২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

যে ফুটবল অধিনায়কের জীবন চলে ‘পর্যটক বোট’ চালিয়ে

সেশেলস অধিনায়ক স্টেনিয়ো মারিফাইল ছবি: প্রথম আলো

সেশেলস ছোট্ট একটি দেশ। মাত্র ৪৫৫ বর্গকিলোমিটার আর টেনেটুনে এক লাখ জনসংখ্যার ওই ভূখণ্ডে পর্যটনই আয়ের মূল খাত। হাজার হাজার পর্যটক যান দেশটিতে। পর্যটন ব্যবসাটা সেখানে বেশ ভালো। আর সেই ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত সেশেলস জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক স্টেনিয়ো মারি। ‌তাঁর বাবাও একই কাজ করতেন। বাবাকে অনুসরণ করে ছেলেও সখ্য গড়েছেন সমুদ্রের সঙ্গে।

আরও পড়ুন

‘এখন আমি আমার বাবার জায়গাটা নিয়েছি। তাঁর কাজটা আমি করি এবং এতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমার একটি পর্যটন বোট আছে। সেটা চালাই আমি নিজেই। পর্যটকদের মাছ ধরা, অবকাশ, বারবিকিউ পার্টিতে নিয়ে যাই। বলতে পারেন প্রতিদিনই আমি এই কাজটা করি। কারণ, সেশেলসে পর্যটক আসে প্রতিদিনই’—সিলেটে বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলতে আসা সেশেলস ফুটবলের অন্যতম এই তারকা হোটেল লবিতে বসে বলে যান এক নিশ্বাসে।

হোটেল লবিতে স্টেনিয়ো মারি
ছবি: প্রথম আলো

তাঁর পর্যটক বোট লম্বায় ৫২ ফুট। পাশে ১৫ ফুট। ২১ জন পর্যটক তাতে বসতে পারেন। এই বোট থেকে প্রতিদিন কেমন টাকা আসে? মারি বলেন, ‘এটা ঠিক নেই। ফিশিংয়ে একরকম, বারবিকিউতে আরেক রকম। ধরুন, ফিশিংয়ে গেলে সারা দিনে এক হাজার ডলারের ট্রিপ। আবার বারবিকিউতে সারা দিনে সাত শ ডলার নিই। তবে প্রচুর খরচও আছে। আমার একটা স্টাফ আছে। আমি ফুটবল দলের সঙ্গে কোনো সফরে থাকলে সে এটা দেখে।’

মারির বয়স এখন ৩০ বছর। ১৭ বছর বয়সে স্কুল শেষ করে সমুদ্রের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও পাকা করেন। যে সম্পর্কের গোড়াপত্তন একেবারে জীবনের শুরু থেকে। তাঁর বাড়ি সমুদ্রের কোল ঘেঁষেই। হেঁটে যেতে ৮-১০ মিনিট লাগে। ফলে শৈশব ও কৈশোর সবই কেটেছে সমুদ্রের পাড়ে, সমুদ্রের পানিতে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

ভারত মহাসাগরের উত্তাল ঢেউ কখনো কখনো তাঁর মনে ভীতি ছড়িয়েছে। তবে এখন তিনি সাহসী, কোনো সমস্যা নাকি আর হয় না। নিজেই বলেন, ‘সেশেলসের দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়। ওদিকটায় গেলে কখনো কখনো বাজে আবহাওয়ায় পড়তে হয়। উত্তর দিকে অতটা নয়। সব মিলিয়ে পর্যটন বোট নিয়ে সমুদ্রে গেলে আমার তেমন কোনো সমস্যা হয় না।’

সেশেলস বর্তমান জাতীয় ফুটবল দলে এই পর্যটন বোট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত শুধু অধিনায়কই। এভাবে বোট চালিয়ে জীবন কেমন কাটছে? মারির মুখে কোনো হতাশা বা অতৃপ্তি নেই। উত্তরটা দেন এভাবে, ‌ ইয়েস, ইটস গুড। সব ঠিকঠাক চলছে। ভালোই আছি বলতে পারেন।’

