মেজাজ হারিয়ে প্রতিপক্ষকে আঘাত ও শাস্তিতে ভিনির বছর শুরু
নতুন বছর ভালোভাবে শুরুর প্রত্যাশা থাকে সবারই। কত রকম পরিকল্পনাও থাকে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রেরও নিশ্চয়ই তেমন কিছু ছিল। মাঠে বছরের প্রথম ম্যাচটা ভালোভাবে শুরুর প্রত্যাশা ছিল। গোল পেলে তো কথাই নেই। অথচ পেলেন লাল কার্ড। সেটাও একদম সরাসরি।
ভিনি সেই কার্ড দেখার সময় আবার তেড়েফুঁড়েও গিয়েছেন রেফারির প্রতি। কার্ড যে কারণে দেখলেন, সে দৃশ্যটাও ভালো কিছু নয়, এমনকি ফুটবলীয় কোনো কারণও ছিল না। ভ্যালেন্সিয়া গোলকিপার স্টোল দিমিত্রিয়েভস্কির ঘাড়ে আঘাত করেছেন। লাল কার্ড দেখার প্রতিক্রিয়ায় রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার যেভাবে রেফারির দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন, আন্তোনিও রুডিগার তাঁকে না ঠেকালে কী ঘটত, কে জানে!
তবে একটি বিষয় নিশ্চিতভাবেই ঘটল। ভ্যালেন্সিয়ার মাঠ মেস্তায়ায় লা লিগার ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ে নতুন বছরটা ঠিকই ভালোভাবে শুরু করল রিয়াল। কিন্তু এই একই ম্যাচে রিয়ালেরই সেরা তারকা ভিনির বছরটা শুরু হলো মেজাজ হারানো, প্রতিপক্ষকে আঘাত করা, লাল কার্ড দেখা এবং পরে দুঃখপ্রকাশের মাধ্যমে। নাহ, ফিফা ‘বেস্ট’জয়ী তো দূরের কথা, পৃথিবীর সাধারণতম ফুটবলারও বোধ হয় এভাবে বছর শুরু করতে চাইবেন না। কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও এবারের ফিফা ‘বেষ্ট’জয়ীর ক্ষেত্রে ঘটল সেটাই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভিনির দুঃখপ্রকাশের ধরনটাও যেন কেমন, বাছাই করা খুব অল্প কিছু শব্দে কাজটা সেরেছেন জেতার জন্য দলকে ধন্যবাদ জানানোর মাধ্যমে, ‘দুঃখিত এবং দলকে ধন্যবাদ।’
তবে এই স্ট্যাটাস দেখে কৃতকর্মের কারণে ভিনির দুঃখ পাওয়ার গভীরতা আসলে কতটুকু—তা নিয়ে ভ্যালেন্সিয়ার সমর্থকেরা প্রশ্ন তুলতেই পারেন। মেস্তায়ার গ্যালারির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটাও যে আদায়-কাঁচকলায়!
২০২৩ সালের মে মাসে এই মাঠে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে মেজাজ হারিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস। পরে লাল কার্ডও দেখেন। গত বছর মার্চে সেই মেস্তায়াতেই এক অপ্রাপ্তবয়স্ক দর্শকের কাছ থেকে ‘বানর’ অপবাদ শুনতে হয়েছে তাঁকে।
মেস্তায়া নিয়ে ভিনির দুঃখ থাকতে পারে আরও। তাঁর রিয়াল ক্যারিয়ারে দেখা দুটো লাল কার্ডই এই মাঠে। রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি অবশ্য গতকাল রাতের লাল কার্ডটি মেনে নিতে পারছেন না, ‘আমরা মনে করি, এটা লাল কার্ড ছিল না, দুটি হলুদ কার্ড।’
আনচেলত্তি এরপর আপিল করার কথাও জানিয়েছেন, ‘আমরা আপিল করব। জানি না তারা (লা লিগা কর্তৃপক্ষ) এটা মানবে কি না। আমরা মনে করি না এটা লাল কার্ড দেখার মতো ছিল...প্রথমে দিমিত্রিয়েভস্কি তাকে টাচ করেছে, এরপর ভিনি ধাক্কা মেরেছে। আমার মনে হয় দুটো হলুদ কার্ড যথেষ্ট ছিল। জানি না (ভিনি) পরের ম্যাচটা খেলতে পারবে কি না। আমরা আশায় আছি। সে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।’
ভিনি কত ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন, তা নির্ভর করছে ম্যাচের রেফারি সিজার সোটো গ্রাদোর আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনের ওপর। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ জানিয়েছে, আরএফইএফ ডিসিপ্লিনারি কোডের ১০৩ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে ভিনি দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ চার ম্যাচও নিষিদ্ধ হতে পারেন।
ঘটনার সূত্রপাত কাল ম্যাচের ৭৬ মিনিটে। ভ্যালেন্সিয়ার বক্সে পড়ে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে থাকা অবস্থায়ই পেনাল্টির আবেদন করেছিলেন ভিনি। সেই সময়ে ভ্যালেন্সিয়ার মেসিডোনিয়ান গোলকিপার দিমিত্রিয়েভস্কি পেছন থেকে এসে ভিনির চুল টেনেছেন। ভিনি মেজাজ হারিয়ে এরপর দিমিত্রিয়েভস্কির ঘাড়ে ডান কানের পাশে দুই হাত দিয়ে আঘাত করেন। যদিও স্পেনের সাবেক আন্তর্জাতিক রেফারি এদুয়ার্দো ইতুরালদে ভিনির লাল কার্ড দেখার কারণ ব্যাখ্যায় এএসকে বলেছেন, ‘লাল কার্ড দেখানো হয়েছে কারণ, সে মুখে আঘাত করেছে। বুকে ধাক্কা দিলেও সেটা হলুদ কার্ড হতো, যদি না ঘুষি মারে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী মুখে কোনোভাবেই স্পর্শ করা যাবে না।’
রেফারি সোটো গ্রাদো ভিএআর মনিটরে ঘটনাটি দেখার পর ভিনিকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান। মেজাজ হারিয়ে তখন রেফারির প্রতি তেড়েফুঁড়ে যান ভিনি। রুডিগার ও দানি সেবায়াস তখন ভিনিকে ধরে সেখান থেকে সরিয়ে টানেল পর্যন্ত পৌঁছে দেন। ভিনির আচরণকে মারাত্মক হিসেবে দেখা না হলে শাস্তি কমে দুই থেকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা হতে পারে।