ব্রাজিল-গিনি ম্যাচ মনে করিয়ে দিচ্ছে ৪১ বছর আগের ‘সারিয়া ট্র্যাজেডি’
সেদিন সারিয়া স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৪৪ হাজার দর্শক। বিশ্বব্যাপী টিভিতে কতজন দর্শক ম্যাচটি দেখেছেন, সে হিসাব নেই। তবে সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণায় অনেকেই বলেন, বিশ্বকাপের ইতিহাসে ওটাই নাকি সেরা ম্যাচ!
আবার কেউ কেউ এক কাঠি সরেসও। আগ বাড়িয়ে দাবি করে বসেন, এটাই ফুটবল ইতিহাসের সেরা ম্যাচ। আর গত ৪১ বছরে সে ম্যাচের একটি নামও পাকাপোক্ত ভিত গড়ে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়—‘ত্রাজেদিয়া দো সারিয়া’ বা বাংলায় ‘সারিয়া ট্র্যাজেডি’।
ব্রাজিলের পাঁড়ভক্তদের এতক্ষণে বুঝে ফেলার কথা কোন ম্যাচের কথা বলা হচ্ছে। ১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা দলগুলোকে ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল। ‘সি’ গ্রুপ থেকে নিজেদের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলকে ৩-২ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল ইতালি। বিদায়ঘণ্টা বেজেছিল ব্রাজিলের।
‘রোমান্টিক কোচ’খ্যাত টেলে সান্তানার অধীনে সে বিশ্বকাপে সুন্দর ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসেছিল ব্রাজিল। সক্রেটিস, জিকো, ফ্যালকাও এবং এদেররা চোখধাঁধানো ফুটবল খেলেও ইতালির কাছে সেই হারে হয়ে যান ট্র্যাজেডির নায়ক—বলা হয়, ’৮২–এর ব্রাজিল বিশ্বকাপ না জেতা সেরা দলগুলোর একটি। জিকো-সক্রেটিসদের বিপক্ষে দিনো জফ-পাওলো রসিদের সেই জয়কে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে দেখেন অনেকে। কারও কাছে আবার ব্রাজিলের সেই হার সুন্দর ফুটবল বিপক্ষে বাস্তববাদী ফুটবলের জয়—ঠিক এ কারণেই ব্রাজিলের সেই হারকে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সারিয়া ট্র্যাজেডি’।
তা, এত দিন পর সেই ম্যাচ টেনে আনার কী কারণ? বাংলাদেশ সময় আজ রাত দেড়টায় এসপানিওলের মাঠ কর্নেলা এল প্রাত স্টেডিয়ামে প্রীতি ম্যাচে গিনির মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। লা লিগা থেকে মাত্রই অবনমিত হওয়া এসপানিওল আগে ‘হোম ভেন্যু’ হিসেবে সারিয়া স্টেডিয়াম ব্যবহার করত। ১৯৯৭ সালে স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলা হয়। ২০০৯ সাল থেকে কর্নেলা এল প্রাত স্টেডিয়ামকে (গত সোমবার থেকে নাম পাল্টে রাখা হয়েছে স্টেজ ফ্রন্ট স্টেডিয়াম) হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করছে এসপানিওল।
বার্সেলোনা শহরেই অবস্থান দুটি স্টেডিয়ামের। আর এসপানিওলের কোনো মাঠে ৪১ বছর পর এটাই হবে ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ। অর্থাৎ ১৯৮২ বিশ্বকাপে ইতালির বিপক্ষে সেই হারের পর এসপানিওলের স্টেডিয়ামে এটাই প্রথম ম্যাচ ব্রাজিলের। ৪১ বছর পর তাই ‘সারিয়া ট্র্যাজেডি’র প্রসঙ্গ উঠে আসাই স্বাভাবিক।
ইতালির বিপক্ষে সে ম্যাচের আগে প্রত্যাশার বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল ব্রাজিলকে ঘিরে। প্রথম রাউন্ডে সোভিয়েত ইউনিয়ন, স্কটল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডকে হারানো ব্রাজিল দ্বিতীয় রাউন্ডে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৩-১ গোলে হারায়। সেই হারে বিদায় নিতে হয়েছিল ইতালির কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু করা মারিও কেম্পেস-ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে।
সেই বিশ্বকাপে মাঠে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন এসপানিওলের অফিশিয়াল হোসে মারিয়া কালজন। তিনি স্মৃতিচারণা করে কিছুদিন আগে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’কে বলেছেন, আর্জেন্টিনাকে হারানোর পর ব্রাজিলকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ চড়ে গিয়েছিল। কালজনের ভাষায়, ‘আর্জেন্টিনাকে হারানোর পর সারিয়াতে ড্রামের আওয়াজ ও নাচের তালে সবকিছু জমিয়ে তুলেছিলেন ব্রাজিলের সমর্থকেরা।’
কিন্তু পাওলো রসির হ্যাটট্রিকে শেষ বাঁশি বাজার পর চিরকালীন দুঃখ নিয়ে ফিরতে হয়েছিল ব্রাজিলের সমর্থকদের। কালজন স্মৃতিচারণা করে বলেছিলেন, ‘সক্রেটিস আমার কাছে রসি, জিকো এবং ম্যারাডোনার চেয়েও বেশি কিছু ছিলেন। আর ব্রাজিলিয়ানরাও ড্রামের আওয়াজে সারিয়াকে জমিয়ে তুলেছিল। তারা আকাশ ঘুড়িতে ছেয়ে ফেলেছিল।’
চার দশকের বেশি সময় পর সেই স্টেডিয়ামে আজ রাতে মাঠে নামবে ব্রাজিল। প্রতিপক্ষ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৭৯তম দল গিনি হওয়ায় পা হড়কানোর শঙ্কা খুব সামান্যই ব্রাজিলের জন্য। যদিও এখনো স্থায়ী কোচ খুঁজে পায়নি ব্রাজিল। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিল বাদ পড়ার পর কোচের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন তিতে। এরপর গত মার্চে খেলা একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচে মরক্কোর কাছে হেরেছে ব্রাজিল। অন্তর্বর্তীকালীন কোচ রামমন মেনেজেসের অধীনে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা এই ম্যাচে কী করে, সেটাই দেখার বিষয়।