আর্জেন্টিনা–ক্রোয়েশিয়া
কোন কৌশলে খেলবেন মেসিরা, মদরিচদেরইবা খেলার ধরন কী হবে
সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি ও ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচের কৌশলের দিকেই চোখ থাকবে সবার।
১২০ মিনিটের স্নায়ুক্ষয়ী লড়াই, তারপর রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকার। বিশ্বকাপের শেষ চার পর্যন্ত আসতে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া দুই দলকেই চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কিন্তু সেই পরীক্ষাই শেষ নয়। লুসাইলের আইকনিক স্টেডিয়ামে আজ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল, বাঁচামরার লড়াইয়ে এবার মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া।
বলা হয়ে থাকে, একটা ফুটবল দল ততটাই ভালো, যতটা ভালো এর কোচ। সেমিফাইনালেও আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি ও ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচের কৌশলের দিকেই চোখ থাকবে সবার। কী ছকে খেলান তাঁরা দলকে, একে অন্যকে হারানোর জন্য কী কৌশল নেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
আর্জেন্টিনাকে ম্যাচটা খেলতে হবে লেফটব্যাক মার্কোস আকুনিয়া ও রাইটব্যাক গঞ্জালো মন্তিয়েলকে ছাড়া। দুজনেই পড়েছেন হলুদ কার্ডের খড়্গে। এর মধ্যে আকুনিয়ার না থাকাটা আর্জেন্টিনার জন্য বেশি দুশ্চিন্তার। এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার ৫ ম্যাচেই তিনি খেলেছেন, শুধু ডিফেন্ডার হিসেবে নয়, খেলতে পারেন লেফট উইঙ্গার হিসেবেও। এ ছাড়া চোটের কারণে শঙ্কা আছে পাপু গোমেজকে নিয়ে। আনহেল দি মারিয়া কতটা ফিট, সেটাও দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
আপাতত তাই মনে হচ্ছে, রক্ষণভাগের ডান পাশে নিকোলাস তালিয়াফিকো ফিরবেন, বাঁয়ে থাকবেন নাহুয়েল মলিনাই। কোচ স্কালোনি ৩-৫-২ ছকে গেলে সে ক্ষেত্রে তিন সেন্টারব্যাক হিসেবে থাকবেন ক্রিস্টিয়ানো রোমেরো, নিকোলাস ওতামেন্দি ও লিসান্দ্রো মার্তিনেজ।
মাঝমাঠে এনজো ফার্নান্দেস, রদ্রিগো দি পল ও আলেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে রেখে সামনে লিওনেল মেসি ও হুলিয়ান আলভারেজ। ৪-৩-৩ ছকে গেলে সেন্টারব্যাক লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বেঞ্চে বসে ম্যাচ শুরু করতে হতে পারে। তখন ম্যাক অ্যালিস্টারকে একটু পেছনে রেখে দি মারিয়া খেলবেন মেসি-আলভারেজের সঙ্গে।
ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচ মনে হয় না ব্রাজিলের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা একাদশে খুব বেশি পরিবর্তন আনবেন। চোটের সমস্যাও নেই তাঁর দলে। এখন পর্যন্ত ৫টি ম্যাচেই ক্রোয়েশিয়া ৪-৩-৩ ছকে খেলেছে। এবং ৯ জন খেলোয়াড় এই ৫ ম্যাচেই ছিলেন একাদশে।
আজও একই ছকে খেলতে দেখা যেতে পারে ক্রোয়েশিয়াকে। শুধু দেখার অপেক্ষা ব্রাজিলের বিপক্ষে বদলি নেমে গোল করা ব্রুনো পেতকোভিচ একাদশে সুযোগ পান কি না। সে ক্ষেত্রে ইভান পেরিসিচ বা আন্দ্রেই ক্রামারিচকে বেঞ্চে চলে যেতে হতে পারে।
স্কালোনির দল যে ছকেই খেলুক, নিশ্ছিদ্র রক্ষণের বিপক্ষে এই বিশ্বকাপে ভুগতে দেখা গেছে তাদের। এর মধ্যেও তারা চেষ্টা করেছে ডান পাশ দিয়ে জায়গা বের করতে। এ ক্ষেত্রে দি পলের সঙ্গে মেসির যোগাযোগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠের খেলা মূলত নির্ভর করে মার্সেলো ব্রজোভিচ-লুকা মদরিচ-মাতেও কোভাচিচের ওপর।
এই বিশ্বকাপের সব ম্যাচ মিলিয়ে ক্রোয়েশিয়া দলে সবচেয়ে বেশিবার বল স্পর্শ করেছেন তাঁরা। বল পায়ে না থাকলে ক্রোয়েশিয়া সাধারণত রক্ষণ আঁটসাঁট করে ৪-৫-১ ছকে চলে যায়। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের বেশির ভাগ সময় তারা এভাবেই খেলেছে। আর্জেন্টিনার লক্ষ্য থাকবে এই রক্ষণব্যূহ ভাঙা, যেটা কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের জন্য শুরুর দিকে খুব কঠিন ছিল। পরে দুই উইং দিয়ে আক্রমণের পর কিছুটা সফলতা পেয়েছে।
সমস্যা হচ্ছে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে দুই উইংব্যাককে দিয়ে আক্রমণে তৈরি করার ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনাকে খুব বিপজ্জনক মনে হয়নি। এ কারণেই হয়তো ৩-৫-২ ছকে না গিয়ে ৪-৩-৩ ছকে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন স্কালোনি, যা তাঁকে একজন বাড়তি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বা ফরোয়ার্ডকে খেলানোর স্বাধীনতা দেবে।
সে ক্ষেত্রে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে মাঝমাঠের লড়াইটাতেও পাল্লা দিতে পারবে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচেই দেখা গেছে, মাঝমাঠ থেকে সরাসরি বল না পেলে ক্রোয়েশিয়ার ফরোয়ার্ডরা প্রায় বেকার হয়ে যাবেন। দুই উইং দিয়ে আক্রমণের ক্ষেত্রে ক্রোয়াটরা বেশ দুর্বল।
শেষ পর্যন্ত এই ম্যাচে কোনো দল খুব বড় ব্যবধানে জয়ী হবে বলে মনে হচ্ছে না। অতিরিক্ত সময়ে যদি ম্যাচ না গড়ায় হারজিত নির্ধারিত হতে পারে ন্যূনতম ব্যবধানে। মেসি কিংবা মদরিচের জাদুকরি কোনো মুহূর্তই হয়তো শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেবে।