অর্থবিত্ত, মদ, সুন্দরী মডেল—এসব ছেড়ে যে কারণে ইউনাইটেডের সাবেক ফুটবলার ধর্মযাজক
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বয়সভিত্তিক দল দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন ফিলিপ মুলরিন। প্রিমিয়ার লিগে অবশ্য ইউনাইটেডের হয়ে একটির বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি তাঁর। এরপর ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটান নরউইচ সিটিতে। ৬ বছরে প্রিমিয়ার লিগে নরউইচের হয়ে খেলেন ১৬১ ম্যাচ, যেখানে তাঁর বার্ষিক বেতন ছিল ৫ লাখ পাউন্ড।
জাতীয় দল নর্দান আয়ারল্যান্ডের হয়েও মুলরিন খেলেছেন ২৭ ম্যাচ। খেলার পাশাপাশি নামজাদা মডেলদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেও ছিলেন আলোচনায়। তবে ২০০৫ সালে নরউইচ ছেড়ে কার্ডিফ সিটিতে যাওয়ার পরই মান হারাতে শুরু করেন এই মিডফিল্ডার। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে ফুটবলকে বিদায় জানান মুলরিন।
ফুটবল ছেড়ে খেলোয়াড়েরা সাধারণত কোচ, ধারাভাষ্যকার কিংবা বিশ্লেষকের দায়িত্ব বেছে নিলেও সেসব চেনা পথে হাঁটেননি মুলরিন। চাকচিক্য ও বিত্তের জীবন ছেড়ে হয়ে যান পুরোদস্তুর ধর্মপ্রচারক। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ক্যাথলিক গির্জায় যাজক হিসেবেও দায়িত্ব পান সাবেক এই ফুটবলার।
মূলত ৩১ বছর বয়স থেকে ফুটবলের প্রতি প্রেম হারাতে শুরু করেন মুলরিন। একই সঙ্গে তিনি ঝুঁকে পড়েন ধর্ম ও অধ্যাত্মবাদের দিকে। সে সময় নিজের ক্যারিয়ার যেদিকে যাচ্ছিল, তা–ও তাঁর মনমতো হচ্ছিল না। এ কারণে শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনধারা বদলে ফেলেন এই ফুটবলার।
নিজের জীবনের এমন পরিবর্তন নিয়ে এর আগে নরউইচের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুলরিন বলেছিলেন, ‘কোন মুহূর্তে এটা ঘটেছিল, সেটা আলাদা করে বলা কঠিন। আমি বলব, এটা আমার নরউইচে থাকার সময় শেষ বছরে শুরু হয়েছিল। যদিও স্পষ্টভাবে নয় এবং আমি এটা নিয়ে তেমন ভাবছিলামও না। তবে নিজের জীবনধারা নিয়ে আমি অসন্তুষ্টিতে ভুগছিলাম।’
ফুটবলার হয়ে শীর্ষ পর্যায়ে খেলার পর বড় কোনো আক্ষেপ থাকার কথা নয়। তবু কেন এমন পরিবর্তন? মুলরিন এ বিষয়ে বলেছেন, ‘ফুটবলার হিসেবে আমাদের জীবনটা দারুণ এবং আমি অনেক সৌভাগ্যবানও। কিন্তু সবকিছুর পরও আমার জীবনে একধরনের শূন্যতা ছিল। আমার বয়সী একজন তরুণ যা চায়, তার সবকিছু থাকার পরও কেন সুখী ছিলাম না—এটা ভেবে আমি খুবই হতাশ ছিলাম। এটাই আমাকে চালিত করে বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার দিকে, যে বিশ্বাসটা আরও অল্প বয়সে আমার মধ্যে ছিল। আমি তখন এক বছরের জন্য বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই এবং সে বছরই সবকিছু বদলে যেতে শুরু করে।’
নিজের পরবর্তী অবস্থাটা মুলরিন তুলে ধরেন এভাবে, ‘আমি আবার নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করতে শুরু করি। এর মধ্য দিয়ে আমি পূর্ণতার একটা স্বাদ পেতে শুরু করি। ফুটবলে চূড়ায় উত্থান এবং তলানিতে পতন—দুটিই থাকে। কিন্তু এটা আমাকে একধরনের স্থিরতার অনুভূতি দিয়েছিল।’
এভাবেই মূলত মুলরিনের বদলে যাওয়া। একপর্যায়ে পুরোপুরিই ধর্মে মনোনিবেশ করেন সাবেক এই ‘রেড ডেভিল’ তারকা। নিজের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ৪৬ বছর বয়সী সাবেক এই ফুটবলারের কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি বলেছেন, ‘এই জীবনধারার প্রতি আমি তীব্র আকাঙ্ক্ষা বোধ করি এবং কয়েক মাস এটা নিয়েই থাকি। এরপরই আমি এটা নিয়ে আরও অন্বেষেণের সাহস পাই এবং পুরোপুরিভাবে এ পথে আসার আমি সিদ্ধান্ত নিই।’
এভাবে বদলে যাওয়া মানুষটি অবশ্য ফুটবল ক্যারিয়ারে একেবারে বির্তকমুক্ত ছিলেন না। ২০০৫ সালে একবার মদ খেয়ে কারফিউ ভাঙায় তাঁকে নর্দান আয়ারল্যান্ডের স্কোয়াড থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া মডেল নিকোলা চাপম্যানের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়েও আলোচনায় এসেছিলেন মুলরিন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে বেলফাস্ট হাই কোর্ট সাবেক এই মিডফিল্ডারকে দেউলিয়াও ঘোষণা করে। তবে সব ভুলে এখন একাগ্রচিত্তে ধর্মযাজকের কাজটাই করে যাচ্ছেন মুলরিন।