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তীব্র পালমোনারি এডেমা (ফুসফুসে পানি জমা) ও হার্ট ফেইল মৃত্যুর কারণ।’
অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিদের ৮ থেকে ২৫ বছরের জেল হতে পারে। মামলায় প্রায় ১২০ জনের সাক্ষ্যদানের কথা রয়েছে, যা চলতে পারে আগামী জুলাই পর্যন্ত।