২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কাহিলদের সেদিন ‘মানুষ’ ভেবেও মামুনুলদের শেষ রক্ষা হয়নি, আজ কী হবে

ছবিটি গত বছর মেলবোর্নে দুই দলের ম্যাচের। সে ম্যাচে ৭ গোল হজম করেছিল বাংলাদেশএএফপি

একটা সময় ফুটবল মাঠে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দেখা হওয়া ছিল স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। ২০১৫ সালে পূরণ হয় সেই স্বপ্ন। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল এশিয়ার তখনকার এক নম্বর দল অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচ যতটা না ভীতির, তার চেয়ে বেশি ছিল রোমাঞ্চকর। গোল বেশি হোক, সমস্যা নেই। একটি বিশ্বমানের দলের সঙ্গে খেলার দুর্লভ সুযোগ তো মিলেছে। তাতে শেখা যাবে অনেক কিছুই। এই ছিল ভাবনা।

প্রসঙ্গটা আসছে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আজ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ ঘিরে। ফুটবল মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুই দলের এটি চতুর্থ লড়াই। বিকেল পৌনে পাঁচটায় শুরু ম্যাচ।

আরও পড়ুন

চলুন দেখা যাক অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এযাবৎ বাংলাদেশের খেলা তিনটি ম্যাচ কেমন ছিল। ফল আপনি অনুমান করে নিতেই পারেন। তবু নির্দিষ্টভাবে বললে ৩ ম্যাচে ১৬ গোল খাওয়ার একটা অধ্যায় এতে রচিত হয়েছে।

৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫: অস্ট্রেলিয়া ৫-০ বাংলাদেশ

২০১৫ সালে দুই দলের প্রথম লড়াইয়ের আগে পার্থে যে সংবাদ সম্মেলন হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম যা বলছিলেন, তা নিয়ে প্রথম আলোর খেলার পাতায় শিরোনাম হয়েছিল, ‘কাহিলদের মানুষই ভাবছেন মামুনুল’। কাহিল মানে টিম কাহিল। তখনকার অস্ট্রেলিয়ার দলর সবচেয়ে বড় তারকা। তাঁকে এক বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা যদি গোলশূন্য হয়?

কাহিল ভেতরে-ভেতরে রেগে ছিলেন কি না, জানা নেই। তবে ভদ্রতা বজায় রেখে বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য এখন হল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করাও হতাশার।’ এক কথাতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন সব। হল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করাও যিনি মানতে পারেন না, তাঁর কাছে বাংলাদেশের সঙ্গ ড্র মানে জীবনের সবকিছু হারানোর মতোই। কাহিল তাই সেদিন বলে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র করাও হবে বিরাট এক অঘটন। ড্র নিয়ে সেদিন এসব কথা ছিল স্রেফ কথার কথা। তখন রসিকতাও ছিল, বাংলাদেশ না কয় গোলে ভাসে! বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৫ গোলে ভেসেছিল। অবশ্য এর চেয়েও আরও বড় অনেক বড় পরাজয় আছে বাংলাদেশের ফুটবলে।

২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ
প্রথম আলো

তখন সাবেক ফুটবলার বাদল রায় (প্রয়াত), হাসানুজ্জামান বাবলু, আবদুল গাফফারা বাফুফে ভবনে আড্ডায় বলেছিলেন, কম গোল খেয়ে এলে মানসম্মানটা বাঁচে আরকি! অধিনায়ক মামুনুলও সম্মান বাঁচানোর দিকেই জোর দিয়েছিলেন। এই অস্ট্রেলিয়া দলে তখন ছিলেন ইউরোপসহ বড় বড় লিগে দাপিয়ে বেড়ানো ফুটবলার।

আরও পড়ুন

চোটগ্রস্ত অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মলে জেভনাকের বদলে কাহিল ছিলেন ‘সকারু’দের অধিনায়ক। এক দশক ধরে সে সময় তিনিই ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সেরা ফুটবলার। তখন ছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ গোলদাতাও (৩৯)। টানা তিনটি বিশ্বকাপ খেলা কাহিলকে কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ, সেটাই ছিল তখন বড় চিন্তার বিষয়।

মামুনুলের বলা কথাটা এখনো কানে বাজে। বলেছিলেন, ‘কাহিলের দুটি হাত আছে, পা আছে। আমাদেরও তা-ই আছে। তবে আমার চেয়ে সে অনেক ভালো খেলোয়াড়। তাই আমাদের প্রত্যেককে সেরাটা দিতে হবে।’ সেদিন অস্ট্রেলিয়া চেয়েছিল স্কোরলাইনে বড় অঙ্ক বসাতে। আর তখন ভালো ফর্মেও ছিলেন চীনের সাংহাই সিনহুয়ায় খেলা কাহিল। ১০ ম্যাচে করেছিলেন ৭ গোল।

আজ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে গতকাল অনুশীলনে বাংলাদেশ দল
প্রথম আলো

ফিফার র‌্যাঙ্কিংয়ে সে সময় বাংলাদেশ ১৭০, অস্ট্রেলিয়া ৬১। খেলাটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণ বনাম বাংলাদেশের রক্ষণ। ম্যাচের প্রথম ২৯ মিনিটেই ৪ গোল। অস্ট্রেলিয়ার গোলবৃষ্টি শেষতক কোথায় থামে, তা নিয়ে ডাগআউটে চিন্তায় পড়ে চান বাংলাদেশে ডাচ কোচ লোভভিড ডি ক্রুইফ। কিন্তু চিন্তাটা দুশ্চিন্তায় রূপ নেয়নি আর। অস্ট্রেলিয়া গোল করেছে এরপর আর ১টি। ৫ গোলে ঠেকিয়ে রাখাকে চাইলে বাংলাদেশের কৃতিত্ব বলতেই পারেন।

