ক্যারিয়ারে কম শিরোপা জেতেননি ইয়ুর্গেন ক্লপ। লিভারপুলকেও এনে দিয়েছেন বিস্মৃতপ্রায় প্রিমিয়ার লিগের স্বাদ, জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগও। তবে গতকাল চেলসিকে হারিয়ে জেতা লিগ কাপ বা কারাবাও কাপের শিরোপাটিকেই ‘সবচেয়ে বিশেষ’ ট্রফি বলছেন এই জার্মান ম্যানেজার।
ওয়েম্বলিতে ভার্জিল ফন ডাইকের ১১৮ মিনিটের গোলে চেলসিকে হারায় লিভারপুল। এ নিয়ে রেকর্ড দশমবার লিগ কাপ জিতল দলটি। ক্লপের কাছে এ শিরোপা বিশেষ মনে হচ্ছে তাঁর দলের শক্তিমত্তার কারণে। চোটের কারণে এ ম্যাচে খেলেননি মোহাম্মদ সালাহ, ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আরনল্ড, দিয়োগো জোতা, দারউইন নুনিয়েজ, আলিসন বেকার ও জোয়েল মাতিপের মতো প্রথম সারির খেলোয়াড়েরা।
তাঁদের অনুপস্থিতিতে ক্লপ নামান অনভিজ্ঞ এক দল। ২০ বছর বয়সী কনর ব্র্যাডলি ও হার্ভি এলিয়ট ছিলেন শুরু থেকেই, এরপর আসেন ১৯ বছর বয়সী ববি ক্লার্ক ও জেমস ম্যাককনেল, ১৮ বছর বয়সী জেইডেন ড্যানস ও ২১ বছর বয়সী জারেল কানসাহ। চেলসি পেরে ওঠেনি সে অনভিজ্ঞ দলের সঙ্গেই।
‘বাচ্চা’দের নিয়ে জেতা এ শিরোপাকে তাই বিশেষ কিছু মনে হচ্ছে এ মৌসুম শেষেই লিভারপুলকে বিদায় বলতে চলা ক্লপের, ‘২০ বছরের বেশি ক্যারিয়ারে আমার কাছে পরিষ্কারভাবে সবচেয়ে বিশেষ ট্রফি এটিই। এটি একেবারেই আলাদা।’
অ্যানফিল্ডের ক্লাবটিতে ৯ বছরে সপ্তম বড় ট্রফি জেতার পর তিনি বলেছেন, ‘মাঝে লোকে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি কোনো কিছু নিয়ে গর্বিত কি না। ব্যাপারটা ঠিক সোজাসাপটা নয়। আরেকটু গর্বিত যদি হতে পারতাম! তবে আজকের (গতকাল রাত) অনুভূতি সত্যিই দুর্দান্ত। এখানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আমি গর্বিত। আমাদের একাডেমি নিয়ে, কোচদের নিয়ে গর্বিত, গর্বিত অনেক কিছু নিয়েই। এটা একেবারেই অসাধারণ।’
ক্লপ ভুল প্রমাণ করেছেন প্রিমিয়ার লিগে প্রচলিত পুরোনো একটি কথাও—বাচ্চাদের নিয়ে কিছু জেতা যায় না। লিভারপুলেরই সাবেক ডিফেন্ডার অ্যালান হানসেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তখনকার ম্যানেজার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় বলেছিলেন সে কথা। ফার্গুসনের তরুণ সে দলে ছিলেন ডেভিড বেকহাম, পল স্কোলস, গ্যারি নেভিলের মতো পরবর্তী সময়ের কিংবদন্তিরা।
গতকাল হানসেনের সেই কথাও প্রথমবারের মতো শুনেছেন ক্লপ, ‘আমাকে বলা হয়েছে ইংরেজি ওই প্রবাদের কথা—বাচ্চাদের নিয়ে কিছু জেতা যায় না। আগে জানতাম না। দারুণ লেগেছে। ফুটবলে আগে ঘটেনি, এমন কিছু কি করতে পারবেন? অনেক কঠিন। যদি একাডেমির বাচ্চারা এসে চেলসির মতো একটা ক্লাবের বিপক্ষে জেতে, সে গল্পটা দুর্দান্ত।’
ওয়েম্বলিতে এ ম্যাচই হতে পারে ক্লপের শেষ। তবে সেসব নিয়ে ভাবছেন না তিনি, ‘কী রেখে যাচ্ছি, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। এ জন্য এখানে আসিনি। ওয়েম্বলিতে হয়তো আমার শেষ ম্যাচ, তার সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক নেই। বাচ্চাদের চোখেমুখে যে অনুভূতি, সেটি দেখেছি। এ স্মৃতিই আমার সঙ্গে আজীবন থাকবে।’
ক্লপের কাছে যখন এ শিরোপা বিশেষ কিছু মনে হচ্ছে, জার্মান এ কোচকেও বিশেষ বলছেন তাঁর ‘বাচ্চা’রা। কনর ব্র্যাডলি স্কাই স্পোর্টসকে যেমন বলেছেন, ‘সে বিশেষ একজন কোচ। তার সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। তার সঙ্গে যা কিছু সম্ভব, জিততে চাই।’
আর ৭২তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামা ক্লার্ক বলেছেন, ‘যখন সে আমার নাম ডেকে বলল যে আমি নামছি, অদ্ভুত এক অনুভূতি। ক্লপ আপনাকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে, স্বাধীনতা দেবে। নিজের কাজটি করতে দেবে।’