মেসি–দি মারিয়ার শেষটা প্রাণভরে উপভোগ করে নিন

আর্জেন্টিনার জার্সিতে এবারের কোপা আমেরিকাই কি মেসি ও দি মারিয়ার শেষ টুর্নামেন্ট?রয়টার্স

লিওনেল মেসি কিংবা আনহেল দি মারিয়া, যাঁর কথাই বলুন না কেন, তাঁরা কি মহাজাগতিক নিয়মের বাইরে!

সবকিছুরই শেষ আছে, চক্র পূরণের ব্যাপার আছে—সাধারণ এ সত্যকে মেনে নেওয়া ছাড়া আর উপায় কী! মধ্য দুপুরে যে সূর্যটা তীব্র দাপট দেখায়, গোধূলিলগ্নে সেটাই আবার তেজ হারায়। সন্ধ্যার গহ্বরে অস্তে চলে যায়। ব্রিটিশ কবি জন কিটস যেমন লিখে গেছেন—তুমুল যৌবনও একদিন ফ্যাকাশে হয়ে যায়, রুগ্ণ হয়ে অবশেষে বিনাশ হয়...তীব্র দ্যুতি ছড়ানো সৌন্দর্যও চিরজীবন উজ্জ্বল থাকে না, কালান্তে হয়ে যায় বিবর্ণ।

তাই আসুন, প্রাণভরে উপভোগ করে নেওয়া যাক দুই মহাতারকার শেষটা! যার শুরুটা আগামীকাল ভোর থেকে। বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় কানাডার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই যে শুরু হচ্ছে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসি–দি মারিয়ার সম্ভাব্য শেষের শুরু।

নক্ষত্রেরাও একদিন ঝরে পড়ে। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাজাকেও বয়সান্তে রাজ্যভার ছেড়ে একদিন যেতে হয় বিশ্রামে। মেসি–দি মারিয়াকেও মেনে নিতে হবে এ নিয়তি। দুই দশক ধরে যে ফুটবল–বিশ্বকে শাসন করেছেন প্রতাপের সঙ্গে, তাঁরা এখন বয়সান্তে। তাঁদেরও নিতে হবে বিশ্রাম, রাজপাট ছেড়ে চলে যেতে হবে বিদায় বলে।

আরও পড়ুন
আর্জেন্টিনা দলের অনুশীলনে মেসি ও দি মারিয়া
এএফপি

আর্জেন্টিনার তথা বিশ্ব ফুটবলের দুই মহানায়কের বিদায়ের সেই বিউগল বাজতে শুরু করেছে ফুটবল–বিশ্বে। দুজনেরই বয়স হয়ে গেছে ৩৬ বছর, মেসি তো তিন দিন পরই পূর্ণ করবেন ৩৭। তাঁদের ক্যারিয়ারে এখন গোধূলিবেলা। ক্যারিয়ারের এই সায়াহ্নে কি মেসি–দি মারিয়ার মনের অবস্থা কনের বাবার মতো! কানে শুনতে পাচ্ছেন সানাইয়ের সুর। যে সুরে একই সঙ্গে মিশে আছে মেয়ের বিয়ের আনন্দের ঝলক আর কনে বিদায়ের হাহাকার।

বারবার তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগে—আরও একটা বিশ্বকাপে মেসিকে দেখা যাবে কি না অথবা দি মারিয়া আর্জেন্টিনার হয়ে প্যারিস অলিম্পিকে খেলবেন কি না। ভক্তদের আশা, আরও কিছুদিন বেশি যদি মাঠে দেখা যায় প্রিয় দুই তারকাকে!

দি মারিয়া তো ঘোষণাই করে দিয়েছেন যে এবারের কোপা আমেরিকাই আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাঁর শেষ। ২০২৬ সালে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলবেন কি না—এমন প্রশ্ন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর বহুবার শুনতে হয়েছে মেসিকে। এ প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি কিছু বলেননি ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। তবে বারবারই মনে করিয়ে দিয়েছেন—বয়স একটা ব্যাপার। আর্জেন্টিনার জার্সিতে আরও খেলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বয়স তো বাধা হয়ে দাঁড়াতেই পারে!

ওই যে লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, মধ্য দুপুরের দাপুটে সূর্যও একসময় তেজ হারিয়ে অস্তে চলে যায়। এটাই জগতের নিয়ম। তা এই নিয়মকে বরণ করে নিয়ে বিদায়বেলায় মেসি বা দি মারিয়ার মনের মধ্যে কি কোনো ব্যথা জেগে ওঠে? সাজানো রাজপাট, ভালোবাসার ফুটবলকে বিদায় জানানোর ব্যথা?

আরও পড়ুন
মেসি ও দি মারিয়া
রয়টার্স

কোপা আমেরিকা, লা ফিনালিসিমা, বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ—এক জীবনে সম্ভাব্য সব সেরা দলীয় পুরস্কার জেতা মেসি ও দি মারিয়ার ক্যারিয়ার এককথায় পরিপূর্ণ। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিয়ার–চক্র পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা মেসি আগেই বলেছেন। আর কোনো চাওয়া–পাওয়া ফুটবল দেবতার কাছে তাঁর নেই। দি মারিয়াও তা–ই। তাহলে বিদায় নিয়ে তাঁদের কোনো আক্ষেপ বা বেদনা থাকার কথা নয়।

মেসি–দি মারিয়ার তা না থাকুক, তাঁদের ভক্তদের তো থাকবেই। ভালোবাসার মানুষটিকে চোখের সামনে আর না দেখতে পাওয়ার কষ্ট কি এত সহজে চেপে রাখা যায়! তাই তো বারবার তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগে—আরও একটা বিশ্বকাপে মেসিকে দেখা যাবে কি না অথবা দি মারিয়া আর্জেন্টিনার হয়ে প্যারিস অলিম্পিকে খেলবেন কি না। ভক্তদের আশা, আরও কিছুদিন বেশি যদি মাঠে দেখা যায় প্রিয় দুই তারকাকে!

সেই আশা করার পাশাপাশি ভক্তরা হয়তো মনে করছেন প্রিয় তারকাদের মাঠে দেখানো নানা জাদুকরি মুহূর্ত। হয়তো তাদের মনের কোণে ভেসে উঠছে কাতার বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফন গালের সামনে দুই কানের কাছে দুই হাত নিয়ে মেসির উদ্‌যাপনের দৃশ্য। ভেসে উঠছে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে মেসির জোড়া গোল আর দি মারিয়ার গোলটি। ভেসে উঠছে আকাশের দিকে তাকিয়ে দুহাত শূন্যে তুলে মেসির গোল উদ্‌যাপন আর দি মারিয়ার দুই হাতে হৃদয় এঁকে গোল উদ্‌যাপনের দৃশ্য।

২০০৮ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে অলিম্পিক সোনার পদক জেতেন মেসি ও দি মারিয়া
আইওসি

মেসি আর দি মারিয়াকে নিয়ে ভক্তদের হৃদয়ের এ হাহাকার যেন অনুভব করতে পেরেছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। তাই তো আরেকটি টুর্নামেন্ট শুরুর লগ্নে তিনি মেসি আর দি মারিয়ার ভক্তদের একটা পরামর্শ দিয়েছেন—দুই মহাতারকার বিদায় নিয়ে ভেবে হতাশ না হয়ে শেষবারের মতো তাদের জাদুকরি ফুটবল উপভোগ করুন। প্রাণভরে উপভোগ করুণ মেসি–দি মারিয়ার ফুটবলের সৌন্দর্য।

স্কালোনি ঠিকই বলেছেন। মাঠের সবুজ ক্যানভাসে আঁকা মেসি–দি মারিয়ার জাদুকরি এই মুহূর্তগুলোই তো চিরন্তন। তাঁরা একদিন বিদায় নেবেন, মাঠের সবুজে আল্পনা আঁকতে তাঁদের আর দেখা যাবে না। কিন্তু দুই দশক ধরে তাঁদের এঁকে যাওয়া আল্পনাগুলো তো রয়ে যাবে চিরকাল। তাই আসুন, প্রাণভরে উপভোগ করে নেওয়া যাক দুই মহাতারকার শেষটা! যার শুরুটা আগামীকাল ভোর থেকে। বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় কানাডার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই যে শুরু হচ্ছে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসি–দি মারিয়ার সম্ভাব্য শেষের শুরু।