রোনালদোর কাছে গোল ও শিরোপা যখন ‘কেচাপ’

চ্যাম্পিয়নস লিগ ড্রয়ের মঞ্চে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও জিয়ানলুইজি বুফনএএফপি

‘কেচাপ’—শব্দটি বুঝি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বেশ প্রিয়?

ফুটবল প্রসঙ্গে শব্দটি মাঝেমধ্যেই পর্তুগিজ কিংবদন্তির মুখ ফুটে বেরিয়ে পড়ে। যেমন ধরুন, ২০১০ সালের কথা। পর্তুগালের জার্সিতে গোল পাচ্ছিলেন না রোনালদো। প্রায় ১৬ মাস পার হয়ে গেছে। আশপাশে এ নিয়ে কথা হচ্ছিল।

রোনালদো তখন সংবাদকর্মীদের বলেছিলেন, ‘ফুটবলের এক কিংবদন্তি আমাকে বলেছিলেন, গোল হলো কেচাপের (চাটনিবিশেষ) মতো। অনেক সময় অনেক চেষ্টা করেও (বোতল থেকে) বের করা যায় না। কিন্তু যখন বেরিয়ে আসে একেবারে অনেকটুকু বের হয় একই সময়ে।’

১৩ বছর পর দিওগো জোতার কথা শুনুন। গত বছর এপ্রিলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিডস ইউনাইটেডের বিপক্ষে লিভারপুলের ৬–১ গোলের জয়ে জোড়া গোল করেন এই পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। এর মধ্য দিয়ে প্রিমিয়ার লিগে ১২ মাসের গোলখরা কাটানো জোতা স্কাই স্পোর্টসে স্মরণ করেছিলেন রোনালদোর একটি মন্তব্য। পর্তুগাল জাতীয় দলে তাঁর সতীর্থ নাকি একবার বলেছিলেন, গোল হচ্ছে কেচাপের বোতল খোলার মতো, ‘প্রথম ফোঁটা বেরিয়ে আসার পর একসঙ্গে সবটুকুই বেরিয়ে আসে।’

এবার ফেরা যাক মোনাকোয়। ঘটনা গতকাল রাতের।

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিনের কাছ থেকে ট্রফিটি বুঝে নেন রোনালদো
এএফপি

এতক্ষণে সবাই জানেন, সেখানে ২০২৪–২৫ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্র অনুষ্ঠানে রোনালদোকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। কারণটাও নিশ্চয়ই জানা। ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব প্রতিযোগিতায় রোনালদোর রেকর্ডের যেন শেষ নেই! সর্বোচ্চ গোল, এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল ও সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের মতো অনেক রের্কডই আছে এই প্রতিযোগিতায় পাঁচবার শিরোপাজয়ী রোনালদোর। চ্যাম্পিয়নস লিগে বিশেষ এই অবদানের জন্য তাঁর হাতে বিশেষ ট্রফি তুলে দেন উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন।

গত বছর রোনালদো সৌদি ক্লাব আল নাসরে যোগ দেওয়ার পর ইউরোপের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার দ্বার বন্ধ হয়েছে। উয়েফা সভাপতি সেফেরিন এ নিয়ে খোঁচাও মেরেছেন রোনালদোকে, ‘ক্রিস্টিয়ানোর সঙ্গে আমার সমস্যা আছে। সে বিশ্বের সেরা প্রতিযোগিতা (উয়েফা) চ্যাম্পিয়নস লিগে আর খেলে না।’ রোনালদো এর উত্তরে উয়েফা সভাপতিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘ভুলে যেয়ো না, আমি এশিয়ান (চ্যাম্পিয়নস) লিগ খেলি।’

রোনালদো কথা প্রসঙ্গে ইউরোপের চ্যাম্পিয়নস লিগে ফেরার প্রচ্ছন্ন এক ইঙ্গিতও দেন। ৩৯ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড বলেন, ‘সবাই জানে চ্যাম্পিয়নস লিগই ফুটবলের শীর্ষবিন্দু। আমি শুধু খেলার সুযোগ পাইনি, রেকর্ডই আমার হয়ে কথা বলে। কিন্তু আমি সেটা বোঝাচ্ছি না। এই প্রতিযোগিতায় খেলার আনন্দটা আমি বোঝাতে চাচ্ছি...এটা আমাদের প্রেরণা। আর ফুটবল...কেউ জানে না সামনে কী ঘটবে। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী ঘটে।’

ড্র অনুষ্ঠানে রোনালদো ও বুফন
এএফপি

থরে–বিথরে সাফল্য পাওয়া ক্যারিয়ারে পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন রোনালদো। এর মধ্যে কোন ট্রফিটি বিশেষ—জানতে চাওয়া হয়েছিল রোনালদোর কাছে। আর এ প্রসঙ্গেই রোনালদো ফিরিয়ে আনেন সেই ‘কেচাপ’ প্রসঙ্গ, ‘প্রথমটি সব সময়ই বিশেষ কিছু, যখন ম্যানচেস্টারে ছিলাম। অবশ্যই রিয়াল মাদ্রিদের সময়টি আলাদাভাবে বিশেষ, সেখানে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। মনে পড়ে তখন লিসবনে ২০১৮ সালে (আসলে ২০১৪) নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় মনে হয়েছে এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের চাপও ছিল। কিন্তু আমার মতে, গোল ও শিরোপা হলো কেচাপের মতো। একবার বের হয়ে আসা শুরু হলে শুধু আসেই।’

রোনালদোর ক্ষেত্রে কথাটি সত্য। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর ২০০৯ সালে রিয়ালে যোগ দেন রোনালদো। এরপর রিয়ালে ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ।

এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ নতুন সংস্করণের ড্র অনুষ্ঠানে মঞ্চে রোনালদোর সঙ্গে ইতালি ও জুভেন্টাস কিংবদন্তি জিয়ানলুইজি বুফনও উঠেছিলেন। কিংবদন্তি এই গোলকিপারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ২০২৪ উয়েফা প্রেসিডেন্টস পুরস্কার। বুফনের সঙ্গে একচোট মজাও করেছেন রোনালদো। ড্র অনুষ্ঠানে পট থেকে বুফনের হাতে জুভেন্টাসের নাম উঠে আসার পর উপস্থাপক পেদ্রো পিন্টো তাঁর বিপক্ষে রোনালদোর গোলসংখ্যা মনে মনে করিয়ে দেওয়ার সময় ইতালিয়ান কিংবদন্তি নিজেই বলে ফেলেন, ‘সব ম্যাচেই (গোল করেছে)!’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আরেক উপস্থাপক রেশমিন চৌধুরি এ সময় বুফনের বিপক্ষে রোনালদোর একটি বিখ্যাত গোল মনে করিয়ে দেন। সেটি ২০১৮ সালে তুরিনে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে জুভেন্টাসের বিপক্ষে রোনালদোর সেই বাইসাইকেল কিকে করা গোল। মঞ্চে দাঁড়ানো পর্তুগিজ কিংবদন্তি এ সময় ইতালিয়ান ভাষায় বুফনকে বলেন, ‘স্কুসা গিগি, স্কুসা (ক্ষমা করো গিগি, ক্ষমা)।’ বুফন এরপর বলেন, ‘মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের সর্বশেষ ম্যাচের পর সে (রোনালদো) আমার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছে।’