এই ‘ভালোই আছি’ জীবনে প্রবেশ করার আগে সমুদ্রে বোট চালানোর লাইসেন্স নিতে হয়েছে তাঁকে। সেটিও নিয়েছেন ২০ বছর বয়সে। সমুদ্রে যেতে যা যা প্রয়োজন সবই করেছেন। তো বোটচালক থেকে কীভাবে ফুটবলে এলেন, কীভাবে জাতীয় দলের অধিনায়ক পর্যন্ত হয়ে গেছেন সেসব বিরাট গল্প।

সেশেলস দলে বোট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত শুধু স্টেনিয়ো মারিই
ছবি: সংগৃহীত

সেশেলস‘ছোট থেকেই ফুটবল ভালোবাসি, ফুটবল খেলি। ফুটবল অন্য রকম আনন্দ দেয়। বোট চালানো শুরুর পর সমুদ্র থেকে ফিরে অবসরে যে সময়টা পাই, তখন আমি ফুটবল অনুশীলন করি। তবে বেশি সময় পাই না খেলার।’ বলে যান মারি। ফুটবল খেলা না পর্যটক নিয়ে সমুদ্রে যাওয়া কোনটা বেশি ভালো লাগে উত্তর দেন এই প্রশ্নেরও, ‘দুটিই আমার ভালো লাগে। দুটি কাজই আমার পছন্দের। তবে ফুটবল আমার পেশা নয়, পেশা বোট চালানো। সেশেলস ছোট্ট একটি দেশ। আপনাকে কাজ করতে হবে। আমিও তাই করি।’

সেশেলসে ক্লাব পর্যায়ে ফুটবল খেলে কোনো টাকা মেলে না। ক্লাবের সঙ্গে কোনো চুক্তি নেই ফুটবলারদের। জামাল ভূঁইয়ারা যেমন বছরে প্রায় কোটি টাকা পান ক্লাব থেকে, মারিরা পান না কিছুই। তবে কোনো প্রতিযোগিতায় ভালো করলে কিছু বোনাস হয়তো পান বলে জানান সেশেলস অধিনায়ক। এও বলেন, কোভিড-১৯-এর কারণে এখন সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তবে সেশেলসের মানুষের মুখের হাসিটা নাকি হারিয়ে যায়নি।

আরও পড়ুন

ফুটবলে জড়িয়ে সেশেলস অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলের অধিনায়ক হন মারি। ২০১১ সালে মূল জাতীয় দলে ঢোকেন। সেই থেকে ১১ বছরে ৫৭টি ম্যাচ খেলেছেন জাতীয় দলের জার্সিতে। বছর তিনেক ধরে জাতীয় দলের অধিনায়ক। ২০২১ সালে কলম্বোয় চার জাতি ফুটবলে বাংলাদেশের সঙ্গে ১-১ ড্র ম্যাচেও অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ২০২০ সালে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে অবশ্য দলের সঙ্গে তাঁর আসা হয়নি। এবারই প্রথম এ দেশে এসে ভালোই লাগছে বলে জানালেন। মারি মূলত সেন্টারব্যাক। তবে এখন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে জামাল ভূঁইয়ার মতো ৬ নম্বর জার্সি নিয়ে খেলেন।

বাংলাদেশের তারকা জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে স্টেনিয়ো মারি
ছবি: প্রথম আলো

মারির বাবা ও দুই ভাই ফুটবল খেলতেন। ৫৬ বছর বয়সী বাবা এখন একটি ইতালিয়ান কোম্পানিতে কাজ করেন। তাঁর মা একটি হোটেলের স্টাফ। তিন ভাইয়ের বড়জন হোটেলে কাজ করেন, ছোট দুই ভাই এখনো ছাত্র। এখনো বিয়ে করেননি এই ফুটবল অধিনায়ক। সেসব নিয়ে আপাতত ভাবছেন না। ভাবছেন সিলেট থেকে দেশে ফিরে নিজের পর্যটন বোট নিয়ে আবার কখন বেরিয়ে পড়বেন সমুদ্রে।