লিভারপুলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার এখন ফ্রাইড চিকেন বিক্রেতা
শৈশবে আর্সেনাল ছিল তাঁর পছন্দের ক্লাব। থিয়েরি অঁরি পছন্দের খেলোয়াড়। ফরাসি কিংবদন্তির মতো কিছু হওয়ার প্রতিভাও তাঁর ছিল। ওয়েস্ট ব্রমউইচ আলবিওনের যুব দল থেকে ১৪ বছর বয়সে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল লিভারপুল। ইংল্যান্ডের তারকা স্ট্রাইকার রাহিম স্টার্লিংও তখন লিভারপুলের একাডেমিতে। স্টার্লিংয়ের সঙ্গেই তাঁর তুলনা উঠত। লিভারপুলও তাঁর মধ্যে স্ফুলিঙ্গ দেখেছিল। নইলে মাত্র ১৬ বছর ৬ দিন বয়সে তাঁকে বেঞ্চ থেকে মাঠে নামিয়ে দিত না।
কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কী লীলা! ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জেরোম সিনক্লেয়ার লিভারপুলের হয়ে সেই যে ইতিহাস গড়লেন, সেটাই হয়ে রইল তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ অর্জন। ভালো কথা, ইতিহাসটা হলো লিভারপুলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ড, যা আজও কেউ ভাঙতে পারেননি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক জানিয়েছে, শৈশবেরই ক্লাব ওয়েস্ট ব্রমউইচের বিপক্ষে সেদিন ইতিহাস গড়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর সিনক্লেয়ারকে সতীর্থরা পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন। লিগ কাপে সেই ম্যাচ খেলে ফেরার পর সিনক্লেয়ার বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
৮ বছর বয়স থেকে খেলেছেন ওয়েস্ট ব্রমউইচের বয়সভিত্তিক দলে। জন্মেছিলেন বার্মিংহামে, সেই এলাকারই ক্লাব ওয়েস্ট ব্রমউইচ। ইতিহাস গড়তে এর চেয়ে যথোপযুক্ত প্রতিপক্ষ সিনক্লেয়ারের জন্য আর হয় না।
পরের এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সিনক্লেয়ারের সেই কীর্তির কাছাকাছি আসতে পেরেছেন শুধু হার্ভে এলিয়ট। ২০১৯ সালে লিগ কাপে ১৬ বছর ১৭৪ দিন বয়সে লিভারপুলের হয়ে অভিষেক ঘটে এলিয়টের। লিভারপুলের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে মাঠে নামা খেলোয়াড় কে—এই কুইজের জবাব এখনো জেরোম সিনক্লেয়ার। কিন্তু প্রতিভা হারিয়ে যাওয়ার গল্পগাথায়ও সিনক্লেয়ারের নামটা ওপরের দিকে থাকবে।
২০১৬ সালে লিভারপুল তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আগে খেলেছেন মাত্র ৫ ম্যাচ। একটি গোল করেছিলেন ‘অলরেড’দের হয়ে ২০১৫-১৬ এফএ কাপে এক্সেটের সিটির বিপক্ষে। সেই সিনক্লেয়ার এখন কী করেন, জানেন?
ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলা ২৬ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড সানকে নিজেই বলেছেন সে কথা, ‘লিভারপুলের ইতিহাসে আমি সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়। তবে ১০ বছর পর সর্বশেষ ক্লাব থেকে ছাঁটাই হয়ে এখন আমি বার্মিংহামে ফ্রাইড চিকেনের দোকান চালাই।’
লিভারপুল ছেড়ে ২০১৬ সালে ওয়াটফোর্ডে যোগ দেন সিনক্লেয়ার। ভিকারেজ রোডের এই ক্লাবেও সেভাবে খেলার সুযোগ পাননি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে খেলেছেন মাত্র ৫ ম্যাচ। ওয়াটফোর্ড থেকে ধারে খেলেছেন বার্মিংহাম সিটি, সান্ডারল্যান্ড, অক্সফোর্ড ইউনাইটেড, ভিভিভি ভেনলো (ডাচ ক্লাব) ও বুলগেরিয়ার সিএসকেএ সোফিয়ায়। ২০২১ সালে ওয়াটফোর্ডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই ক্লাবহীন হয়ে পড়েন সিনক্লেয়ার।
গত বছর লিগ ওয়ানের দল অক্সফোর্ড ইউনাইটেডে ট্রায়াল দিয়েছিলেন। কিন্তু স্থায়ী চুক্তি করতে রাজি হয়নি অক্সফোর্ড। বার্মিংহামে ফিরে সিনক্লেয়ার এখন ডাডলি সড়কে মরলি’র ফ্রাইড চিকেনের একটি শাখা চালাচ্ছেন। তিনি দোকানটির মালিক।
অথচ ২০১১ সালেও সিনক্লেয়ারের ভাগ্য অন্য রকম ছিল। তখন লিভারপুল একাডেমির দায়িত্বে থাকা ফ্রাঙ্ক ম্যাকপারল্যান্ড অ্যাথলেটিক-এর কাছে সেই স্মৃতিচারণা করেছেন, ‘বিশ্বের সব বড় বড় ক্লাব তখন জেরোমকে চেয়েছে। ১৪ বছর বয়সে তাকে দলে ভেড়াতে পারায় আমরাও খুশি ছিলাম। এক স্কাউট তার কথা বলেছিল...২ লাখ পাউন্ডে চুক্তিটা করে ফেলি।’ তখন লিভারপুলের একাডেমিতে থাকা বোল্টন ওয়ান্ডার্সের ফরোয়ার্ড জর্ডান উইলিয়ামসও স্মরণ করলেন সিনক্লেয়ারকে, ‘সে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর তার সঙ্গে খেলেছি। ওই বয়স পর্যন্ত সে ছিল আমার দেখা সেরা স্ট্রাইকার।’
সিনক্লেয়ারের ক্যারিয়ার এগোতে না পারার পেছনে ইনজুরিও ছিল। ম্যাকপারল্যান্ডের ভাষায়, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল চোট। ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত তেমন কিছুই হয়নি। কিন্তু এরপর টানা কয়েকবার চোটে পড়েছে। লিভারপুলে সে কিছু করতে পারেনি, এটা দুঃখজনক।’
টুইটারে সিনক্লেয়ারের অনুসারীসংখ্যা ৭২ হাজার, ইনস্টাগ্রামে প্রায় ৬৬ হাজার। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব কমই পোস্ট করেন সিনক্লেয়ার। বোঝাই যায়, ফুটবল থেকে দূরে সরে এসেছেন। খেলায় আর কখনো ফিরবেন কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়।
নিজের ক্যারিয়ার শেষ হলেও উঠতি তরুণ খেলোয়াড়দের পরামর্শ দিয়েছেন সিনক্লেয়ার, ‘ফুটবলার হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা হলো ভালো কিংবা খারাপ সময় বেশি আবেগতাড়িত হয়ে পড়া ক্ষতি করে। একেবারে পর্দার আড়ালেও থাকা যাবে না আবার খুব বেশি সামনেও থাকা যাবে না।’