বায়ার্নে জনপ্রিয় হতে কেইনকে জার্মান কিংবদন্তির পরামর্শ
টটেনহাম হটস্পারের সঙ্গে ১৯ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে সম্প্রতি বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দিয়েছেন হ্যারি কেইন। জার্মান সুপার কাপে বায়ার্নের হয়ে অভিষেক ম্যাচে ভালো করতে না পারলেও জার্মান বুন্দেসলিগার প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়েছেন।
এরপর চতুর্থবার বাবা হওয়ার সুখবর দিয়েছেন। গত রাতেও অগ্সবুর্গের বিপক্ষে বায়ার্নের ৩–১ ব্যবধানের জয়ে করেছেন জোড়া গোল। সব মিলিয়ে নতুন ঠিকানায় কেইনের সময়টা দারুণ কাটছে।
তবে জার্মানিতে জনপ্রিয় হতে চাইলে কিংবা বায়ার্ন কিংবদন্তি হতে চাইলে কেইনকে শুধু গোল করলেই চলবে না, সঙ্গে জার্মান সংস্কৃতির সঙ্গেও নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে বলে মনে করেন ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান।
জার্মানির হয়ে ১৯৯০ বিশ্বকাপ জেতা ক্লিন্সমান বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনিও এক মৌসুম টটেনহামে কাটিয়েছেন। ১৯৯৪–৯৫ মৌসুমে ২৯ গোল করে জার্মানির বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন।
তার চেয়েও বড় ব্যাপার ক্লিন্সমান এক বছর ইংল্যান্ডে থেকেই দেশটিকে আপন করে নিয়েছিলেন। অনর্গল যাতে বলতে পারেন, সেভাবেই ইংরেজি শিখেছেন। নিয়মিত ইংরেজি দৈনিক পড়েছেন, লন্ডনের রাস্তায় ভক্সওয়াগনের বিটল গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ওমর রিচার্ডসের পর ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া প্রথম ফুটবলার হিসেবে বায়ার্নে যাওয়া কেইনকেও এবার জার্মানদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ক্লিন্সমান। এ জন্য ইংলিশ ফরোয়ার্ডকে চারটি কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন—জার্মান ভাষা শেখা, লেডারহোসেন (স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী চামড়ার হাফপ্যান্ট) পরা, প্লিসনার (একধরনের বিয়ার) পান করা এবং সাদা সসেজ খাওয়া।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে ‘ডেইলি মিরর’কে ৫৯ বছর বয়সী ক্লিন্সমান বলেছেন, ‘হ্যারিকে (কেইনকে) এক সাক্ষাৎকারে বলতে শুনেছি, সবাই যে ভাষা বোঝে, তা হলো গোল করা। সে ঠিকই বলেছে। গোল করতে পারে বলেই বায়ার্ন তাকে নিয়েছে। আমার মনে হয়, বায়ার্নে সে দ্রুত মানিয়ে নেবে, কারণ আসল ভাষা সে ধরে ফেলেছে।’
বায়ার্ন সমর্থকদের ভালোবাসা পেতে তবু কেইনকে একটু-আধটু জার্মান ভাষা শেখার পরামর্শ দিয়েছেন ক্লিন্সমান, ‘মিউনিখের মানুষ ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। কোচ টমাস টুখেল তো পারেই এমনকি ওর সতীর্থরাও। তবু ওর জার্মান ভাষা শেখার চেষ্টা করা উচিত। অল্পস্বল্প পারলেই চলবে।’
বিদেশিদের কেউ জার্মান ভাষা জানলে জার্মানির মানুষ তাঁকে কীভাবে আপন করে নেয়, সে কথাও বলেছেন ক্লিন্সমান, ‘সে যদি জার্মানদের জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেয়, যদি আমাদের কয়েকটি শব্দ শেখে; বোঝাতে পারব না তাহলে মানুষ ওর জন্য কতটা উতলা হয়ে পড়বে। সে একবার “হ্যালো” অথবা “ধন্যবাদ” বা “তোমাকে দেখে ভালো লাগল”জাতীয় শব্দ আমাদের ভাষায় বলে দেখুক, এটা জার্মানদের মনে বিশাল প্রভাব ফেলবে। সবাই ওকে সম্মান জানাবে।’
চলাফেরাতেও কেইনকে আর দশজনের মতোই হতে বলেছেন জার্মান কিংবদন্তি, ‘ভক্তরা তাদের প্রিয় খেলোয়াড়কে বিনয়ী হতে পছন্দ করে। হ্যারি কেইন যদি ভক্তদের দেখাতে পারে সে অন্যদের মতোই সাধারণ মানুষ, তাহলে সে কোন গাড়ি চালায় বা কোন বাড়িতে থাকে, এটা তাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়।’
বায়ার্ন কিংবদন্তি হতে চাইলে কেইনকে বাভারিয়ান সংস্কৃতি ধারণ করার পরামর্শও দিয়েছেন ক্লিন্সমান, ‘ওর শুরুটা ভালোই হয়েছে। বায়ার্নে পরিচয়পর্বের সময় বলেছে, “আমি এখানে গোল করতে এসেছি আর আমার পরিবার জার্মানিতে বসবাস করতে কেমন লাগে, তা অনুভব করতে এখানে এসেছে।” তবে এটুকু যথেষ্ট নয়। ওকে বাভারিয়ান সংস্কৃতিতে ডুব দিয়ে অক্টোবরফেস্টে লেডারহোসেন (সেখানকার ঐতিহ্যবাহী চামড়ার হাফপ্যান্ট) পরতে হবে। এরপর কয়েক গ্লাস বিয়ার পান করতে হবে ও সুস্বাদু সাদা সসেজ খেতে হবে। হ্যারি একজন ইংরেজ, ওর বিয়ার পান করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’