তবে ছোট ছোট পাসে অস্ট্রেলিয়া যেভাবে খেলাটা শুরু করেছিল, বাংলাদেশ গোলকধাঁধায় পড়ে যায়। ৬০ মিনিটে দেখা গেল পঞ্চম গোল। অনুমিতভাবেই বাংলাদেশ গোলকিপার শহিদুল আলমের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায় সেদিন। অস্ট্রেলিয়ার বল পজেশন ছিল ৮১ শতাংশ। ৫০০ পাস খেলেছে তারা, যেখানে বাংলাদেশ খেলেছে ১১৩টি। বাংলাদেশ দল বক্সের আশপাশে ফ্রি কিক দিয়েছে একটি, যেটিতে আপনি বাহবা দিতে পারেন।

আরও পড়ুন

১৭ নভেম্বর, ২০১৫: অস্ট্রেলিয়া ৪-০ বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর সময় মামুনুলকে অভিনন্দন জানান অস্ট্রেলিয়ার কোচ অ্যাঞ্জে পোস্তেগলু। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানান লাল-সবুজের ইতালিয়ান কোচ ফাবিও লোপেজও। যদিও হতাশার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছিল প্রথমার্ধের ৪ গোল খেয়েই। শেষ ৪৭ মিনিট এশীয় চাম্পিয়নদের সামনে নিজেদের পোস্ট অক্ষত রাখার কৃতিত্ব সেদিন দাবি করতেই পারেন মামুনুলরা। ম্যাচটা ৪-০ গোলে শেষ করায় একটা করতালি পেয়েছিলেন ফুটবলাররা। তবে আটকানো যায়নি টিম কাহিলকে। হ্যাটট্রিক করেছিলেন।

বাংলাদেশের ফুটবলারদের এমনই শুটিং দুর্বলতা, একটিবারও পরীক্ষায় ফেলা যায়নি তখনকালীন অস্ট্রেলিয়া গোলকিপার ইংলিশ ক্লাব বোর্নমাউথে খেলা অ্যাডাম ফেদেরিচকে; বরং তাঁর প্রতিপক্ষে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। তারপরও হোক না ৪-০, তাতে লজ্জার অন্তত কিছু ছিল না।

গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ
এএফপি

১৬ নভেম্বর ২০২৩: অস্ট্রেলিয়া ৭-০ বাংলাদেশ

আবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা। এবার ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাই। পার্থ নয়, এবার ম্যাচ মেলবোর্নে। কিন্তু আগের দুটি ম্যাচ ছাপিয়ে এবার বাংলাদেশর পোস্টে ৭ গোল। হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার জ্যামি ম্যাকলারেন। চার মিনিটেই গোলের খাতা খোলে স্থানীয় দল। বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি কিক পায় অস্ট্রেলিয়া। ক্যারিগ গুডউইনের ফ্রি কিক থেকে হেডে ১-০ করেন। প্রায় সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার এই ফুটবলারের হেড ঠেকানোর মতো কেউই ছিলেন না বাংলাদেশ দলে। গোলরক্ষক মিতুল মারমা শুধু বলের দিকে চেয়ে রইলেন।

টানা আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছিল ‘সকারু’রা। ২০ মিনিটে হয় ২-০। লুইস মিলারের ক্রস পেয়ে যান কনর।  বক্সের ভেতর মেটকালফের ক্রসে প্লেসিংয়ে ব্রেন্ডন বোরেল্লো বল পাঠান জালে। ৩৭ মিনিটে ৩-০। মেটকালফের ক্রসে হেড থেকে এই গোল করেন মিচেল ডিউক। তিন মিনিট পরই ফিরতি বলে তিনিই ব্যবধান ৪-০ করেন। প্রথমার্ধেই বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকে। দ্বিতীয়ার্ধেও একই গল্প। এদিন অস্ট্রেলিয়া তিন খেলোয়াড় বদলি করেছে। বদলি হয়ে নামার তিন মিনিটের মধ্যেই বাংলাদেশের জালে বল ফেলেন ম্যাকলারেন।

গতকাল অনুশীলনে ফুরফুরে মেজাজেই ছিল বাংলাদেশ
প্রথম আলো

৮৪তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ম্যাকলারেন। একটু পর এইডেন ও’নিলকে বক্সে শাকিল ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ম্যাসিমোর দুর্বল স্পটকিক নিজের ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আটকে দেন মিতুল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে ১৬ গোল খেল বাংলাদেশ।

৬ জুন ২০২৪: আজ কী হবে

আজ কী হবে? উত্তরটা ভালো দিতে পারবেন জামাল ভূঁইয়ারা। কাল কিংস অ্যারোনায় সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন অধিনায়ক জামাল। কিন্তু একাদশে নিজ ক্লাব আবাহনীতেই যাঁর ঠাঁই নেই, জাতীয় দলের একাদশে তাঁর থাকা বাড়াবাড়িই। তারপরও শুভকামনা বাংলাদেশ। হার নিশ্চিত ধরে নিয়েই বলতে হয়, ঘরের মাঠে চেনা পরিবেশে অন্তত লড়াইটা হোক না!