চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলে কী পাবে আর কী হারাবে ইউনাইটেড
একবার ২–০, আরেকবার ৩–১ এগিয়ে থাকার পরও গালাতাসারাইয়ের মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফিরতে পারেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ পর্বের ম্যাচটিতে ৩–৩ ড্র করে ইউনাইটেড এখন নকআউটের আগেই বিদায় নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
এ মুহূর্তে এরিক টেন হাগের দলের শেষ ষোলোয় যাওয়া সম্ভব দুটি শর্ত পূরণ হলে। প্রথমত, গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, গালাতাসারাই–কোপেনহেগেন ম্যাচটি ড্র হতে হবে। এ দুটির যেকোনো একটি যদি অপূর্ণ থাকে, চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হবে ইউনাইটেডকে। এর প্রভাব শুধু দলটির খেলাতে পড়বে না, ভীষণভাবে আর্থিক খাতেও পড়বে।
কী পরিমাণ অর্থ হাতছাড়া হবে ইউনাইটেডের
গ্রুপ পর্ব উতরাতে পারলে প্রাইজমানি হিসেবে ৯৬ লাখ ইউরো বা ১ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার (১১৫ কোটি টাকার বেশি) পাবে ইউনাইটেড। চ্যাম্পিয়নস লিগে একটি দল যত সামনে এগোতে থাকে, তত অর্থের পরিমাণ বাড়ে। শেষ ষোলো থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে আরও ১ কোটি ৬ লাখ ইউরো এবং সেমিফাইনালে উঠলে ১ কোটি ২৫ লাখ ইউরো যোগ হবে। এ ছাড়া ফাইনালে জিতলে যোগ হয় বাড়তি ৪৫ লাখ ডলার। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ আরও বাড়বে। চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী দল ইউরোপা লিগের চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে উয়েফা সুপার কাপে খেলার কারণে পায় ৩৫ লাখ ইউরো, চ্যাম্পিয়ন হলে আরও ১০ লাখ ইউরো।
এই প্রাইজমানির বাইরে আছে সম্প্রচার থেকে আয়। একটি দল সম্প্রচার থেকে কত আয় করে বা করবে, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা কঠিন। তবে ক্লাবগুলোকে ভাগ করে দেওয়ার জন্য উয়েফা ৩০ কোটি ইউরোর মতো বরাদ্দ রাখে। এর অর্ধেক দেওয়া হয় ক্লাবগুলোর আগের ঘরোয়া চ্যাম্পিয়নশিপগুলোর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে, বাকি অর্ধেক চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা ক্লাবগুলোর ম্যাচসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে।
এ ক্ষেত্রে ম্যানচেস্টার সিটির উদাহরণ দেওয়া যায়। ২০২২–২৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী ক্লাবটি সর্বশেষ অর্থবছরে (জুলাই ’২২– জুন ’২৩) সম্প্রচার খাতে ৫ কোটি ৪০ লাখসহ মোট ২৯ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ইউরো আয় করেছে।
এ মৌসুমে ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে কত পেয়েছে?
কোনো ক্লাব গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলে উয়েফা থেকে ১ কোটি ৫৬ লাখ ইউরো পায়। এর বাইরে দলগুলো প্রতিটি জয় ও ড্রয়ের জন্য পায় বাড়তি অর্থ। গ্রুপ পর্বের প্রতিটি জয়ের প্রাইজমানি ২৮ লাখ ইউরো, আর ড্রয়ের জন্য ৯ লাখ ৩০ হাজার।
এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ৫টি ম্যাচ খেলে ইউনাইটেড জিতেছে একটি, ড্রও করেছে একটি। হেরেছে বাকি তিনটি।
অর্থাৎ এখন পর্যন্ত ম্যাচের ফলের কারণে ৩৭ লাখ ৩০ ইউরো আয় করেছে দলটি। এ ছাড়া উয়েফার কাছ থেকে কো–ইফিসিয়েন্ট স্ট্যাটাসের সুবাদেও আয় আছে ইউনাইটেডের। সর্বশেষ ১০ বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি আসরের ৩২টি দলকে র্যাঙ্কিং করা হয়। এখানে সর্বনিম্ন র্যাঙ্কিংয়ের দল পায় ১১ লাখ ইউরোর একটু বেশি। বর্তমানে কো–ইফিসিয়েন্ট র্যাঙ্কিংয়ে ম্যানইউর অবস্থান ১১ নম্বরে। তাদের প্রাপ্য ১ কোটি ২৫ লাখ ইউরো।
গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলে এফএফপিতে কী প্রভাব পড়বে?
ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে (এফএফপি) ইউনাইটেডের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলে পরের আসরের জন্য ভালোভাবে দল গোছানোর তাড়না থাকবে। আর বড় অঙ্কের কেনাবেচা করতে গেলে এফএফপির হিসাব চলে আসে। ২০২৪–২৫ মৌসুম থেকে উয়েফা নতুন নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে বলে এ বছরের আয়–ব্যয়ের চিত্র উয়েফা মনিটর করছে না। তবে বাড়তি আয়ের সুযোগ হারানো মানে প্রিমিয়ার লিগের পিঅ্যান্ডএস (প্রফিট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি) বজায় রাখার চ্যালেঞ্জে পড়া।
পিঅ্যান্ডএস নীতিমালা অনুসারে, একটি ক্লাব তিন বছরের মধ্যে ১০ কোটি ৫ লাখ ইউরোর মতো লস দিতে পারবে। তবে একই সময়ে মালিকপক্ষের ৯ কোটি ইউরো সরবরাহ করতে হবে। মালিকপক্ষ অর্থ না দিলে এটি ১ কোটি ৫ লাখে সীমিত থাকবে। ২০২১–২২ মৌসুমে ইউনাইটেডের কর–পূর্ব ক্ষতি ছিল ১৫ কোটি ইউরো। আর সর্বশেষ ২০২২–২৩ মৌসুমে কর–পূর্ব ক্ষতি ছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ ইউরো। চলতি মৌসুমের পিঅ্যান্ডএস টেস্টে দেখা হবে ২০২১–২২, ২০২২–২৩ এবং ২০২৩–২৪ মৌসুম। অর্থ খরচ করা যাবে যুব উন্নয়ন, নারী ফুটবল ও কমিউনিটি আউটরিচ প্রজেক্টে।
জানুয়ারির দলবদলে যে প্রভাব পড়তে পারে
গ্রীষ্মকালীন দলবদলে মেসন মাউন্ট, রাসমাস হয়লুন্দ, আন্দ্রে ওনানা ও অ্যালতায় বায়িনদিরের পেছনে ২০ কোটি ইউরোর মতো খরচ করেছে ইউনাইটেড। জানুয়ারিতে এতটা খরচ হওয়ার কথা নয়। ইউনাইটেড সমর্থকেরা এখন ইনিওসের বিনিয়োগ চুক্তি যথাসময়ে হয়ে যাওয়ার আশায় আছেন, যাতে জানুয়ারির দলবদলে বাজেটের পরিমাণ বাড়ে। যদিও পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানিটি এখনো এমন ইঙ্গিত দেয়নি যে ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তি হলে তারা প্রচুর খরচ করবে।
ইউরোপা লিগে নেমে গেলে কেমন আয় করবে?
চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘এ’ গ্রুপে তৃতীয় হতে পারলে ইউরোপা লিগে নেমে যাবে ইউনাইটেড। এ জন্য প্রাথমিকভাবে পাবে ৫ লাখ ইউরো। উয়েফা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্লাব টুর্নামেন্টটিও চ্যাম্পিয়নস লিগের মতোই আয় ভাগাভাগি করে। এখানেও আছে প্রাইজমানি, সম্প্রচার আয় আর কো–ইফিসিয়েন্ট মানি।
ইউরোপায় শেষ ষোলোয় উঠতে পারলে পাওয়া যাবে ১২ লাখ ইউরো, যা কোয়ার্টার ফাইনালে ১৮ লাখ এবং সেমিফাইনালে ২৮ লাখ। আর ফাইনালে উঠে যেতে পারলে পাবে ৪৬ লাখ ইউরো, চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে বাড়তি ৪০ লাখ।